মুহাম্মদের মত নিজ হাতে অপরের ঈশ্বরজ্ঞানে আরাধ্য-পূজিত মূর্তি ধ্বংস না করলেও গীতাপাঠ করলে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয় যে, কৃষ্ণ নিজেও মূর্তিপূজাবিরোধী ছিলেন। শুধু তাই নয়, দেবদেবী বা অবতার তত্ত্বের প্রতিও গীতায় বর্ণিত কৃষ্ণের বিরূপ মনোভাব ছিল।
গীতার সপ্তম অধ্যায়ের ১৬-১৮ শ্লোকে দেখা যায়–কৃষ্ণ বলছে, আর্ত্ত (পীড়িত–কাতর), আত্মজ্ঞানাভিলাষী, অর্থাভিলাষী ও জ্ঞানী–এই চার প্রকার লোকে কৃষ্ণের আরাধনা করলেও কৃষ্ণের কাছে “অতিমাত্র ভক্ত ও যোগযুক্ত জ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ”। এই ভক্ত/জ্ঞানী কারা?–যারা শুধুমাত্র কৃষ্ণকেই পরমাত্মা মনে করে এবং কৃষ্ণকেই “একমাত্র উত্তম গতি অবধারণ করিয়া আশ্রয় করিয়া থাকেন”।
অন্য তিন প্রকার লোকদের ব্যাপারে কৃষ্ণ বলেন, “অন্য উপাসকেরা স্বীয় প্রকৃতির বশীভূত ও নানা প্রকার কামনা দ্বারা হতজ্ঞান হইয়া প্রসিদ্ধ (গতানুগতিক–রুচিকর) নিয়ম অবলম্বনপূর্বক ভূত, প্রেত প্রভৃতি ক্ষুদ্র দেবতাদিগের আরাধনা করিয়া থাকে।” (৭অ-১৯)
আবার এ-ও বলেন যে, যে যেভাবে, অর্থাৎ অন্য দেবতার কল্পনায় তাকে (কৃষ্ণকে) ভজনা করে, সে (কৃষ্ণ) সেভাবেই তার (ভক্তর) মনোবাসনা পূর্ণ করেন। “যে যে ভক্ত শ্রদ্ধাসহকারে যে কোন দেবতার অর্চনা করিতে অভিলাষ করেন, আমিই তাঁহাদিগকে সেই অচলা শ্রদ্ধা প্রদান করিয়া থাকি, তাঁহারা সেই শ্রদ্ধাসহকারে সেই সকল দেবতার আরাধনা করিতে প্রবৃত্ত হন; তৎপরে আমা হইতেই হিতকর অভিলষিতসকল প্রাপ্ত হইয়া থাকেন।” (৭অ-২১-২২) কারণ, (কৃষ্ণের মতে) অন্য দেবতারাও আসলে কৃষ্ণেরই অংশ। কিন্তু এই ফল শুধু ইহকালেই কাজে লাগে; অন্য দেবতাদের আরাধনা করে ফললাভ করলে এ ফল ইহকালেই ক্ষয় হয়ে যায়–“সেই সমস্ত অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিদিগের দেবতালব্ধ (দেবতা হইতে প্রাপ্ত) ফল-সমুদয় ক্ষয় হইয়া যায়।” (৭অ-২৩)
অর্থাৎ কৃষ্ণ এখানে স্পষ্ট বলতেছেন যে, তাকে বাদ দিয়ে অন্য দেবতার আরাধনা করলে কাজ হবে বটে, তবে সেটা ক্ষণস্থায়ী; শুধুমাত্র তার আরাধনা করলেই মোক্ষলাভ সম্ভব, অর্থাৎ পরমাত্মার সন্ধান পাবে, পরমাত্মার সাথে বিলীন হয়ে যাবে। এখানে পরোক্ষভাবে কৃষ্ণ চাইতেছে না যে, কেউ তাকে বাদ দিয়ে অন্য দেবতাদের আরাধনা করুক।
বিষয়টা আরো স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ হয় একই অধ্যায়ের পরের শ্লোকে। সেখানে কৃষ্ণ ঘোষণা দেন, “আমি অব্যক্ত; কিন্তু নির্বোধ মনুষ্যেরা আমার অব্যয় ও অতি উৎকৃষ্ট স্বরূপ অবগত না হইয়া আমাকে মনুষ্য, মীন ও কূর্মাদিভাবাপন্ন মনে করে।”(৭ম-২৪)–কালীপ্রসন্ন সিংহের অনুবাদ। এই শ্লোকের “অব্যক্তং” শব্দটি দিয়ে আত্মার ধরা-ছোঁয়া-দেখার বাইরে “নিরাকার” দিকটা নির্দেশ করে। প্রসন্নকুমার শাস্ত্রী এই শ্লোকটির আরো বিস্তৃত ব্যাখ্যাসমেত অনুবাদ করেছেন। সেখানে তিনি ‘রজ্জুতে সর্পভ্রম’ টার্মটি ব্যবহার করেছেন–“…যাঁহারা আমার (আত্মার) সেই অব্যক্ত, অব্যয়, অনুত্তম (যাহা হইতে আর উত্তম নাই) স্বরূপ (পরমাত্মাবস্থা) না দেখিয়া না বুঝিয়া (সেই পরমাত্মাতেই) রজ্জু সর্পবৎ ভ্রান্তি বিজৃম্ভিত মিথ্যাভূত সে সকল দেহ আছে, (ইন্দ্র, বরুণ, কৃষ্ণ, রাম, বিষ্ণু, ব্রহ্মা, শিব, কালী, দুর্গা, ইত্যাদি দেহ) তাহাকেই পরমাত্মা বা চৈতন্য বলিয়া জানে, তাহারা নিতান্ত নির্ব্বোধ।…যাহারা কামনা বশত হইয়া জীব হইতে বিভিন্নভাবে আমাকে উপাসনা করে, তাহারা অজ্ঞ, অতএব তদনুযায়ী ফলই প্রাপ্ত হইয়া থাকে, পরমাত্মাকে লাভ করিতে পারে না…”
উপরোক্ত শ্লোকে গীতার কৃষ্ণ সকল প্রকার মূর্তি-প্রতিমা-দেবদেবী-অবতার তত্ত্বকে যারা বিশ্বাস করে, এসবকে যারা উপাসনা করে, তাদেরকে “নির্বোধ-অজ্ঞ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখানেই শেষ নয়; গীতার একেবারে শেষ অধ্যায়ে গিয়ে মূর্তিপূজারীদের উপর আরেকবার কামান দাগিয়েছেন–“…একমাত্র প্রতিমাদিতে ঈশ্বর পূর্ণরূপে বিদ্যমান আছেন, এইরূপ অবাস্তবিক (কাল্পনিক–অপ্রকৃত) অযৌক্তিক তুচ্ছ জ্ঞান তামসিক বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকে।” (১৮অ-২২)
গীতায় কৃষ্ণের এহেন স্পষ্ট ভাষণ থাকা সত্ত্বেও গীতা-লাভাররা যখন আবার সেই দেব-দেবতার প্রতিমা বানিয়ে, অবতারতত্ত্বে বিশ্বাস করে পূজা-অর্চনার মত অবাস্তবিক, কাল্পনিক, অপ্রকৃত, অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার মত নির্বুদ্ধিতা-অজ্ঞতার পরিচয় দেয় তখন আর কী বলার থাকতে পারে!
sriutpalshuvro
অনুবাদ ঠিক নাই৷
#মহাভারত #বনপর্ব- ৩৫/৬৫
“অর্জুন শরণাগতরক্ষক ভগবান্ মহাদেবের শরাণাপন্ন হইয়া, স্থন্ডিলের উপরে তাঁহার মৃণ্ময় প্রতিমা নির্মাণ করিয়া, মাল্য দ্বারা পূজা করিলেন ৷”
#গীতা #অধ্যায়-৭ #শ্লোক-২১
যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি ৷
তস্য তস্যাচলং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্ ৷৷
7.21 Yam yam, whichever; tanum, form of a deity; yah, any covetous person- among these people with desires; who, being endowed sraddhaya, with faith; and being a bhaktah, devotee; icchati, wants; arcitum, to worship; tam eva, that very; acalam, firm, steady; sraddham, faith; tasya, of his, of that particular covetous person-that very faith with which he desires to worship whatever form of a deity, in which (worship) he was earlier engaged under the impulsion of his own nature-; [Ast. takes the portion ‘svabhavatah yo yam devata-tanum sraddhaya arcitum icchati’ with the next verse.-Tr.] vidadhami, I strengthen.
— “যে যে ভক্ত শ্রদ্ধাসহকারে যে যে দেবতা বিগ্রহকে পূজা করতে ইচ্ছা করেন আমি তাঁদের সেই শ্রদ্ধাকে সেই সেই দেববিগ্রহের প্রতি অচলা করে থাকি ৷”
7.24 The unintelligent, unaware of My supreme state which is immutable and unsurpassable, think of Me as the unmanifest that has become manifest.
১৮/২০-২২
প্রাণীগণ ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু আত্মা(=পরমাত্মা) এক। এই জ্ঞান সাত্ত্বিক জ্ঞান।২০
যে মনে করে ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীতে ভিন্ন ভিন্ন আত্মা বিরাজ করেন, তার জ্ঞান রাজসিক জ্ঞান।২১
এই জ্ঞান প্রকৃত তত্ত্ব না বুঝে এই সমস্ত বুদ্ধি কোন একটি বিষয়ে আসক্ত থাকে সেই যুক্তিবিরোধী অযথার্থ এবং তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।২২
দাঁড়িপাল্লা ধমাধম
কার অনুবাদে ভুল?