ঢাকা ইউনিভার্সিটির ক্লাসরুমে বোরখা-পরা যে মেয়েটি শিক্ষকের সামনে মুখমণ্ডল থেকে পর্দা সরাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তার দোষ দেয়া যায় না। সে তার ধর্ম মেনেই এ কাজটি করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, পোশাকের ব্যাপারে ইসলামে কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য নেই। যেমন অনেকেই তর্কের সময় বলে থাকেন যে, ইসলামে কেউ কারো উপর জোর করে পোশাক চাপিয়ে দেয় না, কারো ইচ্ছে হলে বিকিনি পরবে, কারো ইচ্ছে হলে বোরখা পরবে, এটা যার যার ইচ্ছার ব্যাপার। বাস্তবে তা নয়।
শারিয়া আইন এফ ৫.৬-এ স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, “একজন মহিলাকে তার মাথা ঢেকে রাখতে হবে (খিমার দ্বারা)। এছাড়াও শরীরের উপরে ভারী আচ্ছাদন পরতে হবে যা মহিলার সম্পূর্ণ দেহকে ঢেকে রাখবে।”
শারিয়া আইন এম ২.৩ বলে, “কোন মহিলার পক্ষে মুখমণ্ডল অনাবৃত রেখে গৃহের বাইরে যাওয়া বে আইনি।”
এছাড়া শারিয়া আইন ডবলু ৫২.১-তে বলা আছে, “মহিলাদের সুগন্ধি পরে গৃহের বাইরে যাওয়া অপরাধ, এমনকি তাতে স্বামীর অনুমতি থাকলেও।”
আমরা জানলাম, ইসলাম মেয়েদেরকে বাইরে যাওয়া অনুমতি দিয়েছে। তবে শরীর এবং মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ ঢেকে রেখে বাইরে যেতে হবে।
এখন আমরা দেখব, শরিয়ত মতে মেয়েরা কখন কিভাবে বাইরে যেতে পারে।
শারিয়া আইন এম ১০.৩-এর মতে মেয়েরা “কোন ক্রমেই তার মাহরাম (যে পুরুষের সাথে তার বিবাহ সম্ভব নয়, যেমন পিতা, ভ্রাতা, ছেলে…ইত্যাদি) ছাড়া গৃহের বাইরে পা রাখতে পারবে না।” অর্থাৎ ঘরের বাইরে বের হলে পিতা, ভাই, ছেলে, স্বামী–এদের সাথে বের হতে হবে।
এই আইনের ধারায় দুইটি ক্ষেত্রে মেয়েদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে–১) হজ্জের ক্ষেত্রে, ২) ধর্মীয় শিক্ষা লাভ ও পবিত্র আইন শিক্ষা। “এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার ভ্রমণ স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্বামীও অনুমতি দিতে পারবে না।” (হানাফি আইনে একটু শিথিলতা আছে। সেখানে মেয়েরা ঘর থেকে ৭৭ কিলোমিটারের মধ্যে একা একা যেতে পারবে।)
শারিয়া আইন এম ১০.৪-তে মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে আরো নিষেধাজ্ঞা আছে। এখানে বলা আছে, ” স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে পা না দেবার আদেশ দেওয়া।”
এবার শরিয়া আইন সম্পর্কে একটু জানি–শরিয়া আইন কী?
শরিয়া আইন হলো আল্লাহর আইন বা শরিয়তি বিধান যা কোরান-হাদিস-সীরাত ইত্যাদি ইসলামিক কেতাব ঘেটে মুসলমান স্কলাররা অনেক তর্ক-বিতর্ক শেষে সর্বসম্মতভাবে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে এই আইন তৈরী করেছেন। অনেক ব্যাপারেই কোরানে স্ববিরোধী আয়াত দেখা যায়, আবার এমন অনেক হাদিস আছে যা একবার হ্যাঁ বলে, আবার আরেক হাদিসে না বলে। কিন্তু দেশ চালাতে গেলে একটা নির্দিষ্ট আইন থাকতে হয়। আর সেজন্যই আলাদা করে কোরান-হাদিসের নির্যাস থেকে এই শরিয়া আইনের ধারাগুলো বানানো হয়েছে। শরিয়া আইনের সমস্ত ধারা যদি আপনি মেনে চলতে পারেন, তবেই আপনি সহিহ মুসলমান। আর এর বাইরে গেলেই, অর্থাৎ যদি কোনো আইন অমান্য করেন, তাহলে সেই মোতাবেক বাধ্যতামূলক শাস্তি।
শরিয়া আইন মোতাবেক কোনো মেয়ে ঘরের বাইরে গেলে, ধরলাম অনুমতি আছে, তারপরেও তাকে ৩টি শর্ত মানতে হবে–১) সর্বাঙ্গ মোটা-ঢিলাঢালা কালো কাপড়ে ঢাকতে হবে, ২) সাথে পিতা, ছেলে, ভাই, স্বামী–এদের কাউকে থাকতে হবে, ৩) ধর্মীয় শিক্ষার জন্য বের হতে হবে। ক্লাসের শিক্ষকের সামনে মুখমণ্ডলের পর্দা সরাতে অস্বীকার করেছিল, সে মেয়েটি শরিয়া আইনের একটি শর্ত পালন করেছিল। কিন্তু সে ঘরের বাইরে একা একা বের হয়ে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে অন্য কিছু শিখতে গিয়ে আগেই শরিয়া আইন ভঙ্গ করেছে। এই অপরাধে আইসিস হলে তাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করত, আর সৌদি আরবে হলে দোদরা মেরে আধামরা করে দিত (মাইর সহ্য করতে না পারলে হয়তো মরেও যেত)।
মুখমণ্ডল না খোলার জন্য অনেকেই মেয়েটির পক্ষে দাঁড়িয়ে বোরখার অবমাননার জন্য শিক্ষককে কোতল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটি যে আগেই আরো দুইটি অপরাধ করে বসে আছে, সেদিকে কারো নজর নেই। আর এটাই হলো মুসলমান তথা আস্তিকদের হিপোক্রেসি–ভণ্ডামি!
Leave a Reply