লিখেছেনঃ নিলয় নীল
পুরুষতান্ত্রিক নিষ্পেষণ এবং সামাজিক ও ধর্মীয় বেড়াজালে বাঙ্গালী হিন্দু কালচারে শাঁখা সিঁদুর বিবাহিত রমণীর জন্য অবশ্য পরিধেয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। যদি কোন রমণী শখ করে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য শাঁখা সিঁদুর পড়তো তাহলে কারোরই আপত্তি থাকার কথা ছিলনা। কিন্তু শাঁখা সিঁদুরকে ধরা হয় একটি অলঙ্ঘনীয় মাধ্যম যা ধারন করার মাধ্যমে সনাতন কামিনীগন তাহার কামুক দেবদের মঙ্গল কামনায় রপ্ত থাকবেন। শাঁখা সিঁদুর পরার মাধ্যমে স্বামীর মঙ্গল কতোখানি হয় সেটা নিয়ে নাহয় যুক্তিতর্কে নাই বা গেলাম।
একজন মানুষ তার সঙ্গীর মঙ্গল কামনা করতেই পারে এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু প্রশ্ন হলো সেটা একতরফা কেন? স্বামীও কি অনুরূপ কোন ভিজিবাল বস্তুকে অঙ্গে ধারন করে নিজেকে বিবাহিত ঘোষণা করে নিজের স্ত্রীর মঙ্গল কামনা করতে পারেন না? কেন বোন শুধু একতরফা ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে রাখী বন্ধন বা ভাইফোঁটা দিবে? ভাইয়েরও কি বোনের অনুরূপ মঙ্গল কামনা করা উচিত নয়? আসলে শাঁখা সিঁদুরের মাধ্যমে মঙ্গল কামনা ব্যাপার না, ব্যাপার অন্যখানে।
আমরা মাঝের মধ্যেই জমিতে সাইনবোর্ড দেখতে পাই যে এই জমির মালিক এই ব্যাক্তি। তদ্রূপ সম্পত্তিসম স্ত্রীগণের কাছে সাইনবোর্ড হলো এই শাঁখা সিঁদুর। এই শাঁখা সিঁদুর দেখে আপনি বুঝবেন যে এই জমি মালিকহীন নয়, এই জমির একজন জমিদার আছে। বাৎস্যায়নের মতে, এর মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা থাকে। আপনি যদি একজন শাঁখা সিঁদুর পড়া মহিলাকে দেখেন তাহলে আপনার ব্রেইনে সংকেত দিয়ে দিবে যে এই জমির একজন মালিক আছে, তাই আপনি মালিকহীন জমির দিকে যত বেশী আকৃষ্ট হবেন জমিদারের জমির প্রতি সাধারণত ততো বেশী আকৃষ্ট হবেন না। তারপরও আপনার যদি অবৈধ জমি দখল এবং ভুমিদস্যুতার অভ্যাস থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। আপনি জোর জবরদস্তী করে সাইনবোর্ড তুলে ফেলে নিজে আবার নিজের নামে সাইনবোর্ড লাগাবেন। যদিও আমাদের সমাজ এবং ঈশ্বর এই পাপ না করতে আমাদের উৎসাহিত করেন।
খুব কষ্ট পাই আজো হিন্দু শিক্ষিত নারী ও পুরুষরা বোরকা নিয়ে শত সমালোচনা করলেও শাঁখা সিঁদুর নিয়ে টুঁ শব্দটি করেনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনি কেন শাঁখা সিঁদুর পড়েন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন এর মাধ্যমে সংসারে শান্তি বজায় থাকে, তার পরিবার এবং স্বামী চায় যে সে এটি পড়ুক। বাংলাদেশ ও ভারতের হাই সোসাইটির অনেক শিক্ষিত হিন্দু রমণীকে ব্যাক্তিগত ভাবে দেখেছি শাঁখা সিঁদুর পড়তে। যদিও শাঁখা সিঁদুরের এখন বিবর্তন ঘটেছে আধুনিক হিন্দুদের মধ্যে। আগে যেখানে সিঁথি ভরা সিঁদুর দিতো এখন সেখানে হয়তো বড় একটা লালটীপ ব্যাবহার করে। আগে যেখানে অনেক পুরু এবং মোটা শাঁখা ব্যাবহার করতো সেখানে চিকুন চুরির মতো শাঁখা ব্যাবহার করে। তারপরও শাঁখা সিঁদুর ব্যাবহার করতেই হবে। নিজে শাঁখা সিঁদুর পড়ে বা নিজের বউকে শাঁখা সিঁদুর পড়িয়ে বোরকা নিয়ে হাসাহাসি করে ওরা। শরৎচন্দ্র একবার হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বলেছিলেন, “অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।” এইরুপ তেলাপোকারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজীবন টিকিয়া থাকুক এই কামনাই করি।
Leave a Reply