লিখেছেন অর্ণব খান
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বমতে প্রকৃত শূন্যস্থান (এবসলিউট জিরো) বলে কিছু থাকতে পারে না। কারণ প্রকৃত শূন্যের একটা ক্ষুদ্র অংশের অবস্থান ও শক্তি যুগপৎ জেনে ফেলা যায় (যা-ই মাপি না কেন, প্রকৃত শূন্যস্থানে সবকিছুর পরিমাপ শূন্যই হবে) যা কিনা এই সূত্রের লঙ্ঘন। কিছুদিন আগে পরীক্ষাগারে আসলেই প্রমাণিত হয়েছে যে, শূন্যস্থান আসলে শান্ত সমাহিত নয়, বরং শূন্যস্থানে প্রতিনিয়ত ভার্চুয়াল পার্টিকেল আর অ্যান্টি পার্টিকেল অনবরত সৃষ্টি হচ্ছে আর ধ্বংস হচ্ছে, যার কারণে শূন্য স্থানের একটি ক্ষুদ্র অংশের অবস্থান ও শক্তি যুগপৎ জেনে ফেলা সম্ভব নয়, আর এই ঘটনাকে বলা হয় কোয়ান্টাম বা ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন।
তাহলে আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হল কী করে? সেটা জানার জন্য বিগ ব্যাং-এর আগের ঘটনায় চলে যেতে হবে। বিগ ব্যাং-এর আগেও একটি ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন হয়েছিল। তবে সেই ফ্লাকচুয়েশন ট্রু ভেকুয়ামে হয়নি, বরং একটি ফলস ভেকুয়ামে হয়েছিল – এটাই পার্থক্য।
ফলস ভ্যাকুয়াম কী? পদার্থবিজ্ঞানের চিরন্তন নিয়ম অনুযায়ী – সবকিছুই একটি লোয়ার এনার্জি স্টেটের প্রতি ধাবমান। ট্রু ভ্যাকুয়াম এর এনার্জি ডেনসটি থাকে শূন্য। তবে এনার্জি ডেনসিটি শূন্য হলেও ট্রু ভ্যাকুয়ামে হিগস ফিল্ডের একটা মান থাকে। যখন এই হিগস ফিল্ডের মান শূন্যের দিকে ধাবিত হয়, তখন ফলশ্রুতিতে ট্রু ভ্যাকুয়ামের এনার্জি ডেনসিটি শূন্য থেকে বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থাকেই ফলস ভেকুয়াম বলে। বিপুল পরিমান ধনাত্মক এনার্জি ডেনসিটি বৃদ্ধির কাউন্টার হিসেবে বিপুল পরিমান ঋনাত্মক মহাকর্ষ শক্তির উদ্ভব হয় ফলস ভ্যাকুয়ামে।
ফলস ভ্যাকুয়াম-এর স্থায়িত্ব বেশি নয়, তাই তা আবার ট্রু ভ্যাকুয়ামে ফিরে আসা শুরু করে। তখন বিপুল পরিমাণ এনার্জি ডেনসিটি থেকে বিপুল পরিমাণ পদার্থের সৃষ্টি হয়, যা কিনা আবার অতি নিকটবর্তী মহাকর্ষ শক্তির প্রচণ্ড ধাক্কায় চারদিকে ছিটকে যেতে শুরু করে। পদার্থের এই ছিটকে যাবার ঘটনাটাই হচ্ছে বিগব্যাং, যার জন্য দায়ী হচ্ছে মহাকর্ষ! মহাকর্ষ শক্তির একটি বৈশিষ্ট্য জেনে রাখা দরকার যে, এটা অনেকটা স্প্রিং-এর মতো। অর্থাৎ এ শক্তি দূরের বস্তুকে আকর্ষণ করে কাছে টানে, কিন্তু খুবই কাছের বস্তুকে বিকর্ষন করে দূরে ঠেলে দেয়, ঠিক যেমন স্প্রিংকে টানলে তা সংকুচিত হতে চায়, কিন্তু জোরে চেপে ধরে রাখলে তা আবার ছিটকে যেতে চায়।
এই তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন, মহাবিশ্বে ধনাত্মক শক্তির পরিমাণ (পদার্থ) আর ঋণাত্মক শক্তির পরিমান (মহাকর্ষ) সমান! অর্থাৎ মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমান শূন্য! এর মানে শূন্য থেকেই মহাবিশ্বের উদ্ভব হয়েছে।
স্টিফেন হকিং তাই বলেছিলেন যে, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পেছনে বাহির থেকে সৃষ্টিকর্তার হাতের কোন প্রয়োজন নেই, বরং তা বাহুল্য।
Leave a Reply