সারাদিন খুব ধকল গেছে। সামনেই হাটবার। অনেকগুলা পাইকারি অর্ডার ডেলিভারি দেয়ার ছিল। এইদিন নিজে না থাকলে কর্মচারীরা অনেক ভুল করে ফেলে হিসাব-নিকাশে। তাই নিজেকে থাকতে হয়। আর এই এই জন্যই আজ বলতে গেলে সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম না, নেটের সামনেও বসা হয়নি।
বোরখাওয়ালির আজ হাফ ছুটি। দুপুরের পর পর বাড়িতেই এসেই তড়িঘড়ি করে রান্না করে দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। খাবার পেয়ে আর তাড়াহুড়া করি নাই বাড়িতে ফেরার। ফিরেছি এই বিকেল বেলা। নেট অন করে দেখে ইনবক্স ভরে গেছে পাল্লার শিবির কানেকশন আর ১৬ বছরের কিশোরীর কাহিনী নিয়ে নানান প্রশ্নে…
ক্লাসে পড়াশুনায় ভালো ছিলাম না। পাল্লা কিছুদিন মাদ্রাসায় গেছিল, সেটা অনেক আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া এবং আরো কিছু সমস্যার জন্য মাদ্রাসা ছেড়ে দেই। ততদিনে অনেক ইয়ার লস-টস হয়ে গেছে। ততদিনে বোরখাওয়ালীরা যখন আমাদের এলাকায় এসে বসতি গড়ছে। ভর্তি হয়েছে স্কুলে। আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটারে’র মত করেই তার আবির্ভাব আমাদের মত অখ্যাত একটা অঞ্চলে। সেই তখন প্রথম দেখেই ভালোলাগা…
আর প্রেমে পড়লে যা হয়, সামনে গেলে মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কথা আটকে যাওয়া… তাই তার ক্লাস সেভেন পর্যন্ত সরাসরি কোন কথা হয় নাই। যা হয়েছে শুধু চোখে চোখে নয়তো পরোক্ষ ভাবে। ক্লাসে সেভেনে ঘটল একটা দুর্ঘটনা যা আমার জন্য ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট। তার বাপ দাড়ি-টুপি, মা বোরখাধারি। তার বোরখাধারি মায়ের সাথেই তার প্রথম স্কুলে আগমন। সে ছিল হিজাব পরা। আমরা সবাই হা হয়ে দেখছিলাম। এই থেকেই কিভাবে কিভাবে যেন তার নামটাই বোরখাওয়ালী হয়ে যায়, সেটা অন্য গল্প।
তো দাড়ি-টুপি আর বোরখাধারি পরিবারের বিধায় নিয়মিত একটা মসজিদে যেত আরবী শিখতে। আমাদেরই জানাশোনা বড় একজন সেখানে আরবী শিখাত। যখন সে ক্লাস সেভেনে, সেই বছরই ঐ হুজুরে তারে মসজিদের ভিতর কুপ্রস্তাব দিয়ে বসে। ব্যস, সেই থেকে তার আরবী শিক্ষা বন্ধ। আর নিজ থেকে আমাকে এসে সব খুলে বলল। সেই থেকে টুপি-দাড়ির প্রতি তার ঘৃণা। ও জানত আমি ঐ গ্রুপের সাথে জড়িত। তাই আমাকেও আর ওদের সাথে মিশতে দিতে চাইত না। আমাকে ঐ গ্রুপ থেকে বের করে আনার একটা মিশন নিয়েই সে নেমেছিল এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল বলেই আপনার বর্তমান পাল্লাকে দেখতে পাচ্ছেন। নয়তো রগকাটা মামুন নামেই সারাদেশ চিনত।
জ্বি, পাল্লা শিবির করত! (খেয়াল করে দেখবেন সামুতে পাল্লার নিকটা ছিল শুধু দাঁড়িপাল্লা। যা প্রথম দিকে অনেকেই ধরতে পেরেছিলেন। ধমাধমটা তার বিবর্তণ হিসাবে পরে যোগ হয়েছে, যা বোরখাওয়ালীর অবদান!) দেশের উত্তরাঞ্চলের সব খুঁটিনাটি পাল্লার জানা আছে। নিজের পড়াশুনা না হলেও ভার্সিটি পর্যন্ত গেছি! গেছি কেন, আশা করি খুলে বলতে হবে না। কিন্তু ঐ যে বোরখাওয়ালী, সে পাল্লার থেকেও পলিটিক্যালি অনেক বেশি কারেক্ট! নিজে বুঝেছে, আমাকেও শেষ পর্যন্ত বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। আর উদাহরণ দিয়েছে তার আর আমার নিজের জীবন থেকেই। ঘন্টার পর ঘন্টা! তারপর একসময় বোধোদয় ঘটে। ততদিনে সে এসএসসি হয়ে যায়। সে তখন ষোড়শী।
এখান থেকে ১৬ বছরের মেয়ের কাহিনী শুরু। মানে আমাদের সম্পর্কটা অফিসিয়ালি প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে রূপ নেয় তার এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে। আর তখন থেকেই জানাজানি হয়ে যায়। তবে বাপের প্রভাব পতিপত্তির জন্য লোকে এসব নিয়ে তেমন আজে বাজে কথা বলতে সাহস পায় নাই। এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায় বাপের প্রচুর ডোনেশন এমনিতে দেয়া লাগে। আর এমনিতে ছেলে হিসাবে পাল্লা এক্কেরে খারাপ না। পড়াশুনা না হলেও প্রায় নিজের চেষ্টাতেই খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার পথ করে নিয়েছি।
ভার্চুয়াল জগতে অনেকদিন হয়ে গেল। অনেকের সাথেই খুব কাছাকাছির একটা সম্পর্কও হয়েছে। ইনবক্সে তাদেরকে অনেক রকম কথা বলেছি, অনেক রকম পরিচয় দিয়েছি। লুলামিও করতে হয়েছে কিছু কারণে। সবই শুধু সিকিউরিটির স্বার্থে এবং মাঝে মাঝে কিছু খবর বের করার জন্য। এখন সরি বলছি সবার কাছে। আশা করি তারা সেটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কিন্তু যখন একাউন্ট রিপোর্টেড হয়ে গেল, ফেবু থেকে ফটো আইডি চাইল, তখন একাউন্টটার মায়ার আসল আইডি না দিয়ে উপায় ছিল না। ভাবিনি এরকম ঝামেলা হবে। তবে এলাকায় এই মামুন নামে আরো অনেকের নাম আছে। সারা দেশেও হাজার হাজার পাওয়া যাবে। এরকম কাহিনীও অনেকের জীবনের সাথেই মিলবে। তবে শিবির কানেকশনটা গোপনই ছিল, শুধু বোরখাওয়ালী আর দু-চারজন কাছের মানুষ টের পেয়েছিল। সেটা অনলাইনে কিভাবে এলো, ঠিক বুঝতে পারছি না।
সংক্ষেপে এই হলো পাল্লার শিবির আর ১৬ বছরের মেয়ের কাহিনী। (হয়তো আরো বিস্তারিত ভাবে মাঝে মাঝে লিখব)
———————————————–
বিঃদ্রঃ যারা নতুন আসছেন, তাদের জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা- বাস্তবে পরিচয় না থাকলে ভার্চুয়ালে কাউরেই বিশ্বাস করার দরকার নাই।
Leave a Reply