লিখেছেন: হাসিবুল হাসান শারদ
বছর দুই আগে ফেসবুকে কোথাকার একদল মোল্লা ঘোষণা দিয়েছিল, এই ফেসবুক ছেড়ে যাবে তারা। কারণ ইহুদি বংশোদ্ভূত এক নাস্তিক পোলার সৃষ্টি এই ফেসবুক। এখানে থাকা গুন্নাহ। এখানে মুসলমানেরা ছাড়াও আছে সব জাতির সব ধর্মের সব লোক। আছে নাস্তিকেরাও। তাই মুসলমানেরা গড়ে তুলবে আরেকটা সোশাল নেটওয়ার্ক। সেখানে থাকবে শুধু দ্বীনের সেনাবাহিনী। সেটার নাম হবে মিল্লাত ফেসবুক।
আমি ঐসব নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম তখন। মুমিনেরা তাতে ব্যাপক তর্জনগর্জন করে ফেসবুক বর্জন করার হুমকি দিয়েছিল। সেই হুমকিতে জুকারবার্গের কলজের পানি শুকিয়ে গেছিল। জুকারবার্গ ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছিল। টুপি পরেছিল। দাড়ি রেখেছিল। (সোর্স : ছাগু পেজগুলো)
যাহোক, আজ একটা ফতোয়া শুনলাম যে ইসলামিক কারণব্যতীত ফেসবুকে ঢুকলে গুনাহ্ হবে। ঠিক এই ফতোয়া মিল্লাত ফেসবুকের যাত্রা আরম্ভের ঐ সময় শুনেছিলাম। তাই আবার মিল্লাত ফেসবুকের কথা আমার মনে পড়ে গেল। গুগল করে দেখলাম, হ্যাঁ, মিল্লাত ফেসবুককে পাওয়া গেল। তারাও নীলবর্ণের থিম করেছে। প্রথম পেজেই আছে- মসজিদের যে-মিনার থাকে, ঐগুলোর ছবি। ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে বলছে। সাইন আপ করারও ফিল্ড আছে দেখলাম। পুরাই হাস্যকর টাইপ! ফেসবুকের অন্ধ অনুকরণে তৈরি।
ভাবছি, ঐখানে আমাদের মুমিনেরা কে কে আইডি করেছে এবং এই ফেসবুক কে কে ছেড়ে গেছে!
নাস্তিক মার্ক জুকারবার্গের কাছে কী চায় মুমিনেরা? মুমিনেরা কি ইহুদি বা নাস্তিককে ঐ মিল্লাত ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেবে? বা আইডি করে তাতে ‘অ্যাথেইস্ট’ লিখতে দেবে? অথচ নাস্তিক জুকারবার্গ কোনো মুমিনের মত ও পথকে কিন্তু রুদ্ধ করছে না এই ফেসবুকে। এবং মুমিনদের ইসলামিক বাণীপ্রকাশেরও এখন একটি বড় মাধ্যম এই ফেসবুকই, মিল্লাত না। ফেসবুক হচ্ছে এমন একটা দেশের মতো যেখান থেকে মুমিনেরা বের হয়ে গিয়ে আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়, গড়ে তোলেও, অথচ সেখানে যায় না। মাটি কামড়ে নাস্তিকের ফেসবুকেই পড়ে থাকে।
সৃষ্টিশীল জুকারবার্গের সাথে সৃষ্টিশক্তিহীন তারা আস্ফালন করে, চ্যালেঞ্জ করে আরেকটা ইসলামিক ফেসবুক গড়ে তুলবে তারা, অথচ বেমালুম ভুলে যায় সৃষ্টিশীল একটি মগজের সাথে পাল্লা দিতে হলে আরো সৃষ্টিশীল একটা মগজই থাকতে হয়। মুসলমানদের মগজ কী রকম, তা তো দুনিয়ার সবাই দেখতেই পাচ্ছে! সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দ্বারা বড়জোর কয়েকটা গ্রেনেডবোমা মেরে ফেসবুক অফিসের ভবনটা গুঁড়িয়ে দেয়া যায়, কিন্তু নতুন একটা ফেসবুকজগৎ গড়ে তোলা যায় না। যদি যেত, তবে এদেশি ও বিদেশি যত মুমিন ফেসবুকারেরা আছে তারা ঐ মিল্লাত-ফিল্লাতেই আইডি করত, নাস্তিকের গড়া ফেসবুকে পড়ে পড়ে পচত না।
ফেসবুকের বাইরেও মুমিনদের অবস্থা অনুরূপ। ব্যাঙের মতো ফুলে ফেঁপে একেকটা আস্ফালন করে যে এই করব সেই করব একদিন অ্যামেরিকা ইউরোপ দখল করব শাসন করবে বকবক বকবক… অথচ কী যে পারে তা মিল্লাত ফেসবুকের দ্বারা বোঝা যায়। আর যার নিজের বলতে কিছুই নেই, তার চাপার জোর একটু বেশি থাকলে অবশ্য ক্ষতি কিছু নেই! চাপা চলুক, মুমিন!
Leave a Reply