• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা – তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকা (পর্ব ২৭)

You are here: Home / ধর্মকারী / কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা – তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকা (পর্ব ২৭)
March 6, 2017
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬
যতদুর জানা যায়, ইয়াথরিব/ইয়াসরিব(মদিনা)-তে স্থায়ী হবার আগ পর্যন্ত মুহাম্মদ ও তার সাহাবীগন সিরিয়া’র বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখে নামাজে দাঁড়াতেন, যদিও এসময়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে কোনো স্থাপনা ছিলো কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে! এছাড়া খলিফা উমর-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়; মুহাম্মদের ব্যাখ্যার আগে কাবা ইব্রাহীম নির্মিত এবং মাকামে ইব্রাহীম (ইব্রাহীমের পায়ের ছাপ!) সম্পর্কে মক্কাবাসীদের খুব একটা ধারণা ছিলো না! মুহাম্মদ নিজেও এ বিষয়ে ছিলেন সন্দিহান! বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখে নামাজে দাঁড়ানো সেটাই প্রমাণ করে। এছাড়া সাহাবীদের সাফা-মারওয়া দৌড়াতে রাজি করানোর জন্য মুহাম্মদকে কোরআনের আয়াত সহ হাজেরা-ইসমাঈল-এর গল্প পর্যন্ত আমদানি করতে হয়েছে!
কোনো মুমিন মুসলিম গবেষকই ইসমাঈলের সাথে মুহাম্মদের পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি সঠিক ইসলামী তথ্যসুত্র দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন না; কোটি টাকার বাজি রেখে বলতে পারেন! মাত্র একটি প্রশ্নই তাদের কাবু করার জন্য যথেষ্ট: বলুন, ‘ইসমাঈল’ মুহাম্মদের কততম পুরুষ এবং তাদের নাম কী? আমরা বাজারে আদম থেকে মুহাম্মদ পর্যন্ত যে সব বংশতালিকা পাই, তাকে সহজ কথায় বলা চলে ‘গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়ে যায়’ টাইপ! যেমন: সঠিক ইসলামী তথ্যসূত্রে আজরাইল/আজ্রাইল ফেরেশতার নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না (ইসলামে তাকে মৃত্যুর ফেরেশতা বলা হয় মাত্র!); আদম থেকে মুহাম্মদ তো অনেক দূর গ্যালাক্সির বিষয়! একটা অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে রাখি; মুহাম্মদের পূর্ব-পুরুষ আদনান পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক সিরিয়াল সঠিক ইসলামী তথ্যসূত্রে পাওয়া যায়; কিন্তু আদনান থেকে ইসমাঈল কততম পুরুষ এবং তারা কে-কে, তার কোনো সঠিক দলিল কোনো বাপের-বেটা দিতে পারবে না! ইমাম মালিক-সহ অধিকাংশ ওলামাদের মতে এই বংশক্রম অজানা এবং এর সঠিক কোনো দলিল কখনই পাওয়া যায়নি!
ইব্রাহীমের নিজ সন্তান কুরবানি দেওয়া এবং শয়তানকে পাথর মারার মিথটাও চূড়ান্তভাবে হাস্যকর! মক্কায় হজ্জের সময় আমার সৌদি লাইব্রেরিয়ান গাইডকে বলেছিলাম ইসমাঈলকে কুরবানি করার স্থান দেখানোর জন্য; এখনও খুব সচেতনভাবে না চাইলে এটি দেখার সুযোগ খুব কম লোকের হয়! শয়তানকে পাথর মারার স্থান থেকে কাবাকে সামনে রেখে দাড়ালে বাঁ-পাশের পাহাড়ের ওপরে এটি অবস্থিত, এটি এতই উঁচুতে, খালি চোখে প্রায় দেখাই যায় না! যে-ছবিটি সংযুক্ত করে দিচ্ছি নিচে, সেটি মিনায় অবস্থিত ব্রিজের উপর থেকে দাঁড়িয়ে ৩০০ এম.এম ডিএসএলআর লেন্স দিয়ে শতভাগ জুম করে তোলা! আমি নিশ্চিত, মুহাম্মদ মিনায় অবস্থানকালের কোনো এক সময়ে এই স্থানটি দেখিয়ে তার সাহাবীদের কাছে ইসমাইল-কে কুরবানি করার গল্পটি বলেছিলেন। স্থানটি এখনও মানুষ যাতায়াতের উপযুক্ত নয়, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এখানে পৌঁছে কুরবানি করার গল্পের বিশ্বাস কেবল গাধাদের জন্য সংরক্ষিত!

(ছবিতে গম্বুজ আকৃতির স্থানটি ইব্রাহীমের সন্তান কুরবানী দেবার স্থান)
পূর্ণাকারের ছবি এখানে

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৭ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৫ম তিন অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

এ পর্বেও নতুন কিছু নেই; তবে ১০৯, ১১০, ১১১ তম প্রকাশ এটা প্রমান করবে, মুহাম্মদ তার সাহাবীদের আবারও নতুন করে ধর্মপাঠ দিচ্ছেন! তাদের আল্লাহকে ভয় এবং ভরসা করার কথা বলছেন। সেইসাথে একথাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, তিনি কেবল একজন বার্তাবাহক-সতর্ককারী এবং কোরআন তার বানানো কথা নয়! এসব সত্যিই আল্লাহর বাণী!
মুহাম্মদ দ্বারা ১০৯ তম প্রকাশ: সূরা আল জাসিয়াহ (৪৫) (নতজানু), ১৪ নং আয়াত বাদে ০১ থেকে ৩৭ আয়াত:
১. হা-মীম।
২. এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে।
৩. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য।
৪. তোমাদের সৃষ্টিতে এবং জীবজন্তুর বিস্তারে নিদর্শন রয়েছে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য।
৫. রাত ও দিনের আবর্তনে, আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে যমীনকে তার মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন আর বায়ুর পরিবর্তনে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
৬. এগুলি আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার নিকট আবৃত্তি করছি যথাযথভাবে; সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন্ বাণীতে বিশ্বাস করবে?
৭. দুর্ভোগ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপীর।
৮. যে আল্লাহর আয়াত শোনে যা তার সামনে পাঠ করা হয়, অতঃপর অহমিকার সাথে (কুফুরীর উপর) থাকে, যেন সে তা শোনেইনি; কাজেই তাকে ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ দাও।
৯. যখন আমার কোনো আয়াত সে অবগত হয়, তখন সে তা নিয়ে পরিহাস করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
১০. তাদের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক স্থির করেছে তারাও নয়। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
১১. এ (কুরআন) সঠিক পথের দিশারী। যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১২. আল্লাহই সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
১৩. তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছু নিজ অনুগ্রহে। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।
১৫. যে সৎ কাজ করে, সে তার কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেহ মন্দ কাজ করলে ওর প্রতিফল সেই ভোগ করবে, অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
১৬. আমি তো বানী ইসরাঈলকে কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছিলাম এবং দিয়েছিলাম শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বজগতের উপর।
১৭. তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দান করেছিলাম দ্বীন সম্পর্কে। তাদের নিকট জ্ঞান আসার পর তারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ বিরোধিতা করেছিল, তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করত, তোমার প্রতিপালক কিয়ামাত দিবসে তাদের মধ্যে সেই বিষয়ের ফায়সালা করে দিবেন।
১৮. এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দীনের বিশেষ বিধানের উপর। সুতরাং তুমি ওর অনুসরণ কর, অজ্ঞদের খেয়াল-খুুশির অনুসরণ কর না।
১৯. আল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না; যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ ধর্মভীরুদের বন্ধু।
২০. এ (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের আলো, আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পথের দিশারী এবং রহমত স্বরূপ।
২১. দুষ্কৃতিকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের সমান গণ্য করব, যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই মন্দ!
২২. আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজ অনুযায়ী ফল পেতে পারে, আর তাদের প্রতি যুলম করা হবে না।
২৩. তুমি কি লক্ষ্য করছ তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনেশুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর ওপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
২৪. তারা বলে: একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি ও বাঁচি, আর সময়ই (কাল) আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্তুতঃ এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, তারা তো শুধু মনগড়া কথা বলে।
২৫. তাদের নিকট যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করা হয়, তখন তাদের কোনো যুক্তি থাকে না, শুধু এই উক্তি ছাড়া যে, তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে উপস্থিত কর।
২৬. বল: আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন ও তোমাদের মৃত্যু ঘটান। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাত দিবসে একত্রিত করবেন যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
২৭. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই; যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাশ্রয়ীরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
২৮. এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়কে দেখবে ভয়ে নতজানু; প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার আমলনামার প্রতি আহবান করা হবে, আজ তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে, যা তোমরা করতে।
২৯. আমার এ কিতাব তোমাদের ব্যাপারে সত্য কথাই বলবে, তোমরা যা করতে আমি তাই-ই লিখে রাখতাম।
৩০. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দাখিল করবেন স্বীয় রাহমাতে। এটাই মহা সাফল্য।
৩১. পক্ষান্তরে যারা কুফরী করে তাদেরকে বলা হবে: তোমাদের নিকট কি আমার আয়াত পাঠ করা হয়নি? কিন্তু তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলে এবং তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।
৩২. যখন বলা হয়: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামাত – এতে কোনো সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলে থাক: আমরা জানি না, কিয়ামাত কী; আমরা মনে করি, এটা একটি ধারণা মাত্র এবং আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই।
৩৩. তাদের মন্দ কাজগুলি তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে।
৩৪. আর বলা হবে: আজ আমি তোমাদেরকে বিস্মৃ ত হব, যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাৎকারকে বিস্মৃত হয়েছিলে। তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
৩৫. এটা এ জন্য যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতগুলোকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয় বানিয়ে নিয়েছিলে, আর দুনিয়ার জীবন তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। কাজেই আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না, আর তাওবাহ করার সুযোগ দেয়া হবে না।
৩৬. অতএব প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি আসমানের প্রতিপালনকারী, যমীনের প্রতিপালনকারী, বিশ্বজগতের প্রতিপালনকারী ।
৩৭. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে গৌরব গরিমা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
মুহাম্মদ দ্বারা ১১০ তম প্রকাশ: সূরা আত তাগাবুন (৬৪) (মোহ অপসারণ), ০১ থেকে ১৩ আয়াত:
১. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সার্বভৌমত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই; তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২. তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের কেউ-কেউ অবিশ্বাসী ও তোমাদের কেউ-কেউ বিশ্বাসী। তোমরা যা কর আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা।
৩. তিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন। তোমাদের আকৃতি করেছেন সুশোভন এবং প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই নিকট।
৪. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন, তোমরা যা গোপন কর ও তোমরা যা প্রকাশ কর এবং তিনি অন্তর্যামী।
৫. তোমাদের নিকট কি পৌঁছেনি পূর্ববর্তী কাফিরদের বৃত্তান্ত? তারা তাদের কর্মের মন্দফল আস্বাদন করেছিল এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৬. তা এ জন্য যে, তাদের নিকট যখন তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসহ আসতো, তখন তারা বলত: মানুষই কি আমাদের পথের সন্ধান দিবে? অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল; কিন্তু এতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসা।
৭. কাফিরেরা দাবি করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। বল: নিশ্চয়ই হবে, আমার রবের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদের সেই সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।
৮. অতএব তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও যে জ্যোতি (কুরআন) আমি অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
৯. স্মরণ কর, যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন সমাবেশ দিনে, সেদিন হবে লাভ লোকসানের দিন। যে ব্যক্তি আল্লাহয় বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। এটাই মহা সাফল্য।
১০. কিন্তু যারা কুফরী করে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, কত মন্দ ঐ প্রত্যাবর্তনস্থল!
১১. আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।
১২. আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা।
১৩. আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। সুতরাং আল্লাহ্‌র ওপরেই তবে মুমিনরা নির্ভর করুক।
মুহাম্মদ দ্বারা ১১১ তম প্রকাশ: সূরা হুদ (১১) (নবী হুদ), ১২, ১৭, ১১৪ বাদে ০১ থেকে ১২৩ আয়াত:
১. আলিফ লাম রা। এটি (কুরআন) এমন কিতাব, যার আয়াতগুলি (প্রমাণাদী দ্বারা) মাযবূত করা হয়েছে। অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; প্রজ্ঞাময়ের (আল্লাহর) পক্ষ হতে।
২. এ (উদ্দেশে) যে, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত কর না; আমি (নাবী) তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ হতে তোমাদেরকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
৩. আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।
৪. আল্লাহরই নিকট তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।
৫. জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন, যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন, যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে।
৬. ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন কোনো জীব নেই, যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই, তিনি জানেন, তাদের থাকার জায়গা কোথায় আর কোথায় তাদেরকে (মৃত্যুর পর) রাখা হয়, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট লিপিকায়।
৭. আর তিনি এমন, যিনি সমস্ত আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং সেই সময় তাঁর আরশ পানির উপর ছিল, যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নেন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম ‘আমলকারী কে? আর যদি তুমি বল: নিশ্চয়ই তোমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করা হবে, তখন যে সব লোক কাফির তারা বলে: এটা তো নিছক স্পষ্ট যাদু।
৮. আর যদি আমি কিছু দিনের জন্য তাদের থেকে শাস্তিকে মুলতবী করে রাখি তাহলে তারা বলতে থাকে: সেই শাস্তিকে কিসে আটকে রেখেছে? স্মরণ রেখ, যেদিন ওটা তাদের উপর এসে পড়বে, তখন তা কারও নিবারণে কিছুতেই নিবারিত হবে না, আর যা নিয়ে তারা উপহাস করছিল তা এসে তাদেরকে ঘিরে নিবে।
৯. আমি যদি মানুষকে আমার পক্ষ হতে করুণার স্বাদ গ্রহণ করাই, অতঃপর তার রাশ টেনে ধরি তাহলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়।
১০. আর তাকে বিপদ-আপদ স্পর্শ করার পর আমি যদি তাকে নি‘আমাতের স্বাদ গ্রহণ করাই, তখন সে বলতে শুরু করে: আমার সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে গেল। (আর) সে গর্ব করতে থাকে, আত্মপ্রশংসা করতে থাকে।
১১. কিন্তু যারা ধৈর্য ধারণ করে ও ভাল কাজ করে এমন লোকদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদান।
১৩. তাহলে কি তারা বলে যে, ওটা সে নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও: তাহলে তোমরাও ওর অনুরূপ রচিত দশটি সূরা আনয়ন কর এবং (নিজ সাহায্যার্থে) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকতে পার ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাক।
১৪. তারা যদি তোমাদের ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে নাও যে, আল্লাহর জ্ঞান অনুসারেই তা অবতীর্ণ হয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তাহলে এখন কি তোমরা আত্মসমর্পণ করবে?
১৫. যারা শুধু পার্থিব জীবন এবং ওর জাঁকজমকতা কামনা করে, আমি তাদের কৃতকর্মগুলির ফল দুনিয়ায়ই দিয়ে দিই, তাদের জন্য কিছুই কম করা হয় না।
১৬. এরা এমন লোক যে, তাদের জন্য আখিরাতে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই; আর তারা যা কিছু করছে তাও বিফল হবে।
১৮. যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, তাদের থেকে বড় যালিম আর কে হতে পারে? তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে আর সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেবে যে, এই লোকরাই তাদের রব্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছিল। শুনে রেখ! আল্লাহর অভিশাপ সেই যালিমদের ওপর
১৯. যারা অপরকে আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত রাখত এবং ওতে বক্রতা বের করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকত; আর তারা তো আখিরাতেও অমান্যকারী।
২০. দুনিয়াতে তারা আল্লাহকে অক্ষম করে দিতে পারত না, আর আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারীও ছিল না, তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। তারা না শুনতে পারত, আর না দেখতে পারত।
২১. এরা সেই লোক যারা নিজেদেরকে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আর তারা যা কিছু রচনা করেছিল, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে।
২২. এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আখেরাতে এরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
২৩. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কার্যাবলী সম্পন্ন করেছে, আর নিজেদের পালনকর্তার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে, এরূপ লোকেরাই হচ্ছে জান্নাতবাসী, তাতে তারা অনন্তকাল থাকবে।
২৪. দু’শ্রেণীর লোকের দৃষ্টান্ত হল যেমন একজন হল অন্ধ ও বধির, অন্যজন চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশীল, এ দু’জন কি তুলনায় সমান হতে পারে? এরপরও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
২৫. আমি নূহকে তার কাওমের কাছে পাঠিয়েছিলাম। (সে বলেছিল) আমি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী,
২৬. তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদাত কর না; আমি তোমাদের উপর এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির আশংকা করছি।
২৭. অতঃপর তার সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সব নেতৃস্থানীয় লোক কাফির ছিল তারা বলতে লাগল: আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি; আর আমরা দেখছি যে, শুধু ঐ লোকেরাই তোমার অনুসরণ করছে, যারা আমাদের মধ্যে নিতান্তই হীন ও ইতর, কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা না করেই; আর আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্বও আমরা দেখছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করছি।
২৮. সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আচ্ছা বলত, আমি যদি স্বীয় রবের পক্ষ হতে প্রমাণের উপর (প্রতিষ্ঠিত হয়ে) থাকি এবং তিনি আমাকে নিজ সন্নিধান হতে রাহমাত (নবুওয়াত) দান করেন, অতঃপর ওটা তোমাদের বোধগম্য না হয়, তাহলে কি ঐ বিষয়ে তোমাদের বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা ওটা অবজ্ঞা করতে থাক?
২৯. হে আমার জাতির লোকেরা! আমি এ কাজে তোমাদের কাছে কোনো ধন-সম্পদ চাই না, আমার পারিশ্রমিক আছে কেবল আল্লাহর কাছে। আর মু’মিনদের তাড়িয়ে দেয়া আমার জন্য শোভনীয় নয়, তারা তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ অবশ্যই লাভ করবে, কিন্তু আমি দেখছি তোমরা এমন এক জাতি যারা মূর্খের আচরণ করছ।
৩০. হে আমার জাতির লোকেরা! আমি যদি এই লোকদেরকে তাড়িয়ে দিই, তাহলে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে কে বাঁচাবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ নেবে না?
৩১. আর আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছি না যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভাণ্ডার রয়েছে। এবং আমি অদৃশ্যের কথা জানি না, আর আমি এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আর যারা তোমাদের চোখে হীন, আমি তাদের সম্বন্ধে এটা বলতে পারি না যে, আল্লাহ কখনও তাদেরকে কোন নি’আমাত দান করবেন না; তাদের অন্তরে যা কিছু আছে তা আল্লাহ উত্তম রূপে জানেন, আমি এরূপ বললে অন্যায়ই করে ফেলব।
৩২. তারা বলল: হে নূহ! তুমি আমাদের সাথে বির্তক করেছ, অনন্তর সেই বির্তক অনেক বেশি করেছ। সুতরাং যে সম্বন্ধে তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ, তা আমাদের সামনে আনয়ন কর, যদি তুমি সত্যবাদী হও।
৩৩. সে বলল: ওটাতো আল্লাহ তোমাদের সামনে আনয়ন করবেন, যদি তিনি ইচ্ছা করেন এবং তোমরা তাঁকে অক্ষম করতে পারবে না।
৩৪. আমি তোমাদের কোন কল্যাণ করতে চাইলেও আমার কল্যাণ কামনা তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে পথহারা করতে চান। তিনিই তোমাদের রবব, আর তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে।
৩৫. তাহলে কি তারা (মাক্কার কাফিরেরা) বলে, সে (মুহাম্মাদ) এটা (কুরআন) নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও: যদি আমি তা নিজে রচনা করে থাকি, তাহলে আমার এই অপরাধ আমার ওপর বর্তাবে, আর তোমরা যে অপরাধ করছ, তা থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত।
৩৬. আর নূহের প্রতি অহী প্রেরিত হল: যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার কাওম হতে আর কেহই ঈমান আনবে না, অতএব যা তারা করছে, তাতে তুমি মোটেই দুঃখ কর না।
৩৭. আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার নির্দেশক্রমে নৌকা নির্মাণ কর, আর আমার কাছে যালিমদের (কাফিরদের) সম্পর্কে কোনো কথা বল না, তাদের সকলকে নিমজ্জিত করা হবে।
৩৮. সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল, আর যখনই তার কাওমের প্রধানদের কোনো দল উহার নিকট দিয়ে গমন করত, তখনই তার সাথে উপহাস করত। সে বলত: যদি তোমরা আমাদেরকে উপহাস কর, তাহলে আমরাও (একদিন) তোমাদেরকে উপহাস করব, যেমন তোমরা আমাদেরকে উপহাস করছ।
৩৯. সুতরাং সত্বরই তোমরা জানতে পারবে যে, কোন ব্যক্তির উপর এমন আযাব আসার উপক্রম হয়েছে যা তাকে লাঞ্ছিত করবে এবং তার উপর চিরস্থায়ী আযাব নাযিল হবে।
৪০. শেষে যখন আমার নির্দেশ এসে গেল, আর তন্দুর (পানিতে) উথলে উঠল, আমি বললাম, ‘প্রত্যেক শ্রেণীর যুগলের দুটি তাতে তুলে নাও আর তোমার পরিবার পরিজনকে, তাদের ছাড়া যাদের ব্যাপারে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও (তুলে নাও)। তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল খুব অল্প কয়েকজনই।
৪১. আর সে বলল: তোমরা এতে আরোহণ কর, এর গতি ও এর স্থিতি আল্লাহরই নামে; নিশ্চয়ই আমার রাব্ব ক্ষমাশীল, দয়াবান।
৪২. আর সেই নৌকাটি তাদেরকে নিয়ে পবর্ততুল্য তরঙ্গের মধ্যে চলতে লাগল, আর নূহ স্বীয় পুত্রকে ডাকতে লাগল এবং সে ছিল ভিন্ন স্থানে; হে আমার পুত্র! আমাদের সাথে সাওয়ার হয়ে যাও এবং কাফিরদের সাথে থেক না।
৪৩. সে বলল: আমি এখনই কোনো পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করব যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। সে (নূহ) বলল: আজ আল্লাহর শাস্তি হতে কেহই রক্ষাকারী নেই, কিন্তু যার ওপর তিনি দয়া করেন। ইতোমধ্যে তাদের উভয়ের মাঝে একটি তরঙ্গ অন্তরাল হয়ে পড়ল, অতঃপর সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হল।
৪৪. অতঃপর বলা হল, ‘হে যমীন! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, থাম।’ অতঃপর পানি যমীনে বসে গেল, কার্য সমাপ্ত হল, নৌকা জুদী পর্বতে এসে ভিড়ল, আর বলা হল – ‘যালিম লোকেরা ধ্বংস হোক!
৪৫. নূহ তার প্রতিপালককে আহবান জানাল। সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র তো আমার পরিবারভুক্ত, আর তোমার ও’য়াদা সত্য আর তুমি বিচারকদের সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক।’
৪৬. তিনি বললেন, ‘ওহে নূহ! সে তো তোমার পরিবারের লোক নয়, তার আচার-আচরণ অসৎ, কাজেই যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমার কাছে আবেদন করো না, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন মূর্খদের মধ্যে শামিল না হও।
৪৭. সে বলল: হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার নিকট এমন বিষয়ের আবেদন করা হতে আশ্রয় চাচ্ছি, যে সম্বন্ধে আমার জ্ঞান নেই, আর আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাব।
৪৮. বলা হল: হে নূহ! অবতরণ কর, আমার পক্ষ হতে সালাম ও বারকতসমূহ নিয়ে, যা তোমার উপর নাযিল করা হবে এবং সেই দলসমূহের উপর যারা তোমার সাথে রয়েছে; আর অনেক দল এরূপও হবে যাদেরকে আমি কিছুকাল (দুনিয়ার) সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দান করব, অতঃপর তাদের উপর পতিত হবে আমার পক্ষ হতে কঠিন শাস্তি।
৪৯. এ সব হল অদৃশ্যের খবর যা তোমাকে ওয়াহী দ্বারা জানিয়ে দিচ্ছি, যা এর পূর্বে না তুমি জানতে, না তোমার জাতির লোকেরা জানত। কাজেই ধৈর্য ধর, শুভ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্যই নির্দিষ্ট।
৫০. আর ‘আদ (সম্প্রদায়) এর প্রতি তাদের ভাই হুদকে (রাসূল রূপে) প্রেরণ করলাম। সে বলল: হে আমার কাওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া কেহ তোমাদের মা’বূদ নেই; তোমরা শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী।
৫১. হে আমার সম্প্রদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো তাঁর জিম্মায় যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তবুও কি তোমরা জ্ঞান-বুদ্ধি খাটাবে না?
৫২. হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর অনুশোচনাভরে তাঁর দিকেই ফিরে যাও, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের শক্তিকে আরো শক্তি দিয়ে বাড়িয়ে দিবেন, আর অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।
৫৩. তারা বলল, ‘হে হুদ! তুমি আমাদের কাছে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসনি, আর তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যগুলোকে ত্যাগ করতে পারি না, আমরা তোমাতে বিশ্বাসী নই।
৫৪. আমাদের কথা এই যে, আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্য হতে কেহ তোমাকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে। সে বলল: আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি এবং তোমরাও সাক্ষী থেক যে, আমি তা থেকে মুক্ত, তোমরা যে ইবাদাতে শরীক সাব্যস্ত করছ,
৫৫. তাঁর (আল্লাহর) সাথে। সুতরাং তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাক, অতঃপর আমাকে সামান্য অবকাশ দিয়ো না।
৫৬. আমি নির্ভর করি আল্লাহর ওপর যিনি আমার আর তোমাদের রব, এমন কোনো জীব নে,ই যার কর্তৃত্ব তাঁর হাতে নয়, নিশ্চয়ই আমার রব সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।
৫৭. এরপরও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে লও (তবে জেনে রেখ), আমাকে যা দিয়ে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে আমি তো তোমাদের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছি, এখন আমার প্রতিপালক তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন আর তোমরা তাঁর কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আমার প্রতিপালক সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।
৫৮. আর যখন আমার (শাস্তির) হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমি হুদকে এবং যারা তার সাথে ঈমানদার ছিল তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম, আর তাদেরকে বাঁচালাম অতি কঠিন শাস্তি হতে।
৫৯. আর তারা ছিল ‘আদ সম্প্রদায়, যারা নিজের প্রতিপালকের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করল এবং রাসূলদেরকে অমান্য করল, পক্ষান্তরে তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করত।
৬০. আর এই দুনিয়ায়ও অভিসম্পাত তাদের সঙ্গে রইল এবং কিয়ামাত দিবসেও; ভাল রূপে জেনে রেখ! ‘আদ নিজ রবের সাথে কুফরী করল; আরও জেনে রেখ! দূরে পড়ে রইল ‘আদ, রহমত হতে, যারা হুদের সম্প্রদায় ছিল।
৬১. আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে পয়দা করেছেন, আর তাতেই তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কাজেই তাঁর কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তাঁর পানেই ফিরে এসো, আমার প্রতিপালক তো অতি নিকটে, আর তিনি আহবানে সাড়াদানকারী।’
৬২. তারা বলল, ‘হে সালিহ! এর পূর্বে তুমি তো আমাদের মাঝে ছিলে আশা-আকাঙ্ক্ষার পাত্র, তুমি কি আমাদেরকে সেই মা’বূদদের ‘ইবাদাত করতে নিষেধ করছ আমাদের পিতৃ পুরুষরা যার ‘ইবাদাত করত? তুমি আমাদেরকে যে দিকে ডাকছ, সে সম্পর্কে আমরা বিভ্রান্তিকর সংশয়ে পড়ে আছি।
৬৩. সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আচ্ছা বলত, আমি যদি নিজ রবের পক্ষ হতে প্রমাণের ওপর থাকি (এবং) তিনি আমার প্রতি নিজের রাহমাত (নবুওয়াত) দান করে থাকেন, আমি যদি আল্লাহর কথা না মানি, তাহলে আমাকে আল্লাহ (শাস্তি) হতে কে রক্ষা করবে? তাহলে তো তোমরা শুধু আমার ক্ষতিই করছ।
৬৪. হে আমার জাতির লোকেরা! এটা আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য একটা নিদর্শন। একে আল্লাহর যমীনে চলে ফিরে খেয়ে বেড়াতে দাও, একে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ো না, নচেৎ শীঘ্রই তোমাদেরকে ‘শাস্তি পাকড়াও করবে।’
৬৫. অনন্তর তারা ওকে মেরে ফেলল। তখন সে বলল: তোমরা নিজেদের ঘরে আরও তিন দিন বাস করে নাও; এটা ওয়াদা, যাতে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই।
৬৬. অতঃপর আমার হুকুম যখন আসল, তখন আমি সালেহ আর তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার দয়ায় বাঁচিয়ে নিলাম, আর সে দিনের লাঞ্ছনা হতে রক্ষা করলাম। তোমার প্রতিপালক তিনিই তো শক্তিশালী, প্রতাপশালী।
৬৭. যারা যুলম করেছিল এক প্রচণ্ড শব্দ তাদেরকে আঘাত হানল, আর তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু হয়ে পড়ে রইল-
৬৮. যেন তারা সেই গৃহগুলিতে কখনও বসবাস করেনি। ভাল রূপে জেনে রেখ! সামুদ সম্প্রদায় নিজ রবের সাথে কুফরী করল। জেনে রেখ, সামুদ সম্প্রদায় রাহমাত হতে দূরে ছিটকে পড়ল।
৬৯. আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা এসে বলল ”তোমার প্রতি সালাম! সেও বলল, ‘তোমাদের প্রতিও সালাম!’ অনতিবিলম্বে সে ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসলো।
৭০. যখন সে দেখল তাদের হাত তার (অর্থাৎ খাবারের) দিকে পৌঁছচ্ছে না, সে তাদের সম্পর্কে সন্দিগ্ধ হল আর তাদের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় পেয়ো না, আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি।’
৭১. (ইবরাহীমের) স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। তখন আমি তাকে ইসহাকের আর ইসহাকের পর ইয়াকূবের সুসংবাদ দিলাম।
৭২. সে বলল: হায় কপাল! এখন আমি সন্তান প্রসব করব বৃদ্ধা হয়ে! আর আমার এই স্বামী অতি বৃদ্ধ। বাস্তবিক এটাতো একটা বিস্ময়কর ব্যাপার!
৭৩. তারা বলল, ‘আল্লাহর কাজে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ, ওহে (ইবরাহীমের) পরিবারবর্গ! তোমাদের উপর রয়েছে আল্লাহর দয়া ও বরকতসমূহ, তিনি বড়ই প্রশংসিত, বড়ই মহান।’
৭৪. পরে যখন ইবরাহীমের আতঙ্ক দূর হল, আর তার কাছে সুসংবাদ আসল, তখন সে লূত জাতির ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করল।
৭৫. অবশ্যই ইবরাহীম ছিল বড়ই সহিষ্ণু, কোমল হৃদয় আর আল্লাহমুখী।
৭৬. হে ইবরাহীম! এ কথা ছেড়ে দাও, তোমার প্রতিপালকের আদেশ এসে গেছে এবং তাদের ওপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই প্রতিহত করার নয়।
৭৭. আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ যখন লূতের কাছে আসলো, তাদের আগমনে সে ঘাবড়ে গেল। (তাদেরকে রক্ষায়) নিজেকে অসমর্থ মনে করল, আর বলল, ‘আজ বড়ই বিপদের দিন।
৭৮. আর তার কাওম তার কাছে ছুটে এলো, এবং তারা পূর্ব হতে কু-কার্যসমূহ করেই আসছিল। লূত বলল: হে আমার কাওম! (তোমাদের ঘরে) আমার এই কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে আমার মেহমানদের সামনে অপমানিত কর না; তোমাদের মধ্যে কি সুবোধ লোক কেহ নেই?
৭৯. তারা বলল: তুমি তো অবগত আছ যে, তোমার এই কন্যাগুলির আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই, আর আমাদের অভিপ্রায় কি তাও তোমার জানা আছে।
৮০. সে বলল: কি উত্তম হত যদি তোমাদের উপর আমার কিছু ক্ষমতা চলত, অথবা আমি কোন দৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় নিতাম!
৮১. আগুন্তুকরা বলল, ‘হে লূত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত বার্তাবাহক, তারা তোমার কাছে কক্ষনো পৌঁছতে পারবে না, কাজেই কিছুটা রাত বাকি থাকতে তুমি তোমার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে পড়, তোমাদের কেউ যেন পিছনের দিকে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী (তোমাদের সঙ্গী হতে পারবে না) তারও তাই ঘটবে, অন্যদের যা ঘটবে। সকাল হল তাদের (শাস্তি আসার) নির্ধারিত সময়, সকাল কি নিকটবর্তী নয়?’
৮২. তারপর আমার নির্দেশ যখন এসে গেল, তখন আমি সেই জনপদকে উপর নিচ করে উল্টে দিলাম, আর তাদের উপর স্তরে স্তরে পাকানো মাটির প্রস্তর বর্ষণ করলাম।
৮৩. যে প্রস্তর খণ্ডের প্রতিটিই তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নিত ছিল। পাপিষ্ঠদের জন্য এ শাস্তি বেশি দূরের ব্যাপার নয়।
৮৪. আর মাদইয়ানবাসীদের কাছে আমি তাদের ভাই শুআয়বকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সত্য উপাস্য নেই, আর মাপে ও ওজনে কম দিয়ো না, আমি তোমাদেরকে ভাল অবস্থাতেই দেখছি। কিন্তু আমি তোমাদের জন্য শাস্তির আশঙ্কা করছি, সে দিনের যেদিন তোমাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরবে।
৮৫. আর হে আমার জাতি, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না, আর পৃথিবীতে গোলযোগ করে বেড়াবে না।
৮৬. আল্লাহ প্রদত্ত উদ্ধৃত্ত তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা ঈমানদার হও, আর আমি তো তোমাদের উপর সদা পর্যবেক্ষণকারী নই।
৮৭. তারা বলল, ‘হে শুআয়ব! তোমার ইবাদত কি তোমাকে এই হুকুম দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষ যার ‘ইবাদাত করত আমরা তা পরিত্যাগ করি বা আমাদের ধন-সম্পদের ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছে (মাফিক ব্যয় করা) বর্জন করি, তুমি তো দেখছি বড়ই ধৈর্যশীল, ভাল মানুষ।’
৮৮. সে বলল, ‘হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা কি ভেবে দেখেছ যদি আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি, আর তিনি আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দিয়ে থাকেন (তাহলে আমি কীভাবে তোমাদের অন্যায় কাজের সঙ্গী হতে পারি?), আমি তোমাদেরকে যে কাজ করতে নিষেধ করি, সেটা তোমাদের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছায় নয়, আমি তো সাধ্যমত সংশোধন করতে চাই, আমার কাজের সাফল্য তো আল্লাহরই পক্ষ হতে, আমি তাঁর ওপরই নির্ভর করি, আর তাঁর দিকেই মুখ করি।
৮৯. হে আমার সম্প্রদায়! আমার সঙ্গে বিরোধ তোমাদেরকে যেন কিছুতেই এমন কাজে উদ্বুদ্ধ না করে যাতে তোমাদের ওপর এমন বিপদ আসে, যেমন বিপদ এসেছিল নূহের জাতির কিংবা হূদের জাতির কিংবা সালিহর জাতির উপর। আর লূতের জাতির অবস্থান তো তোমাদের থেকে মোটেই দূরে নয়।
৯০. তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই নিকট তাওবাহ কর। আমার প্রতিপালক তো পরম দয়ালু, বড়ই ভালবাসা পোষণকারী।’
৯১. তারা বলল, ‘হে শুআয়ব! তুমি যা বল তার অনেক কথাই আমরা বুঝি না, আমরা আমাদের মধ্যে তোমাকে অবশ্যই দুর্বল দেখছি, তোমার গোত্র না থাকলে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর নিক্ষেপ ক’রে মেরে ফেলতাম, আমাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতাই নেই।
৯২. সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার স্বজনরা কি তোমাদের কাছে আল্লাহর চেয়েও প্রবল! তোমরা তো তাঁকে সম্পূর্ণতঃ পেছনে ফেলে রেখেছ, তোমরা যা করছ আমার প্রতিপালক তা সব কিছুই অবগত।’
৯৩. আর হে আমার জাতি, তোমরা নিজ স্থানে কাজ করে যাও, আমিও কাজ করছি, অচিরেই জানতে পারবে কার ওপর অপমানকর আযাব আসে আর কে মিথ্যাবাদী? আর তোমরাও অপেক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।
৯৪. আমার হুকুম যখন আসলো, তখন আমি আমার দয়ায় শুআয়ব আর তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে বাঁচিয়ে দিলাম। আর যারা যুলম করেছিল তাদেরকে এক প্রচণ্ড শব্দ আঘাত হানল, যার ফলে তারা নিজেদের গৃহে নতজানু হয়ে পড়ে রইল।
৯৫. (এমনভাবে) যেন তারা সেখানে কোনোদিনই বসবাস করেনি। জেনে রেখ, মাদইয়ানবাসীদেরকে দূরে নিক্ষেপ করা হল, যেমনভাবে দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল সামূদজাতিকে।
৯৬. আমি মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমার নিদর্শন আর স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে
৯৭. ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে, তবুও তারা ফেরাউনের হুকুমে চলতে থাকে, অথচ ফেরাউনের কোনো কথা ন্যায় সঙ্গত ছিল না।
৯৮. কেয়ামতের দিন সে তার জাতির লোকদের আগে আগে থাকবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দিবে। আর সেটা অতীব নিকৃষ্ট স্থান, সেখানে তারা পৌঁছেছে।।
৯৯. আর এ জগতেও তাদের পেছনে অভিশাপ রয়েছে এবং কিয়ামতের দিনেও; অত্যন্ত জঘন্য প্রতিফল, যা তারা পেয়েছে।
১০০. এ হল জনপদসমূহের কিছু খবরাদি যা আমি তোমার নিকট বর্ণনা করলাম, তাদের কতক এখনও দাঁড়িয়ে আছে আর কতক কর্তিত ফসলের দশা প্রাপ্ত হয়েছে।
১০১. আমি তাদের প্রতি অত্যাচার করিনি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছে। বস্তুতঃ তাদের কোনোই উপকার করেনি তাদের সেই উপাস্যগুলি যাদের তারা ইবাদাত করত আল্লাহকে ছেড়ে, যখন এসে পৌঁছল তোমার পালনকর্তার হুকুম; তাদের ক্ষতি সাধন ছাড়া তারা আর কোনো কিছুই বৃদ্ধি করল না।
১০২. তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি পাকড়াও করেন কোনো জনপদকে যখন তারা যুল্মে লিপ্ত থাকে। অবশ্যই তাঁর পাকড়াও ভয়াবহ, বড়ই কঠিন।
১০৩. এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে তার জন্য যে আখেরাতের শাস্তিকে ভয় করে। এটা এমন দিন, যে দিনের জন্য সব মানুষকে একত্রিত করা হবে, এটা হাযির হওয়ার দিন।
১০৪. আমি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে বিলম্বিত করি মাত্র।
১০৫. সে দিন যখন আসবে তখন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ মুখ খুলতে পারবে না, তাদের কেউ হবে হতভাগা, আর কেউ হবে সৌভাগ্যবান।
১০৬. যারা হতভাগা হবে তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তাদের জন্য আছে হা-হুতাশ আর আর্ত চিৎকার।
১০৭. সেখানে তারা স্থায়ী হবে চিরকালের জন্য, যে পর্যন্ত আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছে করেন। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই করতে সক্ষম যা তিনি করতে চান।
১০৮. আর যারা সৌভাগ্যবান হবে, তারা জান্নাতে স্থায়ী হবে যে পর্যন্ত আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্য রকম ইচ্ছে করেন। এ হল এক অব্যাহত পুরস্কার।
১০৯. কাজেই তারা যেগুলোর ‘ইবাদাত করে সেগুলোর ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হয়ো না। তারা যেগুলোর ‘ইবাদাত করে সেগুলো তা ছাড়া আর কিছুই নয় যেগুলোর ‘ইবাদাত পূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা করত, আমি অবশ্যই তাদের প্রাপ্য অংশ তাদেরকে পূর্ণ মাত্রাতেই দেব, কোনই কমতি করা হবে না।
১১০. ইতোপূর্বে আমি মূসাকেও কিতাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তাতেও মতবিরোধ করা হয়েছিল। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি কথা যদি আগেই বলে দেয়া না হত, তাহলে তাদের মাঝে অবশ্যই মীমাংসা করে দেয়া হত, এ ব্যাপারে তারা অবশ্য সন্দেহপূর্ণ সংশয়ে পড়ে আছে।
১১১. আর যত লোকই হোক না কেন, যখন সময় হবে, তোমার প্রভু তাদের সকলেরই আমলের প্রতিদান পুরোপুরি দান করবেন। নিশ্চয় তিনি তাদের যাবতীয় কার্যকলাপের খবর রাখেন।
১১২. কাজেই তুমি ও তোমার সাথে যারা (আল্লাহর দিকে) তাওবা করেছে, সুদৃঢ় হয়ে থাক, আল্লাহ যেভাবে তোমাকে আদেশ দিয়েছেন, আর সীমালঙ্ঘন করো না। তোমরা যা কিছু কর, তিনি তা ভালভাবেই দেখেন।
১১৩. তোমরা পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে, আর তখন আল্লাহ ছাড়া কেউ তোমাদের অভিভাবক থাকবে না, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।
১১৫. তুমি ধৈর্য ধর, কারণ আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের কর্মফল কখনও বিনষ্ট করেন না।
১১৬. কাজেই, তোমাদের পূর্ববতী জাতি গুলির মধ্যে এমন সৎকর্মশীল কেন রইল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে বাধা দিত; তবে মুষ্টিমেয় লোক ছিল যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রক্ষা করেছি। আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল, যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।
১১৭. তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে কোনো জনপদ ধ্বংস করবেন এমতাবস্থায় যে, তার অধিবাসীরা সৎকর্মশীল।
১১৮. তোমার প্রতিপালক চাইলে মানুষকে অবশ্যই এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।
১১৯. তোমার পালনকর্তা যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চিরদিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার আল্লাহর কথাই পূর্ণ হল যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে ভর্তি করব।
১২০. রসূলদের যে সব সংবাদসমূহ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করলাম, এর দ্বারা আমি তোমার দিলকে মযবুত করছি, এতে তুমি প্রকৃত সত্যের জ্ঞান লাভ করবে আর ঈমানদারদের জন্য এটা উপদেশ ও স্মারক।
১২১. যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে বল, ‘তোমরা নিজেদের মত ও পথে থেকে কাজ করে যাও, আমরা (আমাদের) কাজ করছি।
১২২. আর তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম।’
১২৩. আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। সুতরাং তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর কর, আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক বে-খবর নন।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত:- মুহাম্মদ বয়কট উত্তরণের রাস্তা খুঁজছেন! পাবেন কি সামনে? পেলে কীভাবে? তা কি তার স্থিরতা আনবে? নাকি তাকে মক্কা ছাড়া করবে চিরতরে? প্রশ্ন অনেক, তবে উত্তর খু্ব সহজ! অপেক্ষায় থাকুন!
গত পর্বে করা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেলে এই সিরিজের ১৪তম পর্ব দেখুন! আর আরও বেশি জানার ইচ্ছে থাকলে অপেক্ষায় থাকুন; জানেন নিশ্চয় – অ্যালকোহল পুরাতন হলে দামী হয়! আপনাকে পাঠক হিসাবে দামী তৈরি করছি! কারণ, ভবিষ্যতে এমন কিছু কিছু বিষয় তুলে আনার ইচ্ছা আছে, যা এর আগে আপনাকে কেউ কখনও বলেনি!
অপেক্ষায় থাকুন!
(চলবে)
Category: ধর্মকারীTag: কোরানের বাণী, ছবি, রচনা
Previous Post:নামাজরঙ্গ – ৪৭
Next Post:ইছলামে নারী দিবস প্রতিদিন

Reader Interactions

Comments

  1. Arunava kar

    August 10, 2017 at 4:34 pm

    সিরাত রসুলুল্লাহের ইংরাজী অনুবাদে অাদম থেকে মুহম্মদ পর্যন্ত্য বংশলতিকা পেয়েছি। এটাকে কি ইসলামী বিবরণ হিসাবে গণ্য করা যায় না? আপনার কি বক্তব্য এই ব্যাপারে?

    Reply
  2. নামহীন

    August 11, 2017 at 11:18 am

    এই অনুবাদটি একটি পক্ষপাতমূলক অনুবাদ…!
    ইসলাম বিশেষজ্ঞগন এই বংশলতিকা স্বীকার করেন না!
    অার একটি উদাহরন টানা যেতে পারে এই বইটি নিয়ে, মক্কা বিজয়ের সময় কাবার ভেতর রেখে দেওয়া যীশু ও মেরীর ছবি রেখে দেওয়ার বর্ণনাটি তিনি এমন পরের সূত্রে গ্রহন করেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়…!

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top