হুমায়ুন আজাদের ‘আমার অবিশ্বাস’ নামের বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম বেশ আগে। ধর্মকারী তখন স্থগিতাবস্থায়। কিন্তু কিছুদূর পড়ার পরে লক্ষ্য করলাম, বইটিতে উদ্ধৃতিযোগ্য ছত্রের ছড়াছড়ি। পড়া তখনই থামিয়ে দিয়ে স্থির করলাম, ধর্মকারী আবার সচল হলে ধর্মকারীর পাঠকদের (অনেকেরই বইটা পড়া আছে, জানি, তবুও…) সঙ্গে টাটকা পাঠমুগ্ধতা ভাগাভাগি করবো। তাই পড়তে শুরু করলাম আবার। বিসমিল্যা।
৭৮.
ধর্মগুলো যুক্তি ও সততা সহ্য করে না; ধর্মের পক্ষে কোটি কোটি মিথ্যে মানুষ কয়েক হাজার বছরে বলেছে, এখনো বলছে; ধর্মের আপত্তি নেই ওই সব মিথ্যে সম্বন্ধে, বরং ওই মিথ্যেগুলোকেই মনে করা হয় ধর্ম; কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে একটি সত্যও কলা যায় না। ধর্মের প্রতিপালকেরা যতো মিথ্যে কথা বলে প্রতিদিন, শুক্রবার, রোববার, ধর্মীয় জলসায়, সাধারণ মানুষ ততো কখনো বলে না।
৭৯.
পঞ্চম শ্রেণীর বই পড়লেও যতোটা জ্ঞান হয়, ধর্মের বইগুলো পড়লে ততোটা জ্ঞানও হয় না, বরং অনেক অজ্ঞানতা জন্মে।
৮০.
বিশ্বাস ও অজ্ঞতা পরস্পরের জননী; জ্ঞান জন্মে অবিশ্বাস থেকে।
৮১.
কোনো ধর্মপণ্ডিত যদি সারাজীবন ধর্মের বই ও তার ভাষ্য পড়ে, আর কিছু পড়ে না, সে থেকে যায় পঞ্চম শ্রেণীর শিশুটির থেকেও মূর্খ। ওই শিশুটি জানে সূর্যকে কেন্দ্র ক’রে ঘুরছে পৃথিবী ও বিভিন্ন গ্রহ, কিন্তু ধর্মপণ্ডিত জানে পৃথিবীই কেন্দ্র; শিশু জানে সাত আসমান ব’লে কিছু নেই, – ওটা টলেমির ধারণা ছিলো এবং ঢুকে গিয়েছিলো ধর্মের বইয়ে, ধর্মপণ্ডিত তা জানে না; শিশু জানে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ, তার কোনো পবিত্রতা নেই, ধর্মপণ্ডিত জানে চাঁদ পবিত্র, মাস আর বছর হিসেব করার জন্যে বিধাতা এটি সৃষ্টি করেছে।
৮২.
বলা হয় যে ধর্মের বইগুলো বিধাতার বই, তাই সহজাতভাবেই শ্রেষ্ঠ; এ বই মানুষের পক্ষে লেখা অসম্ভব। তবে এগুলোর থেকে বহু উৎকৃষ্ট বই মানুষ লিখেছে এবং আরো লিখবে। এগুলোতে পুনরাবৃত্তি ও বাজে কথার শেষ নেই; এবং এমন কিছু নেই, যাকে আমরা অনুভব বা বোধ করতে পারি ঐশী বলে।
Leave a Reply