• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

দরবেশবাবা পাঁচালী

You are here: Home / চুতরাপাতা / দরবেশবাবা পাঁচালী
July 11, 2013

তিনি বাঙলাদেশের দরবেশবাবা, কেউ কেউ ভালবেসে তাকে বলে শেয়ার বাবা, আবার অনেকে বলে খেলাপী বাবা। বনেদী বংশের মানুষ, বনেদীয়ানা তার কথায়, কাজে, চালচলনে। তিনি বাসায় উর্দুতে কথা বলেন, তার পিতা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী আরবী বা উর্দু হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি এদেশের সবচাইতে ক্ষমতাশালী পরিবারের পারিবারিক বন্ধু, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ায় তার জুড়ি মেলা ভার। বাঙলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলো তার বুক পকেটে নড়াচড়া করে, পকেট টপকে বের হতে পারে না, তার সামনে সুবিধাই করতে পারে না। ময়মনসিংহ জেলের গেটে পা রেখেই তিনি জেলারকে জিজ্ঞেস করলেন, “এই জেলে কয়টি সেল রয়েছে? প্রতিটি সেলে একটি করে নতুন ফ্যান এবং রঙিন টিভি লাগাতে কত খরচ পড়বে?” এইসব হিসাব দুইঘণ্টার মধ্যে তাকে দিতে বললেন। তার এই কথা শুনে কাঁপতে কাঁপতে জেলার সাহেব তার পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, এবং সেই জেলখানাটি তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়, তার জন্য পরিণত হয় পাঁচতারা হোটেলে।

প্রতিদিন গাড়ি ভর্তি করে খাবার আসতো তার জন্য, মিনারেল ওয়াটার দিয়ে তিনি গোছল করতেন। কারাপ্রহরীরা তার প্রহরায় থাকার জন্য মারামারি করতো, তার সেলে একবার গেলেই বিপুল পরিমাণ ফলমুল এবং খাবার নিয়ে ফেরত আসা যেত যেসব ফল কারাপ্রহরীদের কাছে বেহেশতী খাবারের মতই। এইসব অব্যবস্থাপনা এবং অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার কারণে সেই জেলার ক’দিন পরে সাসপেন্ড হয়, এবং জেলার থেকে অবনতি হয়ে তিনি ডেপুটি জেলারে পরিণত হন। সাথে সাথেই তিনি দরবেশবাবার পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে কেঁদে ফেলেন। দরবেশবাবা তাকে বলেন, এই চাকরিতে কয়টাকা বেতন? যান চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আসেন। সদ্য ডেপুটি জেলার হয়ে যাওয়া সাবেক জেলার সাহেব বলেন, তাইলে স্যার খাবো কী?
দরবেশবাবা গায়েবী সুরে বলেন, তা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না, সেই চিন্তা আমার!

পরদিন চাকরি ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই একটি এপোয়েন্টমেন্ট লেটার পান ডেপুটি জেলার, বেতন ৫৫ হাজার টাকা, সাথে ফ্ল্যাট এবং গাড়িও রয়েছে। আর দরবেশ বাবাকে বিশেষ সার্ভিস দেয়া আরেক হাবিলদার পেল একটি প্রাইভেট কার। এভাবেই তিনি তার খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলেন যেখানে সেখানে, হাভাতে মেরুদণ্ডহীন বাঙালি কাড়াকাড়ি করে সেই খাবার খায় আর ধন্য ধন্য করে দরবেশ বাবার। তার নামে নানান উপকথা সৃষ্টি হয়, তার দয়া এবং মহানুভবতা, গরীবের প্রতি তার ভালবাসা জনে জনে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, গল্প গুলো আরো পাখনা মেলে। রাজনৈতিক নেতারা তার কৃপা লাভের জন্য তার বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তিনি একবার মুখ তুলে চাইলেই সব হয়ে যায়, দেশের সমস্ত মৃত পীর বাবাদের চাইতে, তাদের সমস্ত মাজার এবং খাদেমের দোয়ার চাইতে এই জিন্দাপীর অনেক বেশি লৌকিক এবং অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী!

অন্যদিকে, শেয়ার বাজারে স্বর্বস্ব হারানো অসংখ্য মানুষ সেই জেলেই ছিল। শেয়ার মার্কেটে সবকিছু হারিয়ে তারা চুরি ছিনতাইকে জীবন বাঁচাবার অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছিল, কেউ কেউ হয়ে পরেছিল মাদকাসক্ত। একজন দারুন অভাবে নিজ সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল, কারো কারো পরিবারের সদস্য অভাব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। অসংখ্য মানুষের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে যার কারণে, অসংখ্য মানুষ পথে বসেছে যার জন্য, তার চুলটি স্পর্শ করার ক্ষমতা কারো নেই। তারা জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করে, কী ভয়াবহ তাদের জীবন, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। অথচ তাদের সকল দুর্গতির কারণটি ক’দিন পরেই তার রাজনৈতিক ক্ষমতায় বের হয়ে যায় জেল থেকে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের তিনি সকাল বিকাল কেনেন এবং বিক্রি করেন, তার জন্য সর্বত্রই থাকে বিশেষ বিশেষ সুবিধা।

আধুনিক কারাগারের দর্শন হচ্ছে, আপনি জেলে গিয়ে নিজেকে শুদ্ধ মানুষ রুপে গড়ে তুলবেন, অতীতের অপরাধ এবং ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে নিজেকে নতুন ভাবে তৈরি করবেন। কিন্তু এইরকম পরিস্থিতিতে, এই ধরণের পরিবেশে একজন সাধারণ মানুষ কী শিখবে? একটা ছিনতাইকারী ছেলেকে বাসে ধরতে পেরে বীর জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলে, একজন দেহব্যবসায়ী নারীকে হাজার হাজার মানুষের সামনে দোররা মেরে হত্যা করা হয়, এক হাজার টাকার চাইতেও কম অংকের টাকা চুরির জন্য শত শত ছেলে জেলখাটছে-যারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ; আর হাজার হাজার কোটি টাকা চুরির জন্য, এই রকম অসংখ্য ছোট ছোট অপরাধী জন্ম দেয়ার জন্য এই দরবেশবাবা জেলখানায় নিজের রাজত্ব তৈরি করছে। এই দেশে আপনি যত বড় অপরাধী, তত সম্মানিত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী নেতা মন্ত্রী এমপি সকলেই আপনার কাছে তত বেশি বিনীত। আর আপনি যত ছোট অপরাধী, সকলে আপনার উপরে তত বেশি খড়গহস্ত!

সম্প্রতি এই দরবেশবাবা জামাত ইসলামির নেতাদের সাথে বৈঠক শুরু করেছেন একটি সাম্রাজ্যবাদী গাছের ছায়াতলে। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষী হিসেবে তার নাম অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। ইসলামি ধর্মনিরপেক্ষতা, মৌলবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ এখন মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে। ভাবতে ভালই লাগছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে!

[ময়মনসিংহ কারাগার থেকে আসা একজন কারা প্রহরীর কাছ থেকে শোনা; কারাগারের ডায়রি থেকে- সংশোধিত]

Category: চুতরাপাতাTag: আসিফ মহিউদ্দীন
Previous Post:শুধু চেয়েছি যুদ্ধাপরাধীমুক্ত একটা দেশ
Next Post:মুসলমানের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কোরানের সারমর্ম

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top