লিখেছেন: চৈতী আহমেদ
৯৬তে আমাদেরই ভোটে ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগ আমাকে স্বপরিবারে বাস্তহারা করেছিলো, যে কারণে আমাদের অকালে হারাতে হয়েছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। তার পরেও যতগুলি নির্বাচন হয়েছে সব কটিতে আমি এবং আমার পরিবার নৌকাতে ভোট দিয়েছি কারণ বঙ্গবন্ধর জন্য আমাদের ভালোবাসা ছিলো শর্তহীন। বিশ্বাস রেখেছি মনে, যে তার দল অন্তত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এবং ফাঁসিতে ঝোলাবে।
বিচার শুরু হলে আওয়ামী লীগের জন্য পুরোনো মায়াটা ফিরে আসতে শুরু করেছিলো, ভাবছিলাম দেশটাকে দেবার মতো তারা সময়টাই বা পেলো কতটুকু, একটা দেশকে একাট্টা করতে একটা সময়তো তাকে দিতে হবে, ভাবতে ভাবতে দেখি আমি সেই ডিম ওয়ালা হয়ে গেছি যে স্বপ্নবাজ ডিম ওয়ালা ডিমের ঝাঁকা মাথায় নিয়ে ডিম বেঁচে কি কি করবে ভাবতে থাকে তার মতো, সে ডিম বেঁচে ছাগল, ছাগল বেঁচে গরু এভাবে একটার পর একটা ব্যাবসায় আরো বেশি লাভ করে সব শেষে সেই ডিম ওয়ালা একটি ঘোড়া কিনে সেই ঘোড়ায় তার প্রেমাস্পদকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হবার জন্য যেই না ঘোড়ায় চাবুক কষিয়েছে ওমনি দেখে তার স্বপ্নপুঁজি ডিমগুলো সব মাটিতে পড়ে ফটাৎ ফট, তো আমরা শাহবাগে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং তৎপরবর্তী জামায়াত শিবির মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে দেখতেই দেখলাম আমার ডিমের খাঁচায় তা দিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম, আর আমার স্বপ্ন সম্বল আওয়ামীলীগ তাতে দিচ্ছে গরম হাওয়া যাতে হেফাজতি ডিম তাড়াতাড়ি ফোটে।
আওয়ামী মেজবানীতে ফুটলো ডিম, ডিম থেকে বেরুলো ঝাঁকে ঝাঁকে তেতুল বিচি। আমিতো পুরাই তেতুল হয়ে গেলাম! লজ্জায় আর কারো ফাঁসি চাওয়াতো দুরের কথা স্বামী পুত্রের দিকে চক্ষু তুলে তাকাইতেই পারি না লজ্জায়।সবার জিভই দেখি লোভে টুল টুল করছে।আমার মনে হয় এটাই এ যাবৎকালের আওয়ামীলীগের বড় অর্জন, দেশ জুড়ে কোটি কোটি তেতুল বৃক্ষ। জাতীয় সংসদেও ৫০টি তেতুল, বাকীদের জিভ লোল টুল টুল। থাকুক লোল টুল টুল জিভ আর ৫০ তেতুল গালাগালি চুলাচুলি নিয়ে সুখে কিন্তু আমার দাবীর কি হবে, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কি হবে না?এই আশাতেই না জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটার হয়ে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় এনেছিলাম, ফাঁসি না দিয়াই দেখি এরা তল্পিতল্পা গোটানোর তাল করছে, তারা চাইলেতো যে কয় দিন আছে এর মধ্যেই যাদের ফাঁসির রায় হয়েছে তাদেরকে ঝুলিয়ে দিয়ে নির্বাচনী ওয়াদা আংশিক হলেও পুরণ করতে পারে, কিন্তু কি শুনছি এই সব সালমান এফ রহমান আর গওহর রিজভী জামায়াতের বিভিন্ন সভায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করছে। এইটা কিসের আলামত? ফাঁসির আলামততো দেখি না। আরে বেটা আত্মহত্যা করবি কর পুরা জাতিকে নিয়ে কেউ আত্মহত্যা করে? সিটিতে নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছো ঠিক আছে তাই বলে এইটা কিছু হলো?
তোমার নৌকা তুমি যা খুশি কর, শুধু বলি এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের একজনেরও অন্তত ফাঁসি না হলে আর কে কি করবে জানি না আমি অন্তত আর এই জন্মে আওয়ামীলীগকে ভোট দিবো না এইটা নিশ্চিত। তুমি আমার পঁচিশ বছরের আশৈশবের স্মৃতির বাড়িতে ঝুলিয়ে দিয়েছো আওয়ামীলীগের সাইনর্বোড, তবু তোমাকেই আমি ভোট দিয়েছি কারণ তোমার জন্য আমার ভালোবাসা ছিলো এক রকম শর্তহীন। আমার মাথা গোঁজার ঠাই কেড়ে নিয়েছো টু শব্দ করিনি, শুধু চেয়েছি যুদ্ধাপরাধী মুক্ত একটা দেশ আর তুমি কিনা গোপন আঁতাতে সেই দেশ তুলে দিলে শফির মতো একটা লুলের হাতে? একশো একটা দেশোদ্রোহী আর ধর্মহীন কথা বলে শফিলুল হেলিকপ্টারে চড়ে যায় নিজের বাড়ি আর যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চেয়ে জামায়াত শিবির মুক্ত দেশ চেয়ে ব্লগাররা নাস্তিকতার অজুহাতে যায় জেলে। আমার কোথায় ভুল ছিলো সেলুকাস!
Leave a Reply