বাংলাদেশে এখনো যদি সেই আগের মত মুসলমান আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুপাত ৩:২ থাকত, তাহলে একটা কথা ছিল। বুঝতাম এই ভোটগুলার বেশিরভাগ যেত লীগের ঘরে। আর সেই হিসাবে লীগের আজীবন ক্ষমতায় থাকা কোন ভাবেই ঠেকানো যেত না। এখন সেই অনুপাত হয়তো ১০:১-এর মত বা তারও কম। আবার এই ১০% ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সবই যে লীগের ভোটব্যাংক, তাও নয়। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনেক জায়গা আছে। তা থেকে বোঝা যায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সব ভোট লীগের নয়।
এছাড়াও দিন দিন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। লীগের আমলেও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা যথেষ্ট প্রোটেকশন পাচ্ছে না। সাম্প্রতিক ফেসবুকে ছবি শেয়ার এবং রাজাকারদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর ঘটে যাওয়া সহিংসতার পিছনে লীগের হাত তো ছিলই, তার উপর আবার একটা ঘটনারও তেমন সুবিচার হয় নাই। এতে নীরবে হলেও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভোট কিছুটা হলেও ভাগ হয়ে যাবে এবং অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে। তবুও এই ব্যাপারটা অন্যান্য দলগুলো এবং তাদের সমর্থকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য কোনদিনই হয় নাই বা হবেও না।
বিশেষ করে বিএনপি বা ১৮+ দলের কট্টর অংশটির ধারণা, এই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভোটই লীগ আর বিএনপির মধ্যে বড় মার্জিন করে দিচ্ছে। তারা এই মার্জিন কমিয়ে আনতে বা নিশ্চিহ্ন করে দিতেই ক্ষমতায় এসেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর নারকীয় তান্ডব চালায় যাতে ভয়ে এরা সবাই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
সিটি নির্বাচনে লীগের ভরডুবিতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই ভয় আবার জেকে বসেছে। বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে এই ঘটনা আবার ঘটবে, সে কথা জোর দিয়েই বলা যায়। এরা চাচ্ছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভোট যেন কোন ভাবেই তাদের ক্ষমতায় আসার পথে বাঁধা সৃষ্টি হয়ে না থাকে। ১৮+ দলের কট্টরপন্থীরা এরকমই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে।
এমন কিছু হবে ধরে নিয়েই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের এই সিটি নির্বাচনের পর থেকে দেশ ত্যাগ করতে শুরু করেছে। যেখানে তাদের অবস্থান একেবারেই নগণ্য সেখানে তো বটেই, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো থেকেও তাদের দেশ ত্যাগের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
খেয়াল করে দেখলে একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয়, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় সহিংসতার শিকার বেশি হয় লীগের হাতে। আর ১৮+ দলের হাতে যখন সহিংসতার স্বীকার হয়, সেটা হয় ভোটের হিসাবে। এছাড়া এদের জায়গা-জমি, সম্পত্তির উপর লোভ বিএনপির চাইতে লীগেরই বেশী। দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অবস্থান কিন্তু লীগ প্রধান অঞ্চলগুলোতেই বেশি। আর সেখানেই তারা অনিরাপত্তায় ভোগে বেশি এবং সেখান থেকেই তাদের দেশ ত্যাগের হার বেশি। সেসব এলাকায় বিএনপি খারাপ কিছু করলেও লীগের সহায়তা পাওয়া যায় না, বরং তলে তলে খুশিই হয় ধর্মীয় দিক থেকে। আর এরা চলে যাওয়ার সুযোগেই সেসব এলাকায় বিএনপি দিন দিন লীগের সাথে ভোটের পার্থক্য কমিয়ে আনছে।
Leave a Reply