মার্ক টোয়েন নিজের জন্ম প্রসঙ্গে স্বভাবসুলভ রসিকতার ধরনে লিখেছিলেন: আমি জন্মেছিলাম ১৮৩৫ সালে। সেই সময় আমাদের গ্রামে ছিলো একশোজন মানুষ এবং আমি সেই জনসংখ্যাকে শতকরা এক ভাগ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
কথাটা মনে পড়লো প্রথম আলোর “সারা বিশ্ব” পাতায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা একটি সংবাদ দেখে। শিরোনাম: “ব্রিটেনে ইসলাম গ্রহণের হার এক দশকে দ্বিগুণ।” তথ্য উপস্থাপনার ধরনটি লক্ষণীয়। ১ যখন ২ হয়, সেটি দ্বিগুণ, আবার ১ কোটি ২ কোটিতে পরিণত হলে সেটিও দ্বিগুণ। আর তাই উপরোক্ত খবরের শিরোনামে “শতকরা একশো ভাগ বৃদ্ধি” বললে তা আরও বেশি গুরুত্ববহ মনে হতো।
ওপরের খবরটির বিশ্লেষণ পড়লে ইছলামী হিসেবের ভেতরের শুভঙ্করের ফাঁকটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। খবরে দাবি করা হয়েছে, ব্রিটেনে প্রতি বছর গড়ে ৫২০০ জন ইছলাম গ্রহণ করেছে।
এখন দেখা যাক, সংখ্যাটি কীভাবে পাওয়া গেছে। এক ইছলামী চিন্তাচৌবাচ্চা, মানে থিংক ট্যাংক, (লক্ষ্য করুন, কোনও নিরপেক্ষ সংস্থা নয়) লন্ডনের মসজিদগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তাতে দেখা যায়, গত বারো মাসে ১৪০০ জন ইছলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। একে তো সংখ্যাটি পরীক্ষিত নয়, তার ওপরে সেটি কেমন জানি সন্দেহজাগানিয়া। ঠিক ১৪০০? ১৩৯২ বা ১৪৩৮ নয়? আচ্ছা, তবু না হয় মেনে নিলাম। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ৫২০০ – পুরো ব্রিটেনের ক্ষেত্রে আরোপিত এই সংখ্যাটি কোনও জরিপ বা হিসেবের ফল নয়। স্রেফ কল্পনা করে নেয়া হয়েছে লন্ডনের ১৪০০-কে ভিত্তি হিসেবে ধরে। কীভাবে? তা তাদের আল্যা জানে!
আর এ কথাও সত্য, ইসলাম গ্রহণকারীদের একটি বড়ো অংশ মোছলমান ভাই-বেরাদরদের অমুছলিম স্ত্রী, যারা বিয়ের সময় মসজিদে গিয়ে “লা ইলাহা” পড়ে নামেমাত্র মুসলিম হয়। এছাড়া জেলখানার কয়েদিদের মধ্যেও ধর্মান্তরিত হয়ে নূরের পথে আসে অনেকে। তাদের অনেককেই বলপ্রয়োগ করে বা ভীতিপ্রদর্শন করে মুসলমান বানানো হয়। কেউ মুসলমান হয় আলাদা সুবিধালাভের জন্য। সাম্প্রতিককম এক খবর পড়ুন: এক সিরিয়াল কিলার ইসলাম গ্রহণ করেছে কারি খাবার লোভে, কারণ জেলখানায় মুছলিমদের জন্য কারি সরবরাহ করা হয়।
পক্ষান্তরে, ইছলামত্যাগীদের সংখ্যা বাড়ছে আশাব্যঞ্জক গতিতে, যদিও সে কথা মূলধারার পত্রিকায় আসে না বড়ো একটা। অবশ্য তাদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা দুষ্কর, কারণ তাদের অধিকংশই সরব এবং প্রকাশ্য নয়। ইছলাম ত্যাগকারীকে হত্যার বিধান ইসলামে আছে জেনেও প্রাণের ঝুঁকি নিতে চাইবে ক’জন? তবু দুঃসাহসী কিছু প্রাক্তন মুছলমান নিজেদের পরিচয় গোপন রাখছেন না। প্রবণতাটি শুভ।
Leave a Reply