গীতা
জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন “পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে…”; পঙ্কজ উদাস গেয়েছেন, “চোখ তার চোরাবালি…”; ‘মৌসুমী’ মুভির সেই গান–“…যার মেঘ কালো চুল, হরিণীর চোখ…”; কিংবা, “বন্ধুর দুইটা চোখ যেন দুই নলা বন্দুক…”, আর ওদিকে গীতায় অর্জুন কৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখতে গিয়ে দেখল, চন্দ্র এবং সূর্য কৃষ্ণ অর্থাত, সেই বিশ্বরূপের দুই চোখ। বিশ্বরূপের ‘রূপের’ বর্ণনা পড়লে এই তুলনাকে রূপক নয়, আক্ষরিকই মনে হবে। অর্থাত, কৃষ্ণ যখন বিশ্বরূপ ধারণ করল, তখন তার এক চোখ সূর্য, আরেক চোখ চন্দ্র হয়ে গেছিল। আর যদি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাহলেও এ ধরনের উপমা দেয়ার ব্যাপারটি ভুল।
চোখের মত একই জিনিসের তুলনা দিতে গিয়ে কেউ এমন ভিন্ন ভিন্ন দুইটি জিনিসের সাথে তুলনা দেবে না যাদের মধ্যে কোনো মিলই থাকবে না। সূর্য হলো নক্ষত্র–যার নিজস্ব আলো আছে, আমাদের এই সৌরজগতের কেন্দ্র। আর চন্দ্র হলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরা পৃথিবী নামক একটি গ্রহের উপগ্রহ মাত্র, যার নিজস্ব কোনো আলো নেই। অর্জুন যে দুই চোখকে সূর্য আর চন্দ্র হিসেবে দেখল, তাতে বিষয়টা ওই চোখ-দৃষ্টি-আলো–এই হিসেবে আসছে হয়তো; সূর্য যেমন আলো দেয়, তেমনি চন্দ্রকেও নক্ষত্রের মত আলো-দানকারী ধরে চন্দ্র-সূর্য এক করে ফেলছে। আর সূর্যের চেয়েও অনেকগুণ বড় বড় নক্ষত্র আছে। যেখানে এই বিশ্বজগত বিশ্বরূপের মুখের মধ্যে, সেখানে চন্দ্র-সূর্য সেই বিশ্বরূপের চোখ হওয়াটা বিশাল হাস্যকর রকমের ভুল।
“গীতাপাঠ – ০১” পোস্টে অনুবাদ নিয়ে অনেকে পিছলাবে জেনে অনেকগুলো অনুবাদের স্নাপশট দিয়েছিলাম। আজ আশা করি অনুবাদ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, তাই আগের মত অনেকগুলো অনুবাদ না দিয়ে অল্প কয়েকটি দিলাম (যাদের ঘরে গীতা আছে, তারাও দেখে নিজেদের গীতা থেকে দেখে নিতে পারেন একাদশ অধ্যায়ের ১৯ নাম্বার শ্লোক)–
অমূল্যপদ চট্টোপাধ্যায়–
বাল-গঙ্গাধর তিলক-এর “শ্রীমদ্ভগবদ্গীতারহস্য অথবা কর্ম্মযোগশাস্ত্র”, অনুবাদ করেছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর–
চন্দকুমার দেবশর্ম্মা চট্টোপাধ্যায়–
উত্তমানন্দ স্বামী কর্তৃক ব্যাখ্যাত, স্বামী ধ্রুবানন্দ গিরি কর্তৃক সম্পাদিত–
গিরিন্দ্রশেখর বসু–
কালীপ্রসন্ন সরকার-
কৃষ্ণানন্দ স্বামী–
এখন কিভাবে পিছলাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না? কিছু পিছলামির উপকরণ দিয়ে দিচ্ছি–
১) ওটা অর্জুনের দেখার ভুল; গীতার ভুল নয়।
২) অনুবাদে ভুল আছে।
৩) রূপক অর্থে চন্দ্র-সূর্য ব্যবহার করা হয়েছে।
৪) মূল সংস্কৃত পড়তে হবে।
৫) বোঝার ভুল আছে।
৬) অর্জুনের দিব্যদৃষ্টিতে ধৃতরাষ্ট্রের নজর পড়েছিল, তাই অর্জুন বিশ্বরূপের চোখ দেখতে ভুল করেছে।
৭) মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়ে হিন্দু ধর্ম বোঝা যাবে না।
৮) গীতার শ্লোক পড়ে এটম বোম আবিষ্কার করা হয়েছে।
৯) কত বড় বড় বৈজ্ঞানিক গীতাকে সম্মান করে, আর আপনি আইছেন গীতার ভুল ধরতে!
১০) গীতায় ভুল থাকলে গান্ধী কেন হাতে গীতা নিয়ে ঘুরত?
১১) বড় বড় নাস্তিক গেল তল, পাল্লা বলে কত জল!
১২) নিজের ধর্মে কী কী ভুল আছে, সেইটা আগে জানেন।
১৩) টুট…টুট…টুট…
গ্রন্থকীট
এরা সারাজীবন পিছলিয়েই যাবে