আমাদের ব্যবহারিক ও সাংস্কৃতিক দৈনন্দিন জীবনের মূল অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষাভাষী আদি কৌমসমাজের মধ্যে। সেই হেতু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রাচীনতম আভাস এই দুই ভাষার এমন সব শব্দের মধ্যে পাওয়া যাইবে যে-সব শব্দ ও শব্দ-নির্দিষ্ট বস্তু আজও আমাদের মধ্যে কোনো না কোনো রূপে বর্তমান।…আমাদের আহার-বিহার, বসন-ভূষণ ইত্যাদি সম্বন্ধে কিছু ইঙ্গিত এই সুদীর্ঘ শব্দেতিহাসের মধ্যে পাওয়া যাইবে। এই হিসাবে এই শব্দগুলিই আমাদের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক উপাদান এবং নির্ভরযোগ্য উপদানও বটে। প্রাচীন বৌদ্ধ ও জৈন-সাহিত্যেও কিছু পরোক্ষ উপাদান পাওয়া যায়।–[“বাঙালীর ইতিহাস – আদি পর্ব”, নীহার রঞ্জন রায়]
নীহার রঞ্জন রায় আরো বলেন, “সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য এবং বিস্তৃত খবর পাওয়া যায় সমসাময়িক সংস্কৃত ও প্রাকৃত অপভ্রংশ সাহিত্যে। বাংলার সুবিস্তৃত স্মৃতি-সাহিত্য, বৃহদ্ধর্ম ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, চর্যাগীতিমালা, দোহাকোষ, সদুক্তিকর্ণামৃত-ধৃত কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন শ্লোক, প্রাকৃতপৈঙ্গলের কিছু কিছু শ্লোক, রামচরিত ও পবনদূতের মতন কাব্য প্রভৃতি গ্রন্থে সমসাময়িক বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের নানা তথ্য নানা উপলক্ষ্যে ধরা পড়িয়াছে।”
পোশাক-আশাক
সমসাময়িক কালের পাথর আর ধাতু নির্মিত দেবদেবীর মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক–এসব দেখেও বোঝা যায় তখনকার দিনের বেশভূষা কেমন ছিল। অনেক মূর্তিই দেখবেন নিরাবরন, তবে শরীরে অলংকার আছে…”কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে”–সরস্বতীর বর্ণনা।
‘প্রাচীন বাংলার গৌরব’ বইটিতে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলার যে গৌরবগুলির লিস্ট করেছেন চার নাম্বারে আছে বাকলের কাপড়। সেখানে উল্লেখ আছে, প্রথম অবস্থায় বাংলাদেশীরা পাতা পরত। তারপর বাকল। গাছের ছাল পিটিয়া কাপড়ের মত নরম করে পরত, আর কাঁধের উপর উত্তরীয়/চাদর। এর পরে বাকল হতে সুতা বের করে কাপড় বুনত; শণ, পাট, ধঞ্চে, আতসী গাছের ছাল হতে সুতা বের করত। এগুলো দিয়ে কাপড় বুনত। বাকল হতে যে কাপড় হত সেটার নাম ছিল ‘ক্ষৌম’। এখনো হিন্দুদের অনেক অনুষ্ঠানে পবিত্রজ্ঞানে ক্ষৌমবস্ত্র পরিধানের চল আছে।
ওদিকে নীহার রঞ্জন রায় আরেক শ্রেণীর বাঙালীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। এরা দশম-একাদশ শতকে অনেক বাঙালী কাশ্মীরে যেতেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এদের প্রকৃতি ও ব্যবহার ছিল রূঢ় এবং অমার্জিত এবং অত্যন্ত ছুঁৎমার্গী; দেহ ক্ষীণ, কঙ্কালমাত্র সার। কাশ্মীরি সংস্কৃতি উচ্চারণ মানদণ্ডে এদের উচ্চারণ শুদ্ধ হত না। ধীরে ধীরে পথ চলত, এদিক ওদিক মাথা দোলাত, হাঁটার সময় জুতায় মচমচ শব্দ করে হাঁটত, আর মাঝে মাঝেই আয়নায় নিজের চেহারা দেখত। প্রচণ্ড কৃপণ হত, তবে কেউ যদি তোষামোদ করত তবে তাদেরকে পছন্দ করত। যত যাই হোক, বাঙালী তো মূলত চণ্ডাল, তাই রাগটাও সেই চণ্ডালরাগ! একটু তর্কাতর্কি বা দ্বিমত বা ঝগড়া হলেই হাতাহাতি মারামারি থেকে শুরু করে ছুরি চালাতেও দ্বিধা করত না। দোকানে দামাদামি করে দোকানদারদের বিরক্ত করত। ওদিকে আবার পরিচয় দেয়ার সময় নিজেদেরকে উচ্চবংশীয় জমিদার টাইপের ঠাকুর বলে পরিচয় দিত।
প্রাচীন বাঙালীদের দেহবর্ণ ছিল কালো, তবে রাজপরিবার এবং কিছু অভিজাত পরিবারের নরনারীদের দেহবর্ণ অনেক সময় গৌর হত।
পোশাক নিয়ে নীহার রঞ্জন রায় আরো অনেক তথ্য হাজির করেছেন। আদিমকালে সেলাই করা কাপড় ছিল না। সেলাইবিহীন একবস্ত্র পরাটাই ছিল রীতি। সেলাই করা জামাকাপড় পরের দিকে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বাঙালীদের মধ্যে আসে। পুরুষেরা ধুতি, মেয়েরা শাড়ি। অবস্থাসম্পন্ন হলে পুরুষেরা গায়ে এক টুকরা কাপড় উত্তরীয় হিসাবে, এবং মেয়েরা ওড়না হিসাবে ব্যবহার করত। আবার দরকার পড়লে এই ওড়না দিয়েই ঘোমটা দিত। গরীবেরা এক বস্ত্র পরত। তার আঁচল দিয়ে ঘোমটা দিত দরকার হলে। তবে এই কাপড় বা ধুতি ছিল অনেক ছোট। হাঁটুর উপর পর্যন্ত ঢাকা পড়ত। ধুতির মাঝখানটা কোমরে জড়িয়ে দুই দিক টেনে কাছা দিত, অনেকটা বর্তমান কালে কাজ বা গোসলের সময় গামছা যেভাবে পরে অনেকে।
নারীদেরও প্রায়ই একই রকম। তবে প্রস্থ পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। তবে কাছা দিত না। এক বা একাধিক প্যাঁচে কোমরে গুজে পরত। দেহের উপরের অংশ অনাবৃত থাকত। যারা খুব ধনী এবং হাল-ফ্যাশনের ছিল তারা উত্তর-পশ্চিমা কালচারের দেখাদেখি এক টুকরো কাপড় দিয়ে স্তন ঢেকে রাখত। পরের দিকে মেয়েদের কাপড়ে নানাপ্রকার লতাপাতা, ফুল, এবং জ্যামিতিক নকশার প্রচলন হয়, যা মূলত উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে আসে।
এখানে উল্লেখ্য, নারীদের দেহের উপরিভাগ অনাবৃত রাখার ঐতিহ্য শুধু প্রাচীন বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটা সমস্ত প্রাচীন আদি অষ্ট্রেলীয়-পলিনেশিয়-মেলানেশিয় নরগোষ্ঠীর মধ্যেই প্রচলিত ছিল। ইন্দোনেশিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনেক দ্বীপে সেই অভ্যাস ও ঐতিহ্যের অবশেষ এখনও বিদ্যমান।
ওদিকে আবার বিশেষ পেশার লোকদের জন্য আবার আলাদা আলাদা রীতি ছিল। নর্তকী নারীরা পায়ের কণ্ঠা পর্যন্ত বিলম্বিত আঁটসাঁট পাজামা পরত, আর গলায় দীর্ঘ ওড়না ঝুলিয়ে দিত যা আবার নাচের সময় বাতাসে উড়ত।
সাধু-সন্ন্যাসী আর গ্রামের শ্রমিক সমাজ পরত নেংটি।
সৈনিক ও মল্লবীরেরা পরত হাঁটু পর্যন্ত আঁট পাজামা। দিন-মজুরেরাও অনেক সময় কাজের সুবিধার জন্য এইরকম পোশাক পরত।
শিশুরা হাঁটু পর্যন্ত ধুতি নয়তো আঁট পাজামা।
মাথা আজকের মত বরাবরই নিরাবরণ ছিল। মেয়েরা নানা কৌশলে চুল বাঁধত। পুরুষেরাও লম্বা বাবড়ি চুল রাখত। সবারই প্রায় কুঞ্চিত চুল ছিল, যা থোকায় থোকায় কাঁধের উপর ঝুলত। কেউ কেউ আবার মাথার উপরে প্যাচানো ঝুঁটি বাঁধত। নারীরাও ঘাড়ের উপর খোপা বাঁধত, কেউ কেউ পিছনে এলিয়ে দিত। বেণী করলে শেষাংশ থাকত শিখার মত মুক্ত।
সাধু-সন্ন্যাসীরা লম্বা জটা দুই ধাপে মাথার উপর জড়িয়ে নিত। শিশুদের চুল তিনটি ‘কাকপক্ষ’ গুচ্ছে মাথার উপর বাঁধা থাকত।
যোদ্ধা, প্রহরীরা এমন ফিতাবিহীন চামড়ার পাদুকা ব্যবহার করত যা পায়ের কণ্ঠা পর্যন্ত ঢাকা পড়ে। সাধারণেরা চামড়ার পাদুকা ব্যবহার না করলেও ধনীরা কাঠের পাদুকা ব্যবহার করত।
বাঁশের লাঠি এবং ছাতার ব্যবহার ছিল।
সধবা নারীরা পরত কপালে কাজলের টিপ আর সিঁথিতে সিঁদুরের রেখা; পায়ে লাক্ষারসের আলতা, ঠোঁটে সিঁদুর, শরীরে এবং মুখে প্রসাধন হিসাবে চন্দনের গুড়া ও চন্দনের পঙ্ক, মৃগনাভি/কস্তুরী, জাফরান ব্যবহার করত। বাৎস্যায়ণ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, বাঙালী পুরুষেরা হাতের নখ বড় রাখত, এবং যুবতীদের মনোরঞ্জন করার জন্য নখে রঙ লাগাত। তবে মেয়েরা নখে রঙ লাগাত কিনা, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না গেলেও চোখে কাজল লাগানোর ইঙ্গিত আছে। ঠোঁটে আলতা, গলায় ফুলের মালা আর খোঁপায় ফুল গুঁজে দেয়া ছিল তরুণীদের বিলাস-প্রসাধনের অঙ্গ। বুকের বসন স্থানচ্যুত হয়ে গেলে উচ্চস্তরের মেয়েরা সেই ফুলের মালা দিয়ে বক্ষ ঢাকিত। আর বিধবা হলে সিঁথির সিঁদুর মুছে যেত।
প্রাচীন সমাজে নারী-পুরুষেরা প্রায় একই রকম কিছু অলংকার পরত। যেমন–কানের দুল, হাতের আংটি, গলার হার, বলয়, কেয়ূর, মেখলা ইত্যাদি। নারীরা সবাই শাঁখার চুড়ি ব্যবহার করলেও এটা বিবাহিতা নারীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ছিল।
এখানে উল্লেখ্য, এই বেশভূষা, প্রসাধন, অলংকার–এগুলো সবই ধীরে ধীরে উত্তর ভারতের আদর্শ মেনেই পরা হত।
খাদ্য
নীহার রঞ্জন রায়ের “বাঙালীর ইতিহাস – আদি পর্ব”তে দেখিয়েছেন যে বিদ্যাপতি বাংলাদেশকে “আজ্যসার গৌড়” বলতেন। আজ্য মানে ঘি। চতুর্দশ শতকের অপভ্রংশ ভাষায় রচিত প্রাকৃত-পৈঙ্গল-গ্রন্থের একটি পদে প্রাকৃত বাঙালীসুলভ খাবারের বর্ণনা আছে–কলাপাতায় ভাত ও নালিতা (পাট) শাক এবং মৌরলা মাছের সঙ্গে ঘি এবং দুধ। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতে এলাচ, লবঙ্গর পাশাপাশি সরিষার প্রাচুর্যতার কথা আছে। তাতে বোঝা যায়, তেলের যোগান আসত সরিষা থেকে। অর্থাৎ খাবার বলতে প্রধান ছিল–ভাত, মাছ, শাক, দুধ, ঘি আর সরিষার তেল। ধনী লোকদের এবং সামাজিক ভোজে পায়েস ছিল উল্লেখযোগ্য। শাক, সবজী-তরকারি ছিল গরীব ও গ্রাম্য লোকদের প্রধান খাবার। তবে ডালের কথা প্রাচীনকালে কোথাও পাওয়া যায় না।
বিবাহভোজে বর্তমানকালের মতই তখনও বাড়াবাড়ি রকমের আয়োজন হত। দই ও সরিষা দিয়ে ঝালযুক্ত তরকারি; হরিণ, ছাগ এবং পক্ষীর মাংস, মাছ, মসলাযুক্ত তরকারি, দই, পায়েস, ক্ষীর, পান-সুপারি।
বেগুন, লাউ, কুমড়া ঝিঙ্গে, কাঁকরুল, কচু, আখ, তেঁতুল, কলা–এগুলা আদি অষ্ট্রেলিয় অষ্ট্রিক ভাষাভাষীদের কাছ থেকে পাওয়া।
আলু আসছে মধ্যযুগে, পর্তুগীজদের কাছ থেকে।
প্রাচীন বাংলা মদের নাম ছিল সারা ভারতে। ভাত, গম, গুড়, মধু, আখ ও তালের রস গেঁজিয়ে মদ বানানো হত। বৌদ্ধদের চর্যাগীতিতে মদের দোকানের কথাও উল্লেখ আছে।
বিনোদন-খেলাধূলা
ধনীদের প্রধান বিনোদন ছিল শিকার করা। বিশেষ করে হরিণ শিকার। আবার অনেক লোকের পেশাই ছিল মাছ ও পশুপাখি শিকার করা, বিশেষ করে আদিবাসী কৌম-সমাজের।
কুস্তি, মল্লযুদ্ধসহ নানা প্রকার শারীর ক্রিয়া ছিল সাধারণ লোকদের প্রধান খেলাধূলা। মেয়েরা জলক্রিড়া ও উদ্যান-রচনা করত। এছাড়া বর্ষাকালে সাধারণ লোকেরা, বিশেষ করে মেয়েরা, ঘরে বসে গুঁটি বা ঘুণ্টিখেলা, বাঘবন্দী, ষোলঘর, দশপঁচিশ, আড়াইঘর প্রভৃতি খেলা খেলত। ওদিকে পাশা ও দাবা খেলার প্রচলন ছিল বড় বড় অনুষ্টানে, যেমন বিয়ের অনুষ্ঠান। রাজ-পরিবার ও অভিজাত শ্রেণীতে হাতি ও ঘোড়ার খেলা সুপ্রচলিত ছিল।
নাচ-গান করার জন্য আলাদা একটা শ্রেণীই ছিল–পুরাণ মতে এরা নটবর্ণ। উচ্চবর্ণের অনেকেও শখ করে নাচ-গান করতেন।
বাদ্যযন্ত্র ছিল কাঁশর, করতাল, ঢাক, বীণা, বাঁশি, মৃদঙ্গ, মৃৎভাণ্ড প্রভৃতি। লাউয়ের খোলা আর বাঁশের ডাঁটে তার লাগিয়ে একতারা বানিয়ে বৈরাগী বেশে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো লোকেরও অভাব ছিল না।
বাড়িঘর
রাজপ্রাসাদসহ অভিজাত নগরবাসীদের বাড়িঘর ইটকাঠের তৈরী হত। গ্রামের দিকে এসব ছিল না। সেখানে ছিল মাটি, খড়, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদির তৈরী বাড়ি। চর্যাগীতিতে বাঁশের চাঁচারীর বেড়ার উল্লেখ আছে। খুব গরীব ও শ্রমিকশ্রেণীদের জন্য কুঁড়েঘর।
বিত্তবানেরা সোনা ও রূপার তৈরী থালা-বাসন ব্যবহার করিতেন। মধ্যবিত্তরা কাঁসার, আর নিম্নবিত্তরা মাটির পাত্র।
বর্ষাকালে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো ছিল।
জীবনচিত্র
বিয়েতে যৌতুক ব্যবস্থা ছিল। যৌতুকের লোভে উচ্চবর্ণের লোকেরা নিচুবর্ণের মেয়েও বিয়ে করত। (বর্ণশঙ্কর বলে একটা ব্যাপার আছে, যাদের বাপ-মা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের হয়। বলা হয়ে থাকে, বাঙালীরা প্রায় সবাই কমবেশি বর্ণশঙ্কর জাত। ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, এই জিনিসটার ব্যাপক প্রচলনের পেছনে ঐ যৌতুকের লোভের অনেকখানি ভূমিকা আছে।)
সাধারণ দরিদ্র মেয়েরা ঘরের কাজের পাশাপাশি মাঠে-ঘাটেও শ্রম দিত, হাট-বাজারে যেত, সওদা-কেনাবেচা করিত।
বাংলাদেশে উত্তর ভারতীয় ধনতন্ত্র ও নগর-সভ্যতার ঢেউ লাগতে শুরু করে খ্রিষ্টীয় ৩য়-৪র্থ শতকের দিকে। ধীরে ধীরে উত্তর ভারতের বাৎস্যায়নীয় নগরাদর্শ বাংলার নগর সমাজ গ্রহণ করতে শুরু করে। তখনকার বাঙালীদের কামলীলার কথা বাৎস্যায়ন বলে গেছেন। রাজার স্ত্রী-কন্যা থেকে শুরু করে অভিজাত শ্রেণীর নারীরা ব্রাহ্মণ, রাজকর্মচারী, দাস-ভৃত্যদের সঙ্গে ‘কাম-ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হতে শুরু করে। এর পর থেকে প্রাচীন বাঙালী সমাজ তো বটেই, বর্তমান বাঙালীরাও আর কাম-বাসনায় সংযম অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে পারে নাই। যা হোক, এর পরেই বিত্তবা্নদের ঘরে দাসী রাখার প্রথা শুরু হয়। অনেকে বলেন, দাসী রাখা হত শুধু কামচরিতার্থতার জন্য। দাসী বেচা-কেনারও চল শুরু হয়। এর উপর ছিল আবার দেবদাসী প্রথা যার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় অষ্টম শতাব্দীর দিকে।
এরপরে বাঙালী সমাজে বর্ণপ্রথার আগমন, জাত-পাতের সৃষ্টি এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা যায়। তবে সেটা করতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আপাতত এখানেই শেষ করছি।
Leave a Reply