প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বপুরুষেরা ধর্মপ্রচার করতে বাংলাদেশে এসেছিল, এটা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বীর উত্তম খাজা নিজামুদ্দিন মিলনায়তনে স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলে আবার বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। আবার বলছি, কেননা এ ধরনের প্রচারণা নতুন কিছু নয়। ইলেকশনের আগেও প্রচারণা দেখা গেছিল।
সিরাতগ্রন্থে মহানবির যেমন ফ্যামিলি-ট্রি পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় তিনি প্রথম পুরুষ স্বয়ং আদমের বংশধর। সেই একই কায়দায় ভার্চুয়াল জগতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এরকম প্রচারণা অনেক হয়েছে। সেখানে রীতিমত বঙ্গবন্ধুর চৌদ্দপুরুষের নাম-ধামসহ ফ্যামিলি-ট্রির লিস্ট ফেবুতে ফেরি হইতে দেখা গেছে এবং সেখানে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয়েছিল নবির বংশধর হিসেবে।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকের এক ইসলামিস্টের একটা স্ক্রীনশট দিছিলাম, সে দাবী করছিল সে অরজিনালি নবির বংশধর। দুইদিন আগে আরেক ইসলামিস্ট সেই একই কথা বলল, সে সৈয়দ বংশের পোলা, আর সৈয়দরা সরাসরি নবির বীর্যজাত। নবির ৩০ জন পুরুষের সমান ক্ষমতার কথা শোনা যায়, কিন্তু তার নিজের বীর্য ছিল, এমন কথা কোথাও পাওয়া যায় না। এই দুইজনকে বলছিলাম তারা কিভাবে নবির বংশধর, তার একটা বিস্তারিত বর্ণনা দিতে। নবি-মারিয়ার বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছি, তেমনি এদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে পোস্টেরও অপেক্ষায়। যাক, এটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। আসল কথায় ফেরা যাক—
এই দেশে কে কতবড় মুসলমান, সেইটা প্রচার করতে সবাই মরিয়া। প্রধানমন্ত্রী বলে কথা নয়, দেশের প্রতিটা মুসলমানকে জিজ্ঞেস করলেও বলবে তাদের পূর্বপুরুষ সাতশ আটশ বছর আগে আরব থেকে এই বাংলাদেশে এসেছিল ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে। তার মানে এরা কেউই বাঙালী না, এরা জাতিতে আরব। তাহলে বাঙালী কারা?
তো আরব থেকে আসা মুসলমানদের পূর্বপুরুষরা আটশ বছর ধরে এই বঙ্গে ইসলামের প্রচারণা চালিয়েছে। তারপর এখন ১ আনায় নেমে গেলেও এই কয়েক দশক আগেও তথ্যে দেখা যায় এদেশে ৬আনার বেশি লোক হিন্দু ছিল। তাহলে এরাই শুধু বাঙালী?
আবার শুনি হিন্দুদেরও অনেকে ইসলাম গ্রহণ করছে, তাইলে সেইসব হিন্দুরা এবং হিন্দুদের পূর্বপুরুষরা এই দেশে কোথা থেকে এসেছিল? হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া সেই সব হিন্দুদের (পরবর্তীতে মুসলমান) জাতির পিতাও কি ইব্রাহিম? আরকেটু খুলে বলি, রাম-শ্যাম দুইভাই, হিন্দু। শ্যাম ইসলাম গ্রহন করে রহিম নাম নিল। এখন এই রহিমের জাতির পিতা কে হবে? আর হিন্দু রয়ে যাওয়া রামের জাতির পিতাই বা কে?
সেই সব মুসলমানরা আরো বলে যে আগে এই বাংলাদেশে কিছুই ছিল না। বহিরাগত মুসলমানরাই জঙ্গল কেটে এই বাংলাদেশ বা্নিয়েছে, সুলতানী আমলে বাংলা ভাষার জন্ম দিছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা আটশ বছর আগের এই দেশের ইতিহাস বেমালুম চেপে যায়। এদের কাছে বাংলার ইতিহাস শুরুই হয় বখতিয়ারের ঘোড়ার বীর্য থেকে। আর ইয়ে মানে তাহলে আরব থেকা মুসলমানরা এই দেশে এসে জঙ্গলের গাছ-পালার কাছে ইসলাম ধর্ম প্রচার করছিল? গাছপালার কাছে ইসলাম প্রচার করা সেইরাম বুদ্ধিমান আরবদের বংশধররাও দেখি সেইরাম বুদ্ধিমান!
এই বুদ্ধিমান মুসলমানরা যখন বলে তাদের পুর্বপুরুষেরা আরব থেকে এসেছিল, তখন প্রশ্ন জাগে তাদের “পূর্বনারীরা” কোথা থেকে এসেছিল? বঙ্গে প্রথম প্রবেশকারী মুসলমানদের মধ্যে যে তিনশজন পীর-আউলিয়ার কথা শোনা যায়, তারা সাথে করে নারী নিয়া এসেছিল, এমন কথা তো কোথাও শুনি না। বখরিয়ারের সাথেও ১৭ জন পুরুষ লুটেরা আর কিছু ঘোড়া ছাড়া আর কোনো প্রাণী ছিল না। তাহলে মুসলমানদের পূর্বনারী কি বঙ্গের সেই গাছপালাগুলা? নাহ, তা কেমন করে হয়। তাহলে বাকি থাকে…মানে ভাগ্যের সন্ধানে যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়ানো আরবরা সাথে ঘোড়া গাধা খচ্চর বকরি রাখত। আর বর্তমানেও ঘোড়া গাধা খচ্চর বকরিদের সাথে আরব মুসলমানদের যে পীরিতের সম্পর্ক দেখা যায়, তাতে তাদের বংশধর অর্থাত এ দেশের মুসলমানদের পূর্বনারী খুঁজতে আর বেশি বেগ পেতে হয় না হেঁ হেঁ…।
তাহলে এই দেশের বুদ্ধিমান মুসলমানদের কথানুসারে সমীকরণটি দাড়াচ্ছেন এরকম–
আরব পুরুষ মুসলমান + (ঘোড়া, খচ্চর, গাধা, বকরি) = বাংলাদেশী মুসলমান।
জন্মপরিচয় নিয়ে এদেশের আরব মুসলমানরা বরাবরই হীনমন্যতায় ভোগে। আশা করি জন্মপরিচয় নিয়ে এখন থেকে তাদের আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। আর এই ব্যাপারটি স্বীকার করার জন্য এদেশের বুদ্ধিমান আরব মুসলমানদেরকে অনেক অনেক উত্তম জাঝা!
Leave a Reply