লিখেছেন : কবিতা রায়
কংগ্রেস দলটাকে ইংরেজরা গড়ে দিয়েছিল যেন এই দলের মাধ্যমে ভারতে সহিংস বিপ্লব থামিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কাজ চালানো যায়। যথারীতি কংগ্রেসের কাজই ছিল ইংরেজদের এবং ইংরেজের সহযোগী শক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আটকানো। এটাই ছিল কংগ্রেসের অহিংসার আসল চেহারা। অন্য কারও প্রতি হিংসা হলে সে নিয়ে কংগ্রেসের কিছুমাত্র সমস্যা ছিল না, গান্ধী এবং কংগ্রেস নিজেই সেগুলো সমর্থন করেছে। মোহনদাস গান্ধী যখন যেখানে উপস্থিত ছিল সেখানেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে যথাসাধ্য সাহায্য দিয়েছে। সাউথ আফ্রিকায় আদিবাসীদের জমিজায়গা কেড়ে নেবার যুদ্ধে সাহায্য করে কাইজার খেতাব এবং ভিক্টোরিয়া ক্রশ মেডেল পেয়েছে। ভারতে হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইংরেজকে বিনাশর্তে সবরকম সাহায্য দেবার প্রতিদানে মহাত্মা খেতাব পেয়েছে। এমনকি জেনারেল ডায়ারের বিরুদ্ধেও একটা কথা বলেনি।
নাথুরামের হাতে গান্ধী বধ হবার পর এই কংগ্রেসীরা দাঙ্গা লাগিয়ে কয়েক হাজার মারাঠী ব্রাহ্মণ মেরেছিল। এখানে একটা কথা নজরে রাখা দরকার। ইংরেজ সরকারের আমলে ডায়ারের কান্ড কলকাতায় জানাজানি হতে তিন মাসের উপর সময় লেগেছিল কিন্তু গান্ধী বধ হবার কয়েক ঘন্টার মধ্যে নাথুরামের কেবল নাম নয়, জাত-ধর্ম-পার্টি সবকিছু সারা দেশ জেনে গেল। সেই দাঙ্গায় কেবলমাত্র নাগপুরের মধ্যেই ১০৩ জন কংগ্রেসী নেতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল কিন্তু একজনের উপরেও মামলা চালানো হয়নি। যেমনটা কোনো মামলা চালানো হয়নি নোয়াখালী দাঙ্গার সময়ে। ১৯৪৮ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু সমস্ত দাঙ্গাবাজকে ক্ষমা করে দিয়ে লালকেল্লার উপর থেকে বলেছিলেনঃ হামারে রাষ্ট্রপিতা কো খতম কিয়া, ইয়ে তো হোনা হি থা।
যদিও মোহনদাস গান্ধী কবে রাষ্ট্রপিতা হয়ে গেল তার কোনো দলিল নেই।
এরপর ইন্দিরা গান্ধী খুন হওয়ার দায়ে দেশজুড়ে শিখদের উপর হামলা। রাজীব গান্ধী তখন জানালেনঃ দেশ হিল গিয়া হ্যায়। যব পেড় গিরতা হ্যায়, ধরতি হিলতি হ্যায়। পেড় জিতনা বড়া হোগা, কম্পন উতনি জ্যাদা হোগি। অর্থাৎ গাছ ভেঙে পড়লে মাটি কেঁপে উঠবেই। যত বড় গাছ, তত বেশি কম্পন হবে।
মূল কথাটা হল তখন ইংরেজের উপর বিপদ এলে কংগ্রেসীরা অহিংসা ভুলে যেত। এখন কংগ্রেসের নিজের লোকের উপর বিপদ এলে আর অহিংসার কথা মনে থাকেনা।
Leave a Reply