জাফর ইকবাল মহাশয় আমাদের জাতীয় আদর্শ
লিখেছেন : আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট
জাফর ইকবাল মহাশয় আমাদের জাতীয় আদর্শ। তাঁহাকে অনুসরণ করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক, বিজ্ঞানপ্রেমিক, মানবপ্রেমিক ইত্যাদিদের জন্য অবশ্যকর্তব্য। কিন্তু সমস্যা হইল যে জাফর মহাশয়কে অনুসরণ করিতে গেলে আর তাঁহাকে অনুসরণ করা উচিত থাকে না। কারণ তিনি নিজে একমাত্র বালের দলকেই অনুসরণ করেন।
জাফর মহাশয় বিদেশ হইতে পদার্থবিদ্যায় উচ্চ ডিগ্রী লইয়া আসিয়াছেন এবং বিজ্ঞান মিশ্রিত রূপকথা লিখিয়া শিশুদের জ্ঞান বিতরণ করিতেছেন। এখন যদি তাঁহাকে অনুসরণ করিয়া সকল ছাত্রই বিদেশে ডিগ্রী আনিতে এবং গবেষণা করিতে যাইতে চাহে তবে তাহা আদৌ সম্ভবই নহে। এমন কি দেশেই যদি তাহারা পদার্থবিদ্যা পড়িতে ইচ্ছা করে তাহার উপযুক্ত ব্যবস্থাও জাফর মহাশয়ের প্রিয় বালের সরকার জাফরের জীবদ্দশায় করিয়া দেখাইতে পারিবেক না। পদার্থবিদ্যা দূরে থাক, কোনো বিদ্যাতেই ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের সকলকে সুযোগ দিবার মত ব্যবস্থা দেশে নাই। বরং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশুনা দিনে দিনে মহার্ঘ হইতেছে, সরকারী সাহায্য কমিতেছে। এসব লইয়া আন্দোলন বা প্রতিবাদ করিলে বালের সরকার পুলিশ পাঠাইয়া আইন বাঁচাইতেছে। এসব লইয়া জাফর মহাশয় বিন্দুমাত্র চিন্তিত নহেন। শিশুদের নিকট ‘উচ্চশিক্ষার প্রেরণা’ নামক চুসিকাঠি বিক্রয় করিয়া তিনি সন্তুষ্ট। সেই প্রেরণা লইয়া তাহারা হাজতবাস করিলে বা পরিমলের হাতে পড়িলে তাঁহার কিছুমাত্র সমস্যা নাই। বালের দল অনুমতি না দিলে এসব লইয়া তিনি একটি বাক্যও উচ্চারণ করিবেন না। বালের দালালেরা এমন মানুষকে আইকন বানাইবে ইহাতে অবাক হইবার কিছু নাই কিন্তু এসবের সমালোচনা করিলে অন্যরা যেভাবে শিশুর মত ব্যবহার শুরু করে তাহাই আশ্চর্য। তবে তিনি শিশুদের জ্ঞান বিতরণ করার জন্য যেভাবে বিদেশী পুস্তক হইতে দিনে ডাকাতি করিতেছেন তাহা অনুসরণ করা অতি সহজ। সকলে ডক্টরেট করিতে না পারিলেও চুরি করিতেই পারে। বাস্তবিক তাঁহার সুযোগ্য শিষ্যেরা ইতোমধ্যে কপিরাইট পুস্তকের স্ক্যান করিয়া অনলাইনে বিতরণ করিতেছে। এমন কি জাফর মহাশয়ের পুস্তকও বাদ নাই। যদিও তিনি লেখার নামে কেবল বিদেশী পুস্তকের অনুবাদ করেন তবুও তাঁহাকে লেখক বলিতে বিশেষ সমস্যা নাই। কিন্তু জাতীয় আইকন বলিলে অতিরিক্ত রকমের বোগদাদী তৈলের গন্ধ পাওয়া যায়। লিখিলে লেখক বলা হইবে, অধ্যাপনা করিলে অধ্যাপক বলা হইবে, গবেষণা-আবিষ্কার করিলে গবেষক-আবিষ্কারক বলা হইবে। তবে চুরি করিলে চোর, দালালী করিলে দালাল বলা হইবে না কেন? প্রেরণা বেচিয়া ব্যবসা করিলে বেনিয়া বলিলেও দোষ হইবে কেন? সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলিলেও যদি অপরাধ হয় তবে স্বাধীন হইয়া কোন বালের দেশ হইল? আর যে লোক বাল কে বাল, পদ্মা সেতুকে পদ্মাসেতু বা পরিমলকে পরিমল বলার স্বাধীনতা বন্ধক রাখিয়া বসিয়া আছেন তিনি যতবড় ডিগ্রীধারী হউন না কেন, কোনো স্বাধীন দেশের আইকন হইবার অযোগ্য। জনগণের ন্যায্য দাবীর উপর লাঠি চালানো সরকারের দালালী করিয়া কেবল দালালের আইকন হওয়া যায়।
চোর, ডাকাত, দালাল, বেনিয়া যাহাই হউন না কেন জাফর মহাশয়ের দেশপ্রেম লইয়া কোনো সন্দেহ নাই। তাঁহার শিশুপাঠ্য কাহিনীর ঝুলিতে তিনি আমেরিকায় বসিয়া পাকি দোকানের হালাল মাংস অপেক্ষা কেরেস্তানী আমেরিকান যন্ত্রে কাটা মাংসকে অধিক পবিত্র বলিয়াছেন। একাত্তরে যেহেতু পাকিরা বাঙালীর উপর গণহত্যা চালাইয়াছিল তাই পাকি দোকানের মাংস হারাম। যদিও পাকিস্তানের জন্মদিন হইতেই আমেরিকা তাহার পরম বন্ধু এবং একাত্তরে আমেরিকার সরকার পাকিস্তানের পুরাদস্তুর সহায়তা করিয়াছিল তবু তাহাতে আমেরিকান মাংস হারাম হয় না। জাফর মহাশয়ের দেশপ্রেম এক ও একমাত্র পাকিস্তানের সহিত সম্পর্কিত। পাকি বিরোধিতার জন্য ধর্মত্যাগ করিতেও প্রস্তুত কিন্তু পরম পাকিবন্ধু আমেরিকাকে তেল গ্যাস এমন কি দেশ বিক্রয় করিয়া দিলেও সমস্যা নাই। দেশের মধ্যে শেয়ার চোর, পদ্মাসেতু চোর থাকিলে সমস্যা নাই। পরিমল কিম্বা সেঞ্চুরী মানিক থাকিলে সমস্যা নাই। গার্মেন্টে আগুন লাগিলে বা রানা প্লাজা ভাঙিয়া পড়িলেও সমস্যা নাই। এইসব অবতারদের রক্ষাকর্তা হাসিনা দেবী নিজেকে সেরা দেশপ্রেমিক ঘোষণা দিলেও সমস্যা নাই। এমন কি সেই প্রগতিশীল হাসিনা যখন ভোটের মুখে গদী বাঁচাইতে নাস্তিক ধরিয়া হাজতে পাঠান, মদীনা সনদের জয়গান গাহেন, ধর্ম বেচিয়া ভোট কিনিতে বাহির হইয়া পড়েন তাহাতেও বিজ্ঞান, প্রগতি, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার আইকন জাফর মহাশয়ের বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ দেখা যায় না। মোটকথা হইল যে হাসিনা দেবী প্রগতিশীল হইয়া আমেরিকার নিকট দেশ বিক্রয় করিলেও বালনেত্রী আবার মদীনা সনদ দিয়া দেশ চালাইলেও বালনেত্রী। তাঁহার কাজের প্রতিবাদ করিলেই আর দেশপ্রেম থাকে না।
এইসব ইতিহাস লইয়া কথা উঠিলেই জাফর অবতারের ভক্তেরা কুপিত হইয়া পড়েন। তাঁহাদের অকাট্য যুক্তি আছে। “সব কিছুর প্রতিবাদ কি জাফর মহাশয়কেই করিতে হইবে?”
অবশ্যই তিনি কিসের সমালোচনা করিবেন আর কিসের দালালী করিবেন তাহা স্থির করার অধিকার তিনি রাখেন। কিন্তু কে তাঁহাকে আইকন মানিবেক এবং কে তাঁহাকে দালাল বলিবে তাহাও যে ব্যক্তিবিশেষের সিদ্ধান্ত লইবার অধিকার আছে সে কথা এইসব ভক্তদের মনে থাকে না। মুক্তচিন্তার অবতারের শিক্ষার ইহাই সর্বোত্তম ফল দেখা যায়। আশা করি আগামীতে শিক্ষামন্ত্রী হইলে তিনি আরো অধিক মুক্তবুদ্ধির পুস্তক বিক্রয় করিতে পারিবেন। তাঁহার ব্যবসার সফলতা কামনা করি।
আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট (সার্টিফায়েড ছাগু)
Leave a Reply