লিখেছেন : কাজল দাস
ভবা সাধক সাত্যকি ব্যানার্জীর একটা গান শুনলাম। নাম : চাঁদ গান। লেখা ও সুর করা উনার নিজেরই। গান শুনতে শুনতে একটা দৃশ্যকল্প মনে হইছে। এক বাউল অনেক দিন পর গৃহে ফিরে এসে একটু আরাম করে শুইছে। কিন্তু বাউলের ভাঙ্গা ঘর দিয়ে উঁকি দেয়া চাঁদের আসা যাওয়া দেখে বাউলের আর ঘুম হৈল না। সে উঠে গেল। ঘর থেকে বের হয়ে উঠোনে মাচার উপরে বসে এই ‘চাঁদগান’টা গাইছেন।
বাংলাদেশের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাউলদের অনেক বেশি সম্মান, শ্রদ্ধা, শুশ্রুষা ও সেবাযত্ন করা হয়। বিভিন্ন কিছু দেখে আমার এই এ্যাজামশনটা দাঁড়াইছে। বিস্তারিত লেখার জন্য আরো ডিকোডিং করা লাগবে।
আমাদের দেশের বাউলরা মাথা নীচু করে হেঁটে, সমাজ পরিত্যাজ্য হয়ে, দারিদ্রতা আর বঞ্চনা নিয়ে কোনক্রমে দিনাতিপাত করেন।
আমার নিজের কানে কত বাউলের কাছে বলতে শুনছি : ভাইরে জীবন তো মানুষের কোন জীবন না। বাউল হইলে আর কিছুই হওন যায় না। তাই ফাঁদে পরে গেছি।
বাউলদের এই দুরবস্থা নিয়ে এই দেশে যারা সবচেয়ে বেশি হুশিয়ারী ভূমিকা রাখতে পারতো সেটা হল কবি সাহিত্যিক শ্রেণি। আফসোস এরা নিজেদের মাঝে দলাদলি আর গলাগলি থামাতে পারতেছে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবারে জন্য সব কিছু ফেলে দিলেও লালন সাঁজীকে নেয়া লাগবে। এমনকি এই তালিকায় যদি রবীন্দ্রনাথকে ও রাখা হয় তিনিও বাউলদের অনেক কৃতকার্যের দ্বারা প্রভাবিত।
আমাদের দেশে এখন বাউল গানের রমরমা বাজার। কিন্তু এসব গানে কোন বাউলিয়ানা নাই। শুধু রিমেক করা হচ্ছে।
জগতে প্রেম ও কাম যেহেতু আছে। মানুষের দু:খ যন্ত্রণা যেহেতু আছে। সুতরাং ভাবের উদয় হয়না এই কথাটা অস্বীকার করতে পারি না আমরা।
কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় হল: আমাদের দেশে বাউলদের ভাবের লালন কেউই করতে চায় না।
যে লিট ফেস্ট ভাবের দিক থেকে বাউলকে রিপ্রেজেন্ট করে না। সেখানে যদি বাউলদের দিয়ে নাচাগানা করা করাইলে ভাবের উদয় কেমনে হবে।
জেলা প্রশাসনিক আরেক প্রকার ভাঁড়। এরা বছরে এক দুইবার করে মন্ত্রীদের আগমন আর বিদায় দেয়ার জন্য এক কালার কুৎসিত পাঞ্জাবি পরিয়ে মঞ্চে ছেড়ে দেয়। পেটের দায়ে আটকে পরা বাউলরা মন মরা গান গেয়ে গেয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেয়।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বাউলদের একদম পছন্দই করে না। করলে লালন হাসন করিমের নামে বিশ্ববিদ্যালয় থাকতো। এর চেয়ে বড় কথা এখানকার পরিবেশটাই এমন যে এখানে কারো বাউল সুধার কাছে যাওয়া বা বাউল রস ধারণ করার অনুকূল পরিবেশ নাই।
বাউল হল ভাব তরঙ্গের সাগর। তারে ইচ্ছেমত খেলতে দিতে হয়। তার ভাবের তরী যেখানে গিয়ে ঠাঁই পায় সেখানেই তার সুরের উদয় হয়। অথচ তারে ভাব তরঙ্গের খেলা খলতে দেয়া হয় না।
জোর করে এদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয় পিম প্রোগ্রামে, এম্পি প্রোগ্রামে। মমতাজ শুয়োরের খোয়াড়ের প্রশংসা করে! ( যদিও তার নন পশ টাইমের গানে সে অনেক উঁচুদরের বাউলের কাতারেই পরে) কুদ্দুস বয়াতি সরকারী লিফলেট গায়।
বাউলেরা ভাব তরঙ্গের সাগরে লাই খেলার কথা। এদের দিয়ে ৫ বছরের মেয়াদি ক্ষমতার চর্বিতচর্বণ করা হইতেছে। চুল কেঁটে দিতেছে।
এই যন্ত্রণায় ভাবের ক্ষ্যাপা বাউলরাও এই দেশ থেকে মইরা সাফ হইয়া যাইতেছে।
প’রে থাকবে শুধু সরকারী প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য কয়েকটা ড্রেসকোডেড, চুল রিবন্ডেড আর দামী পাঞ্জাবি পরা ষ্টেজ শো করা গায়ক।
Leave a Reply