• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

সেই মেলা, সেই মক্কা

You are here: Home / পাল্লাব্লগ / সেই মেলা, সেই মক্কা
October 6, 2014

ছোটবেলায় মেলায় যেতাম। গ্রামের মাঝখান দিয়ে রাস্তা। রাস্তার একদিকে নিচু ধানের ক্ষেত। অন্যদিকে ডাঙা। বৈশাখ মাসে প্রায় শুকনোই থাকত। রাস্তা থেকে নেমে একদৌড়ে নেমে ডাঙা পার হয়ে যেতাম। তারপর বড় একটি মাঠ। মাঠের পরে বিশাল একটি পুকুর। এই পুকুরের চারপাশ আর মাঠ জুড়ে মেলা বসত। পুকুরের কোণের দিকে মাঠের শেষ প্রান্তে বিশাল একটি বটগাছ। এই বটগাছের নীচে হিন্দুদের কিসব অনুষ্টান হত, আর মেলার কয়দিন রাতের বেলা গান-বাজনা হত। এসব অবশ্য দেখা-শোনা হয়নি। সন্ধ্যের আগেই মেলা থেকে বাড়ি ফেরার আদেশ থাকত।

পুকুরের বাকি তিন দিকে তিনটি পাড়া–মালো পাড়া, মুচি পাড়া আর কুমার পাড়া। গ্রামের ভিতরের দিকটায় অন্যান্য সম্প্রদায়ের বসতি। নাপিত, তাঁতী, কামার, মেথর, ধোপা–প্রায় সব হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস এই গ্রামে। বাজারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এদের অনেকের দোকান ছিল। হাটবারের দুই দিন সবাইকে হাটে পাওয়া যেত। আর এই মেলার সময় সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যেত।

মেলায় লোহা, কাঠ, বাঁশ, বেত, মাটি ইত্যাদির তৈরী সংসারের প্রয়োজনীয় প্রায় জিনিসপত্র এই মেলায় পাওয়া যেত। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার মাটি কাঠ প্লাস্টিকের খেলনা ও খাবারের দোকান নিয়ে মুসলমান থেকে শুরু করে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এই মেলায় যোগ দিত।
মনে আছে, আমাদের বাড়ির জন্য বটি, চালুনি, সাজি, কলস, গামছা থেকে শুরু করে সারা বছরের আরো সব সাংসারিক জিনিসপত্র এখান থেকেই বেশি বেশি কেনা হত। দামে কম পড়ত কিনা তাই। আমরা বাচ্চারা হৈ হৈ করে সারা মেলা ঘুরে বেড়াতাম; চানাচুর, ঝালমুড়ি, গজা, পাপড়, এটা-সেটা খেতাম। ফেরার আগে চারআনা দিয়ে মাটির বাঁশি, কিংবা একটাকা দিয়ে বাঁশের বাঁশী কিনে বাজাতে বাজাতে চাঁদের আলোতে পথ চিনে বাড়ি ফিরতাম। অনেকে একসাথে ফিরতাম বলে রাত হয়ে গেলেও বাড়িতে বড়রা কিছু বলত না।

আরেকটু বড় হয়ে এই মেলাটেই পাঁচ টাকা দিয়ে টিনের লঞ্চ আর পাঁচ টাকা দিয়ে পিস্তল কিনেছিলাম, সাথে এক টাকা দিয়ে কাগজের উপর বারুদ দেয়া এক প্যাকেট গুলি। সবাই বলত এগুলো নাকি ইণ্ডিয়া থেকে আসে, তাই দাম বেশি! এক প্যাকেটে কুড়িটা গুলি থাকত, ফুরিয়ে গেলে আবার বাজার থেকে কিনতাম। বাড়িতে এসে রাতের বেলা চোর-ডাকাত খেলতাম। যাদের বন্দুক বা পিস্তল থাকত, তারা পুলিশ সাজত। বোরখাওয়ালীকে এই মেলাতেই প্রথম চানাচুর কিনে সেঁধে ছিলাম। যতক্ষণ না নিয়েছিল ততক্ষণ তার পিছু পিছু ঘুরেছিলাম।

মেলা বাদেও এই গ্রামে বছরের অন্যান্য সময় মাঝে মাঝে যাওয়া হত। ঝোপের বেত দিয়ে ধামা, মোড়া বা অন্যান্য কিছু বানানোর দরকার হলে, বড় জাল দিয়ে পুকুরের মাছ ধরার দরকার হলে ঐ গ্রামে খবর পাঠাতে যেতে হত। বড়দের পিছু নিতাম তখন। তবে যত বড় হয়েছি, ততই দিন দিন ওখানে যাওয়া কমে গেছে। অন্যদিকে ব্যস্ত হয়ে গেলে আর যাওয়াই হয়নি। না যাওয়ার আরো কিছু কারণ ছিল, মেলার জাঁকজমকতা দিন দিন কমে আসছিল, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দিন দিন বিলুপ্ত হতে লাগল। একটা সময় প্রায় পুরো গ্রামটাই মুসলমানদের দখলে চলে এলো। এখন একটি নাপিত পরিবার আর কয়েকটি জেলে পরিবার ছাড়া আর কোনো হিন্দু নেই ওখানে।

ক্ষুদ্র পরিসরে এই যে পরিবর্তন, নিশ্চিত ভাবে তা আরো অনেক জায়গায় হয়েছে। এরকম পরিবর্তন আরো বৃহত পরিসরেও হয়েছে। সেই মাঠের পশ্চিমদিকে বড় একটি মসজিদ হয়েছে, আর সেই বটতলায় নিয়মিত ওয়াজ হয়। সেই তিনশ ষাটটি মূর্তির মন্দির আজ আল্যার কাবা ঘর, আর সেই মক্কায় এখন নিয়মিত হজ্ব হয়।

বোরখাওয়ালীর সাথে ছোটবেলার দিনগুলো নিয়ে যখন কথা হয় তখন এই মেলার কথা অবশ্যই উঠে আসে। সেই মেলা, সেই মক্কা–কেমন যেন একটি অপরাধবোধ কাজ করে মনের ভিতর!

Category: পাল্লাব্লগTag: সংস্কৃতি
Previous Post:সেই মেলা, সেই মক্কা
Next Post:স্পষ্টভাষ্য হয় প্রকাশ্য – ০৩

Reader Interactions

Comments

  1. nahida

    November 5, 2016 at 10:03 pm

    বাহ্ এত সুন্দর করে জায়গাটার বননা দিয়েছপন চোখের সামনে দেখতে পারতাছি জায়গাটা, অনেক ভালো লিখেন আপনি।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top