এই ৩৬০টি দেবমূর্তির প্রধান হিসাবে আল-ইলাহ বা আল্লাহ নামেরও একটি মূর্তি ছিলো, প্রমাণ হিসাবে প্রাক-ইসলাম যুগের মুহাম্মদের বাবার নাম আব্দুল্লাহ বা আবদ আল্লাহ মানে আল্লাহর দাস। ধারণা করা হয়, হুবালকেই সর্বদেবতার নিয়ন্ত্রক হিসাবে আল্লাহ বলা হতো। যার তিনকন্যা উজ্জাম লাত ও মানাত-এর মূর্তি ছিলো সর্বাপেক্ষা বড়, যারা স্ব-স্বগুণের আধার হিসাবে পৌত্তলিক বিশ্বাসের বহুদেবদেবীর মতো পূজিত হয়ে আসছিলো হাজার বছর ধরেই। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বদরের যুদ্ধে এই বহুদেবতা বিশ্বাসী কুরাইশ মূর্তিপূজারীগণ মুহাম্মদ-এর অনুসারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদ কাবাঘরের রক্ষিত হুবালসহ ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে ফেলেন।
কুরাইশদের একটি অংশ হুবাল বা আল্লাহর তিন কন্যা, প্রভাবশালী চন্দ্রদেবী, আল লাত (দীপ্তিমান চন্দ্র), আল মানাত (অন্ধকারাচ্ছন্ন চন্দ্র) এবং আল-উজ্জা (দীপ্তি আধিয়ার সমন্বিত চন্দ্র) – তাদেরও উপাসনা করতো।
পশুপালন নির্ভর আদিম সভ্যতায় উর্বরতা ও সমৃদ্ধির পৌত্তলিক প্রতীক – নারীর যোনী। তারা বিশ্বাস করে, নারীর যোনীই উৎপাদনের, সৃষ্টির, লালনপালনের, মাতৃত্ব ও মমতার প্রতিকৃতি। যারা হজ্বে গিয়েছেন তারা ভালো মতো লক্ষ্য করেছেন, হজরে আসওয়াদের আকৃতি পুরোপুরি নারীর যোনী আকৃতির। আরেকটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন, মুক্তযোনীমুখে ভুমিষ্ট উম্মুখ এক গোলাকার শিশুমাথা। প্যাগানদের বিশ্বাস ছিলো, আল্লাতের যোনিমুখের শিশুর মাথায় চুম্বন করে সকল পাপমুক্ত হয়ে নিষ্পাপ শিশুর মতোই নতুন জীবন শুরু করা যাবে।
আরও লক্ষ্য করলে দেখবেন, যোনীমুখটি পূর্বদিকে শীতের সকালের সুর্যোদয়মুখী করা, অর্থাৎ আরেক প্যাগান সুর্যদেবতার দিকে মিলনোম্মুখ, কারণ চান্দ্রদেবী আল্লাতের সকল কর্মকাণ্ড ছিলো সুর্যদেবতাকেন্দ্রিক। আরব প্যাগানদের বিশ্বাস মতে – শীতের সুর্য একেকটা নতুন সুর্য বা নতুন জীবনের প্রতীক। কারণ গ্রীষ্মের সুর্যের প্রখরতায় চারপাশ গাছপালা প্রাণী ছারখার হতে দেখে, নবোদ্দমে জেগে ওঠা শীতের সুর্যকেই তারা মঙ্গলবার্তাবাহী নতুনত্বে বিশ্বাস করে। তাহলে হজ্বের সময় পাপমুক্তির জন্য মুসলিম হাজ্বীদের হজরে আসওয়াদে চুম্বন মুলত পৌত্তলিকদের উর্বরতার প্রতীক চন্দ্রদেবী আল্লাতের প্রসবোম্মুখ যোনীমুখেই কি পবিত্র চুম্বন নয়? মক্কাকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করাও তৎকালীন আবিষ্কৃত ৫ টি গ্রহ এবং চন্দ্র-সুর্য নামাবলীর পৌত্তলিক দেবতার স্মরণেই নয় কি? এই সাত পাক প্রথাও আল্লাতের জন্মকুষ্ঠির সাথে সম্পৃক্ত। এই পৌত্তলিক সপ্তদেবতার নামানুসারে সপ্তাহের সাতদিনও নামাঙ্কিত। পৌত্তলিক শয়তানের দিকে পাথর মারা, সাফা মারওয়া দৌড়াদৌড়ি সেই পৌত্তলিক উপাসনারই মরুধর্মীয় বিবর্তনের ধারাবহিক বহিঃপ্রকাশ।
Leave a Reply