লিখেছেন গোলাপ
“যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।“
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর ঘটনাবহুল নবী জীবনের যে-সময়টিতে পারস্য সম্রাট (কিসরা/খসরু) পারভেজ, বাইজেনটাইন সম্রাট (সিজার) হিরাক্লিয়াস, আবিসিনিয়ার শাসনকর্তা নাজ্জাসী ও অন্যান্য আরব শাসনকর্তাদের কাছে চিঠি-হুমকি প্রেরণ করেছিলেন, সেই সময়টিতে সম্রাট পারভেজ ও হিরাক্লিয়াসের মধ্যে যে প্রাণান্তকর লড়াই অব্যাহত ছিলো, তার সূত্রপাত কীভাবে ঘটেছিলো; এই যুদ্ধের ফলাফল কী ও কীভাবে সম্পন্ন হয়েছিল; নিজ সন্তান দ্বিতীয় কাবাদ শেরোয়ার মাধ্যমে খসরু পারভেজ ও তার অন্যান্য সন্তানরা কী ভয়াবহ করুণ পরিণতির শিকার হয়েছিলেন; বাইজেনটাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও পারস্য সম্রাট পারভেজ যখন একে অপরের বিরুদ্ধে বহু বছরব্যাপী (৬১০-৬২৮ সাল) প্রাণান্তকর লড়াইয়ে ক্রমান্বয়ে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করে চলেছেন, তখন মুহাম্মদের নেতৃত্বে ‘ধর্মের নামে আগ্রাসী আরব শক্তির’ শক্তিমত্তা কীরূপে বৃদ্ধি পেয়েছিলো – ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনা: [1] [2]
পূর্ব প্রকাশিতের পর:
ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ <মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < ইবনে শিহাব আল-যুহরি < উবাইদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ বিন উতবা বিন মাসুদ < আবদুল্লাহ বিন আব্বাস < আবু সুফিয়ান বিন হারব হইতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
‘আমরা ছিলাম বণিক সম্প্রদায়ের লোকজন। আমাদের ও আল্লাহর নবীর মধ্যের যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে আমাদের বাণিজ্য-যাত্রা হয়েছিল ব্যাহত [পর্ব-২৯], যার ফলে আমাদের সম্পদ হয়েছিলো নিঃশেষিত। আমাদের ও আল্লাহর নবীর মধ্যে সন্ধি-চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর [পর্ব-১২২], আমাদের আশঙ্কা ছিলো এই যে, হয়তো আর আমাদের নিরাপত্তা মিলবে না (‘After the truce between us and the Messenger of God, we feared that we might not encounter security’ – এই বাক্যের যৌক্তিক অর্থ হলো, আবু সুফিয়ান আশঙ্কা করেছিলেন যে সন্ধিচুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা হবে)। [3]
আমি একদল কুরাইশ বণিকদের সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানটি ছিল ‘গাজা (Gaza)’, আর হিরাক্লিয়াসের সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে যে পারসিকরা ছিলো, তাদের বিরুদ্ধে তার বিজয় অর্জনের সময়টিতে আমরা সেখানে গিয়ে পৌঁছাই। তিনি তাদেরকে বিতাড়িত করেন ও যে ‘বিশুদ্ধ-ক্রস (Great Cross)’ টি তারা অপহরণ করে এনেছিলো, তিনি তাদের কাছ থেকে তা পুনরুদ্ধার করেন [পর্ব-১৬৪]। [4]
তাদের বিরুদ্ধে তার এই বিজয় অর্জন সম্পন্ন করার পর ও তাদের কাছ থেকে এই ‘বিশুদ্ধ ক্রস-টির (True Cross)’ পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার পর (তিনি ‘হিমস এ অবস্থান করছিলেন [5]), তিনি তা পুনরুদ্ধারের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও তাকে প্রার্থনা করার নিমিত্তে তিনি জেরুজালেমের (‘বায়তুল মুকাদ্দাস’) উদ্দেশে পদব্রজে রওনা হোন। তার জন্য বিছানো হয় গালিচা ও তাতে ছড়ানো হয় সুগন্ধি।
জেরুজালেমে পৌঁছা ও সেখানে তার প্রার্থনা কর্ম সম্পন্ন করার পর একদা প্রত্যূষে তিনি অস্থির অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেন – তখন তার সঙ্গে ছিল তার সামরিক কমান্ডাররা ও রোমানদের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তার সামরিক কমান্ডাররা তাকে বলেন, “ঈশ্বরের কসম, হে মহারাজ, আজ সকালে আপনি অস্থির অবস্থায় ঘুম থেকে জেগেছেন।” তিনি জবাবে বলেন, “হ্যাঁ, গত রাতে আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে যে, লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (খৎনা) প্রথা পালনকারী রাজ্য হবে বিজয়ী (I was shown in a dream last night that the kingdom of the circumcision will be victorious)।”
তারা তাকে বলে, “মহারাজ, ইহুদিরা ছাড়া এমন কোন রাজ্যের খবর আমরা জানি না, যারা খৎনা (circumcision) প্রথা পালন করে, আর তারা আপনার নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের অধীন। আপনার সাম্রাজ্যের ভেতরে আপনার অধীনস্থ সকল শাসকের কাছে এই মর্মে খবর পাঠান যে, তারা যেন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল ইহুদিদের হত্যা করে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে।”
আল্লাহর কসম, যে মুহূর্তে তারা এই প্রস্তাবটি নিয়ে বিতর্ক করছিলো, বসরার শাসনকর্তার [পর্ব-১৬১] পাঠানো বার্তাবাহক এক ‘আরব’ কে সঙ্গে নিয়ে সেখানে হাজির হয় [6] – রাজারা একে অপরের কাছে এ ভাবেই তাদের খবর আদান প্রদান করতেন – ও বলে,
“মহারাজ, এই লোকটি হলো এক ‘আরব’, ভেড়া ও উটের দেশের লোক, সে তার এলাকার এক বিস্ময়কর ঘটনার বিষয়ে আপনার কাছে এক বিবরণী পেশ করবে। আপনি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করুন।”
বসরার শাসনকর্তার বার্তাবাহকটি যখন ঐ লোকটিকে হিরাক্লিয়াসের কাছে হাজির করে, পরের জন তার দোভাষীকে বলে, “তার এলাকায় কী ঘটনা ঘটেছে, তা তাকে জিজ্ঞাসা করো।” অতঃপর সে তাকে তা জিজ্ঞাসা করে, আর লোকটি বলে,
“আমাদের মধ্যে এক লোক আবির্ভূত হয়েছে, যে নিজেকে নবী বলে দাবী করছে। কিছু লোক তাকে অনুসরণ করছে ও তাকে বিশ্বাস করছে; অন্যরা তার বিরোধিতা করছে, আর তাদের মধ্যে বহু স্থানে রক্তাক্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই ছিল তাদের অবস্থা যখন আমি তাদের কাছ থেকে চলে আসি।”
সে তার বিবরণীটি হিরাক্লিয়াসের কাছে পেশ করার পর, পরের জন বলেন, “তাকে উলঙ্গ করো!”
তারা তাকে উলঙ্গ করে ও দেখে যে, তার খৎনা করা হয়েছে। হিরাক্লিয়াস বলেন,”ঈশ্বরের কসম, এটিই, যা আমাকে দেখানো হয়েছে (স্বপ্নে); সেটি নয় যা তুমি আমাকে বলেছ! তাকে তার পোশাকগুলো দিয়ে দাও ও তাকে যেতে দাও!”——–
ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা: [7]
[এই পর্বের প্রাসঙ্গিক অংশ]
‘আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস হইতে বর্ণিত: আবু সুফিয়ান ইবনে হারব আমাকে জানিয়েছেন যে যখন তিনি কুরাইশদের এক কাফেলার সঙ্গে অবস্থান করছিলেন তখন হিরাক্লিয়াস তার কাছে এক বার্তাবাহক প্রেরণ করেছিলেন। তারা ছিলেন বণিক ও তারা শাম দেশে (সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, লেবানন ও জর্ডান) বাণিজ্য করছিলেন, সময়টি ছিল তখন, যখন আল্লাহর নবী এবং আবু সুফিয়ান ও কাফের কুরাইশদের মধ্যে এক সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। ——-
— উপকথক (Sub narrator) যা যোগ করেছেন তা হলো: “ইবনে আন-নাতুর ছিলেন ইলাইয়া (জেরুজালেম) এর গভর্নর ও হিরাক্লিয়াস ছিলেন শাম দেশের খ্রিষ্টান শাসক। ইবনে আন-নাতুর হইতে বর্ণিত আছে যে একদা যখন হিরাক্লিয়াস ইলাইয়া (‘ilya’) পরিদর্শন করছিলেন, তিনি বিষণ্ণ চিত্তে প্রত্যূষে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তাঁর কিছু পুরোহিত তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চান যে, কী কারণে তার এমন মেজাজ?
হিরাক্লিয়াস ছিলেন একজন ভবিষ্যদ্বক্তা ও জ্যোতিষী। তিনি জবাবে বলেন, ‘রাত্রিকালে যখন আমি আকাশের তারার দিকে তাকিয়েছিলাম, আমি দেখলাম যে, যারা খৎনা প্রথা পালন করে, তাদের প্রধানের আগমন ঘটেছে (যে হবে বিজয়ী)। কোন সেই লোকেরা যারা খৎনা প্রথা পালন করে?’
লোকেরা জবাবে বলে, ‘ইহুদিরা ছাড়া আর কেউই খৎনা প্রথা পালন করে না, সুতরাং তাদের (ইহুদিদের) কাছ থেকে আপনার ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আপনি কেবল এই হুকুমটি জারি করুন যে, রাজ্যের সকল ইহুদিকে যেন হত্যা করা হয়।’
যখন তারা এই আলোচনাটি করছিল, ঘাসানিদ শাসনকর্তার প্রেরিত বার্তাবাহক কে ভিতরে নিয়ে আসা হয়, যাকে তিনি পাঠিয়েছিলেন আল্লাহর নবীর চিঠিটি হিরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। খবরটি শোনার পর, তিনি (হিরাক্লিয়াস) তাঁর লোকদের এই আদেশ করেন যে, তারা যেন ঘাসানিদ শাসকের প্রেরিত বার্তাবাহকটিকে পরীক্ষা করে দেখে যে, তার খৎনা করা হয়েছে কি না। তাকে পরীক্ষা করার পর লোকেরা হিরাক্লিয়াস-কে বলে যে, তার খৎনা করা হয়েছে। অতঃপর হিরাক্লিয়াস তাকে আরবদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। বার্তাবাহক জবাবে বলে, ‘আরবরাও খৎনা প্রথা পালন করে।’ —
– অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ – লেখক।
>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির প্রাক্কালেই আবু সুফিয়ান ধারণা করেছিলেন যে, মুহাম্মদ তাঁর এই চুক্তি ভঙ্গ করবেন, তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, মুহাম্মদ তাঁদেরকে আর কখনো নিরাপদে থাকতে দেবেন না। তাঁর এই আশংকা যে মিথ্যা ছিলো না, তা মুহাম্মদের স্বরচিত ‘কুরান’ ও আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট। হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার (মার্চ, ৬২৮ সাল) পর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত (মার্চ, ৬৩০ সাল) এই দুই বছর সময়ে মুহাম্মদ কম পক্ষে পাঁচবার হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছিলেন, যার বিস্তারিত আলোচনা ‘হুদাইবিয়া সন্ধি: চুক্তি ভঙ্গ (১২৫-১২৯)’ পর্বে করা হয়েছে।
গত পর্বের আলোচনা শেষে প্রশ্ন ছিল:
“গত ছয়টি বছরে (৬২২-৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ) ধর্মের নামে মুহাম্মদের নেতৃত্বে এই নব্য আগ্রাসী আরব শক্তির উত্থান ও তাদের সংঘটিত বদর যুদ্ধ ও তার ফলাফল, ও ওহুদ যুদ্ধ, ও খন্দক যুদ্ধ, ও বনি কুরাইজার নৃশংস গণহত্যা, ও খায়বার যুদ্ধ ও তার ফলাফল, অতঃপর ফাদাক আগ্রাসন – ইত্যাদি সংঘর্ষের বিষয়ে ইস্তাম্বুলে বসবাসকারী সম্রাট হিরাক্লিয়াস কোনো খোঁজ-খবরই রাখতেন না, এমন যুক্তি কতটুকু গ্রহণযোগ্য?”
>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যা স্পষ্ট, তা হলো এই যে, রোমান (বাইজেনটাইন) সম্রাট হিরাক্লিয়াস কিংবা তার কোনো পরিষদবর্গ গত ছয়টি বছরে (৬২২-৬২৮ সাল) মুহাম্মদের নেতৃত্বে ধর্মের নামে আগ্রাসী নব্য আরব শক্তির উত্থান ও তাদের নৃশংস কর্মকাণ্ডের কোনো খবরাখবর রাখতেন, এমন আভাস কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি। শুধু তাইই নয়, তাঁদের এই বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, হিরাক্লিয়াস ও তাঁর পরিষদবর্গ ও তাঁর পুরোহিতদের কেউই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা সংঘটিত গত ছয়টি বছরের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ছিলেন একেবারেই অজ্ঞ!
কিন্তু,
পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করার পর, মক্কার কুরাইশ ও মুহাম্মদের মধ্যে হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার (মার্চ, ৬২৮ সাল) পর, সম্রাট হিরাক্লিয়াস তা “অলৌকিকভাবে জানতে পেরেছিলেন হঠাৎ এক রাত্রিকালে!
কীভাবে?
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা মতে স্বপ্ন-দর্শন, আর ইমাম বুখারীর বর্ণনা মতে, আকাশের তারা গণনার মাধ্যমে সম্রাট হিরাক্লিয়াস জানতে পেরেছিলেন যে ‘লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (খৎনা) প্রথা পালনকারী জাতিই হবে ‘ভবিষ্যতের বিজয়ী!”
কিন্তু,
তখন পর্যন্ত হিরাক্লিয়াস কিংবা তার কোনো পরিষদবর্গ কিংবা তার পুরোহিতদের কেউই জানতেন না যে, একমাত্র ইহুদিরা ছাড়া ‘লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (খৎনা) প্রথা পালনকারী’ আর কোনো জাতি পৃথিবীতে আছে নাকি নেই!
অতঃপর,
হিরাক্লিয়াস তা ‘সুনির্দিষ্টভাবে’ জানতে পেরেছিলেন বসরার শাসনকর্তার পাঠানো বার্তাবাহক মারফত তার দরবারে নিয়ে আসা “এক ‘আরব’ লোকের খৎনা-করা যৌনাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করার পর!”
অন্যদিকে,
ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) ও ইমাম তিরমিজী (৮২৪-৮৯২ সাল) তাঁদের হাদিস গ্রন্থে আবু-সুফিয়ানের এই উপাখ্যানের বর্ণনায় [সহি মুসলিম: বই ০১৯, হাদিস ৪৩৮০ ও সহি তিরমিজী: চ্যাপ্টার ১১, হাদিস নম্বর ০০৬ (০৮৭)] বর্ণনায় হিরাক্লিয়াসের এই অলৌকিক স্বপ্নদর্শন বা আকাশের তারা গণনার মাধ্যমে ‘লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন-প্রথা পালনকারী জাতির ভবিষ্যতের বিজয়ী হওয়া বিষয়টির ব্যাপারে কোনোকিছুই উল্লেখ করেননি!
কী কারণে তাঁরা তা উল্লেখ করেননি, তা নিশ্চিতভাবে জানা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু, আজ একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের এই স্বর্ণযুগে যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো ‘স্বপ্ন দর্শন কিংবা আকাশের তারা গণনার মাধ্যমে ‘লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন (খৎনা) প্রথা পালনকারী জাতির বিজয়ী হওয়ার সংবাদ জানা যায়, এমন দাবি একেবারেই উদ্ভট ও হাস্যকর’! সে কারণেই, বোধ করি, ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিজী তাঁদের হাদিস গ্রন্থে এই উদ্ভট ও হাস্যকর বিষয়ের কোনো উল্লেখই করেননি!
কী কারণে ইসলামের সকল ইতিহাস ভীষণ পক্ষপাতদুষ্ট, একপেশে ও মিথ্যাচারে সমৃদ্ধ, তার আলোচনা ‘সিরাত রাসুল আল্লাহ ও ইবনে ইশাক (পর্ব: ৪৪)’ পর্বে করা হয়েছে। এই পক্ষপাতদুষ্ট ও একপেশে ইতিহাস থেকে সত্যকে আবিষ্কার করা অত্যন্ত দুরূহ, গবেষণাধর্মী ও সময়সাপেক্ষ প্রচেষ্টা, কিন্তু কী কারণে তা কখনোই অর্থহীন নয়, তার আলোচনাও ‘নবী গৌরব ধূলিসাৎ (পর্ব-৬৯)!‘ পর্বে করা হয়েছে।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬১-১৫৬৩; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:
[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৫৩-৬৫৪; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:
[3] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৩৫, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬১
“—The sense of this passage and of the similarly worded one at p. 103 (Leiden page 1565), is that Abu Sufyan feared a possible violation of the truce.”
[4] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৩৬, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬১-১৫৬২
“—–৬২৮ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই হিরাক্লিয়াস তার বিজয় অর্জন সম্পন্ন করেন, কিন্তু ৬২৯ সালের জুন মাসের আগে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের এলাকাগুলো থেকে পারস্য সৈন্য প্রত্যাহার সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হয় না। ৬২৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হিরাক্লিয়াস বিজয়ীর বেশে কনস্টান্টিনোপল [বর্তমান ইস্তাম্বুল] শহরে প্রবেশ করেন, আর ৬৩০ সালের মার্চ মাসে তিনি জেরুজালেমে ‘বিশুদ্ধ ক্রস’ পুনরায় স্থাপন করেন।”
[5] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৩৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬২
“Hims/Emesa – দামেস্ক ও আলেপ্পোর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সিরিয়ায় একটি স্থান।”
[6] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৪০ (৪২৩), পৃষ্ঠা ১৫৬২ (১৫৬০)
“–তার নাম ছিল শামির (Shamir), বানু ঘাসান (Ghassan) গোত্রের শাসক। ঘাসানিদরা ছিলেন ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান সম্প্রদায় যারা বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অধীন বানটা ঘাসান নামের এক আরব উপজাতীয় রাজ্য শাসন করতেন, যার রাজধানী ছিল সিরিয়ার বসরায়’ (পর্ব-১৬১)।”
[7] সহি বুখারী: ভলুম ১, বই নম্বর ১, হাদিস নম্বর ৬
এই পর্বের প্রাসঙ্গিক অংশ: ‘Narated By ‘Abdullah bin ‘Abbas: Abu Sufyan bin Harb informed me that Heraclius had sent a messenger to him while he had been accompanying a caravan from Quraish. They were merchants doing business in Sham (Syria, Palestine, Lebanon and Jordan), at the time when Allah’s Apostle had truce with Abu Sufyan and Quraish infidels.
——The sub narrator adds, “Ibn An-Natur was the Governor of llya’ (Jerusalem) and Heraclius was the head of the Christians of Sham. Ibn An-Natur narrates that once while Heraclius was visiting ilya’ (Jerusalem), he got up in the morning with a sad mood. Some of his priests asked him why he was in that mood? Heraclius was a foreteller and an astrologer. He replied, ‘At night when I looked at the stars, I saw that the leader of those who practice circumcision had appeared (become the conqueror). Who are they who practice circumcision?’ The people replied, ‘Except the Jews nobody practices circumcision, so you should not be afraid of them (Jews).’ Just Issue orders to kill every Jew present in the country.’ While they were discussing it, a messenger sent by the king of Ghassan to convey the news of Allah’s Apostle to Heraclius was brought in. Having heard the news, he (Heraclius) ordered the people to go and see whether the messenger of Ghassan was circumcised. The people, after seeing him, told Heraclius that he was circumcised. Heraclius then asked him about the Arabs. The messenger replied, ‘Arabs also practice circumcision.’ (After hearing that) Heraclius remarked that sovereignty of the ‘Arabs had appeared.’—–
Leave a Reply