লিখেছেন : জুপিটার জয়প্রকাশ
অ, তুমি এখন আমাকে লেকচার শোনাতেই পারো, মহিলা হাসিলেন। তোমার এখন নীতিবাক্য শোনানোরই কথা, এটাও ভালই ছিল। তুমিই আমাকে ছেড়ে পালিয়েছিলে, কথাগুলি গিবরিলের কানে ঢুকিয়া যাইতে লাগিল, যেন কানে ধরিয়া বলা হইতেছে। তুমিই সেই, যে মেঘের আড়ালে চাঁদের মতো লুকিয়ে বসেছিলে। আর আমার জন্য ছিল অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া।
গিবরিল আতঙ্কিত হইয়া উঠিল। “কী চাও? না, বলবার দরকার নেই, বিদেয় হও।“
যখন তুমি অসুস্থ ছিলে আমি দেখা করতে যাইনি, বদনামের ভয় ছিল। আমি জানতাম দেখা করা সম্ভব নয়। কিন্তু তুমি সেটাকে অজুহাত বানালে, পালানোর বাহানা তৈরি করলে। তুমি, আর সেই বরফের মেয়েটা। হারামজাদা। এখন আমি মরে গিয়ে মাফ করা ভুলে গেছি। আমি অভিশাপ দিলাম, গিবরিল, তোমার জীবন নরক হয়ে যাবে, যে নরকে তুমি আমাকে পাঠিয়েছ, যে নরক থেকে তুমি এসেছ শয়তান, যেখানে তুমি যাবে, হারামজাদা। রেখার অভিশাপ; আর তাহার পর এক অজানা ভাষায় কিছু শ্লোক, যাহার কিছুই গিবরিলের বোধগম্য হইলনা, কেবলই ক্রুদ্ধ হিসহিস কিছু শব্দ, যাহার মধ্যে একটি নাম বারেবারে শোনা যাইতেছিল _আল-লাত_।
গিবরিল চামচাকে শক্ত করিয়া জড়াইয়া ধরিল; আর পরমুহুর্তেই দুইজনে মেঘস্তর ভেদ করিয়া উহার নিম্নদেশে আসিয়া উপস্থিত হইল।
গতিবেগ। তীব্র বেগের অনুভূতি আবার ফিরিয়া আসিয়াছিল। চারদিকে বাতাসের বংশীধ্বনি, উপরে মেঘমালানির্মিত আচ্ছাদন, নিম্নে জলপ্লাবিত গন্তব্য সবেগে নিকটবর্তী হইয়া আসা, তাহাদের চক্ষু খুলিয়া গেল। এক আর্তনাদ, যেইরূপ প্রথমবারে গিবরিলকে শুন্যে সঙ্গীতসহ নৃত্য করিতে দেখিয়া চামচার মুখ হইতে শোনা গিয়াছিল, পরিবর্তনশীল মেঘরাশির মধ্য দিয়া সূর্যকিরণ তাহার খোলা মুখের মধ্যে আসিয়া পড়িল। কিন্তু ততক্ষণে উহারা সেই মেঘরাশি পার হয়া নামিয়া আসিয়াছে, সেখানে সবকিছু ঘোলাটে ছিল, পার্থক্য, সীমানা, আর যখন সূর্যালোক চামচার উপর আঘাত করিল তাহাতে আর্তনাদ অপেক্ষা কিছু বেশিই বাহির হইয়া আসিল।
“ফ্লাই,” চামচা গিবরিলের উদ্দেশ্যে চিৎকার করিল। “উড়তে আরম্ভ করো, এখনই।” তাহার সাথেই আগামাথা না জানিয়াই দ্বিতীয় আদেশ যুক্ত করিল, “আর গান গাও।“
Leave a Reply