তুমি জানো না রে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা–বিজয় সরকারের এই গানটা কীভাবে শুনে শুনে বিশুর খুব প্রিয় গানের একটি হয়ে গেল, সে গল্প অনেকবার শুনেছি।–কোনো এক ধর্মসভায়, যাত্রাদলে গান করা বাড়ির পাশের একজনের মুখে, গ্রামে গানের আসরে… তারপর মুজিব পরদেশী থেকে শুরু করে আরো অনেকের কণ্ঠে… যদিও কে সঠিকভাবে গানটা গায়–কেউ জানে না…
তখন ঢাকায় রঙের কাজ করি। প্রায় প্রতিবারই ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে রামকৃষ্ণ মিশনে যাই বিশুর সাথে দেখা করতে। চিঠিপত্র বা আরো যদি কিছু বাড়িতে পাঠানোর থাকত… তো সেবারে এক কাজিনের জন্য কিছু বই কিনে দেবে বলে নিউমার্কেট নিয়ে গেল। রিক্সায় যেতে যেতে হঠাত ওই গানটা গুনগুন করছে। আর আমি তখন বায়না ধরলাম এই গানের একটা ক্যাসেট কিনে দিতে। নিউমার্কেটের অনেক দোকান ঘুরেও পাওয়া গেল না।
ফেরার পথে পুরানা পল্টন নেমেছি। আজাদ প্রোডাক্টস থেকে ক্যালেন্ডার কিনে বের হয়ে একটু পশ্চিমদিকে গেলেই ফুটপাতে কিছু বইয়ের দোকান। আরেকটু এগিয়ে গেলে ওই ফুটপাতেই ক্যাসেটের একটা দোকান ছিল। সেখানে ‘বিজয় বিচ্ছেদ’ বলে একটা পাওয়া গেলো। শিল্পীকে চিনি না। বললাম একটু বাজিয়ে দেখান। শুনে আমারই ভালো লাগল না, আর বিশু বলল–একেবারে যা তা বানিয়ে ফেলছে! নাই মামা-কানা মামা ভাবতে ভাবতে ক্যাসেটটা নিলাম। বাড়ি ফিরে বোধ হয় একবার শুনে আর শোনা হয়নি। কাজল দেওয়ানের ক্যাসেট ছিল!
ইউটিউবে রাজ্জাক দেওয়ানের গান সার্চ দিয়ে কাজল দেওয়ান, সুজন দেওয়ানের গানও পেয়েছি। শুনেছি কিছু কিছু। ওই পর্যন্তই। কিন্তু সেদিন হঠাত একটা ভিডিওতে অনেকদিন পরে আবার কাজল দেওয়ানকে দেখে লাফিয়ে উঠলাম! ধামাইল কীর্তন গাইছেন–ঘোমটা খুলে বদন তুলে দেখেছিলাম চাইয়া গো, দেখেছিলাম চাইয়া…
যদিও হাসির গান না, তবুও মনে মনে হাসছিলাম। মনে পড়ছিল সেই পুরানো কথা। গানটা শুনি আর মনে মনে ভাবি–অনেক কাল আগে শোনা গান ভালো না লাগার শোধ নিলাম… এই কীর্তন আগেও অনেকবার শুনেছি, কিন্তু কারো কণ্ঠেই ভালো লাগে নাই–এই প্রথম ভালো লাগল কাজল দেওয়ানের কণ্ঠে। তারপর কত বার যে শুনছি! [আর পরীর অংশটুকু বোনাস…]
[বিশুকে লিঙ্ক দিয়ে সেই কাহিনী বলতেই এই ছবিটার স্নাপশট পাঠিয়ে বলল, এই ছবিতে না কি সে-ও আছে! ওই যে সামনের দিকে বসা বাচ্চা ছেলেটা… গ্রামে গানের আসর বসলে সে-ও গিয়ে ওভাবেই বসে পড়ত…]
Leave a Reply