• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

পর্দা প্রথা

You are here: Home / চুতরাপাতা / পর্দা প্রথা
April 17, 2013

লিখেছেনঃ ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা) 

তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী ছিলাম। টুকটাক টিউশনি আর গলা বেঁচা ( এডের পিছনে ভোকাল) দিয়ে হাত খরচ চালাই। বড় হয়েছি, হয়েছি ভাব। তাই বাসা থেকে যত কম টাকা নেয়া যায় চেষ্টা করতাম। সঙ্গে থিয়াটার আরামবাগে কাজ করতাম।

আমি টিউশনি করি শুনে, গ্রুপের এক ভাবী ডেকে বললেন, শুনলাম তুই নাকি টিউশনি করিস? আমি বললাম, হ্যা করিতো। ভাবী বললেন, আমার হাসবেন্ডের বন্ধু তার পরিবারসহ আমেরিকা থেকে এসেছে। তুই এত সুন্দর কবিতা পড়িস, এদের ছোট দুটো ছেলে মেয়েকে বাংলা শিখাতে পারবি? আমি তো বাকবাকুম, বাকবাকুম শব্দে রাজী হলাম। বললাম, বেতন কত দেবে? বললো, এক এক জনের জন্য দু হাজার করে। আমাকে আর পায় কে? মধ্যবিত্ত পরিবারের অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া একটা মেয়ের জন্য চার হাজার অনেক টাকা তখন অনেক। নাচতে নাচতে রাজী হয়ে গেলাম।

পরের দিনই ফোনে যোগাযোগ করে তাদের কাকরাইলের বাসায় পৌছে গেলাম। বাসায় ঢুকতেই ফাপরে পড়লাম। ওদের বাসায় কোন সোফা নেই। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, সারা বাসায় গালিচা পাতা। আর কয়েকটা তাকিয়া দেয়া আছে। ড্রইয়রুমের সঙ্গে অন্যান্য ঘরকে আলাদা করতে ভারী পর্দা। দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম গার্জিয়ানের সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিছুক্ষণ পর বোরকা পড়া এক মধ্য বয়সী মহিলা এলেন আমার সামনে। বললেন, বসেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কোথায় বসবো? মহিলা আমাকে দেখিয়ে গালিচায় বসে গেলেন। উনাকে দেখাদেখি আমিও গালিচাতে বসলাম। বললেন, আসলে ইসলামই জীবন যাপনে ঘরে উচু আসন বা সোফা রাখার নিয়ম নাই। আমি কিছু বললাম না। কারন, আমি ইসলামে সোফায় বসা নিয়মের কিছুই জানতাম না। তিনি বললেন, মাশাল্লাহ, আপনি নাটক করেন, অথচ উগ্র পোশাক পড়েন না। আমি বুঝলাম না, উগ্র পোশাক বলতে তিনি কি বোঝালেন ( হয়তো প্যান্ট শার্ট পড়াকে বোঝালেন) আমি বললাম, নাটক করলে মেয়েরা উগ্র পোশাক পড়ে এটা আপনাকে কে বলেছে। তিনি বললেন, কি বলেন? আমেরিকায় নাটকের মেয়েদের পোশাক কি আপনি দেখেছেন? আমি বললাম, আমি কোনদিন আমেরিকায় যাইনি। ভবিষ্যতে যাবো কিনা তাও জানিনা। জানালেন তার স্বামী বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। তাদের ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে, তাই ছেলেমেয়েরা যেন আমেরিকার উগ্র জীবনযাপনে উৎসাহিত না হয় সেই উদ্দেশ্যে ২০ বছর পর তারা পুরো পরিবার সহ বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। তাদের বড় ছেলের বয়স ১৭ বছর। আর বড় মেয়ে ১৫ বছর। তাদের দুইজনকে তারা বাংলাদেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন। যাতে তারা কোরানের হাফিজ হয়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে ইসলামিক জীবনযাপন করেন। তাদের বাকি দুই পুত্র/ কন্যাকেও তারা ভবিষ্যতে মাদ্রাসায় ভর্তি করবেন। তবে তারা চান, চার ছেলে-মেয়েই বাংলাভাষা শিখুক। তাদের ছেলেমেয়েদের কেউ বাংলা লিখতে পড়তে জানেনা। কিন্তু ইংরেজী, আরবী আর উর্দু জানে। তাই কোথাও গেলে তাদের ঠকতে হয়। আমাকে বলা হলো, প্রথমে ছোট দুজনকে বাংলা আর অংক পড়াতে হবে। তারপর, বড় দুই ছেলে মেয়েকেও বাংলা শিখাতে হবে।

আমার তালিম দেয়া শুরু হলো। সপ্তাহে তিনদিন ওদের বাসায় গিয়ে পড়াই। ছোট ছেলেটার বয়স ৬ আর মেয়েটার বয়স ৮; মেয়েটা আমি গেলেই আমার কাছে পড়তে বসে কিন্তু ৬ বছরের ছেলেটার সঙ্গে আমার রীতিমত কাবাডি খেলে পড়াতে বসতে হয়। কিছুতেই বাংলা অংক পড়তে চায় না। তার শখ বড় ভাইবোনদের মতো মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবী শিখবে আর কোরান পড়বে। ওকে আমি আলিফ জবর আ, আর বে জবর বা এর মতো করে বাংলা পড়াতে শুরু করলাম। অংক শুরু করলেই ও বলে আমাকে ইংরেজীতে বুঝিয়ে বলো। পড়লাম মহা যন্ত্রণায়। ওদের বাসায় গিয়েই আমাকে ওকে বিছানা থেকে কোলে করে নিয়ে এসে খেলাধুলা করে পড়াতে হতো। আর ছোট মেয়েটা সুন্দর করে পড়া শেষ করে আমার কাছে বাংলা গল্পের বই নিয়ে আসতো গল্প শোনার জন্য। অবশ্যই বেশির ভাগ বই ছিল মা ফাতিমার, খাদিজা আর আয়শার জীবন কাহিনী। ওকে বললাম, তুমি ঠাকুর মার ঝুড়ির কথা শুনেছো? ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি ওর জন্য ঠাকুর মার ঝুলি নিয়ে যেতে থাকলাম আর পড়ে শুনাতাম। কি যে ঝলমলিয়ে উঠতো সেই শিশুটার মুখ!! আর ছেলেটা শুধুই ত্যাদরামি করতো। ওকে আমার আরবীর মতো করে বাংলা পড়াতে হতো। আসলে ওর বাংলা বা অংক পড়ার প্রতি অনীহা ছিলো। ৬ বছরের একটা শিশুর কেন এমন বাংলার প্রতি অনীহা আমার বোধগম্য ছিলো না।

একদিন যথারীতি পড়াতে গিয়েছি, দেখি ছোট ছেলেটা আর মা বাসায় নেই। বড় বোনটা আজ মাদ্রাসা থেকে বাসায় এসেছে। আমি ছোট মেয়েটাকে পড়াচ্ছি। এমন সময় হঠাৎ ও দৌড়ে লবির দরজার কাছে চলে গেলো। দরজার ডোর ভিউর দিয়ে বাইরে দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখতে থাকলো!! আমি বললাম, কি দেখো? বলে আমিও দেখার চেষ্টা করলাম। দেখলাম, ওর বয়সী কতগুলো ছেলেমেয়ে কলরব করে নামছে। ও সেই দৃশ্য দেখে আনন্দিত হচ্ছে। আমি বললাম, ওরা কি তোমার বন্ধু? ও বললো, ওর কোন বন্ধু নেই। ও কখনো ঘরের বাইরে যায় না। মাঝে মাঝে শুধু মায়ের সঙ্গে বাজারে যায়।

আমার যে কি হলো!! আমি এই ৮ বছরের বোরখা পড়া মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম। লিফ্ট দিয়ে নীচে নামলাম আর বাসার সামনে বাচ্চাদের খেলার জায়গায় গিয়ে দাড়ালাম। মেয়েটা ভয়ে এবং আনন্দে আমার হাত ধরে ওদের খেলা দেখতে লাগলো। বললাম, যাও তুমিও খেলো। ও, আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মাম উইল বিট মি। কি যে কষ্ট নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ৮ বছরের মেয়ে খেলতে যাওয়ার অনুমতি পায় না।কিছুক্ষণ পর ওকে নিয়ে আবার ওদের বাসার দিকে রওনা হলাম। বাসায় ঢোকার সময়ই বিপত্তিটা ঘটলো। ওর বড় ভাই মাত্র ঘরে ফিরছে। আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে বললো, তুমি ওকে নিয়ে বাইরে গিয়েছো কেন‌? আমি বললাম, ও আজ একটা কবিতা আমায় বাংলায় মুখস্ত করে শুনিয়েছে। তাই এটা ওর গিফট। সে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকলো। দুদিন পরে আমি ওদের বাসায় গেলে, ওর মা আমাকে খামে ভরে চার হাজার টাকা দিয়ে বললেন, সরি স্নিগ্ধা আমার ছেলে মেয়েরা এখন বাংলা শিখতে চায়না। আপনি খুব ভালো শিক্ষক। ওরা যখন আবার মোটিভেটেড হবে বাংলা পড়তে আমরা আবার আপনাকে খবর দিবো। আপনিও পর্দা প্রথাটা শেখার চেষ্টা করো।সেদিন আর কিছু না বলে সেই বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম।

আর পর্দা প্রথা আমার আজও শেখা হয়নি এবং এ জীবনে আর হবেও না।

Category: চুতরাপাতা
Previous Post:পশ্চিমা দেশগুলোতে নিষিদ্ধের মিছিলে ইসলামি সংগঠন
Next Post:ইতিহাস রিপিট হয়

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top