লিখেছেন সুজন করিম
‘নাস্তিক’ শব্দটি নিয়ে নাকশিটকানো স্বভাব অনেকেরই আছে। এই স্বভাব আমাদের নতুন নয়, বরং বহুদিনের পুরনো। যেমন, রোমানরা ভেংচি দিত গ্রিকদের দেখে, ইহুদিরা ভেংচি খেয়েছে বিভিন্ন জাতি থেকে, উচ্চবর্ণের হিন্দুরা আজও নগ্ন করে নিম্নবর্ণকে! এই বৈষম্য থাকবেই।
যেটা বলছিলাম, নাস্তিকরাও মানুষ। তাদেরও দুই হাত, দুই পা, একটি মস্তিস্ক রয়েছে। এই মানুষগুলোও সকালে অফিসে যায় অথবা স্কুল-কলেজে, বাসায় এসে পরিবারের সাথে সময় দেয়, যাদের অনেকেই জানে না যে, এরা নাস্তিক। এই সব মানুষের বেশির ভাগ নিজেদের বন্দী রাখে। প্রকাশ করা হয় না কখনো যে, তারা নাস্তিক। কিন্তু কিছু কিছু নাস্তিক নিজেদের প্রকাশ করে, কিছু কিছু পৃথিবীটা বদলাতে চায়, কারো কারো কাছে ধর্মের নামে নৈরাজ্য, বৈষম্য, অরাজকতা সহ্য হয় না।
এই সব মানুষের প্রতিবাদ ধার্মিক মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বরং শুধুমাত্র ধর্মের বিরুদ্ধে। এইসব মানুষ কোনো মানুষের প্রতিবাদ করে না, বরং প্রতিবাদ করে তার পেছনের আদর্শকে। নাস্তিকরা নিজেদের মধ্যে অনেক দিকেই ভিন্ন, অনেক ভিন্ন মতবাদ নিয়ে চলে, শুধু একটি জায়গায় এরা সবাই সমান; তা হচ্ছে – প্রশ্ন করা। নাস্তিক হওয়ার জন্য তেমন কিছুরই প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন শুধু প্রশ্ন করার ক্ষমতা থাকা এবং বিভ্রান্তকর উত্তরে থিতু না হওয়া, বরং ততক্ষণ প্রশ্ন করা, যতক্ষণ সঠিক উত্তর না আসছে।
নৈতিকতা:
# প্রথমত, প্রাকৃতিক ও সহজাত নৈতিকতা আমাদের সবার মধ্যে রয়েছে। যেমন, কাউকে অপ্রয়োজনে হত্যা না করা।
# নৈতিকতা তৈরী হয় সময়ের প্রয়োজনে, যখন থেকে আমরা সমাজবদ্ধভাবে থাকতে শুরু করেছি, তখন থেকেই আমাদের নৈতিকতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
# সমাজে বসবাস করতে হলে শুধু নিজের ভালো নয়, বরং সবার স্বার্থ দেখতে হয়। আর তা না দেখলে সেটা সমাজ হয় না। সেই সমাজের প্রয়োজনেই আপনাকে অনেক কাজ থেকে বিরত থাকতে হতে পারে।
# নৈতিকতা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। যেমন, ১৫০ বছর আগে দাস রাখা ছিল নৈতিক, কিন্তু এখন তা অনৈতিক। আবার এখন কাজের ছেলে-মেয়ে নৈতিক, তা হয়তো আরো ১০০ বছর পর থাকবে না।
# ধর্ম কখনো নৈতিকতার মানদণ্ড নয় এবং হতেও পারে না। কারণ নৈতিকতার কোনো মানদণ্ড নেই, বরং সময়ের সাথে তা পরিবর্তনশীল।
# ধর্মের কাজ হচ্ছে – ওই সময়ের নৈতিকতা গ্রহণ। অতএব ধর্ম শুধুই একটি নির্দিষ্ট সময়ের নৈতিকতা চুরি করতে পারে, কিন্তু কখনই নৈতিকতার মানদণ্ড হতে পারে না ৷
Leave a Reply