হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রেস কনফারেন্সে সরকারের পক্ষ হতে উপস্থাপিত জবাব সংক্রান্ত বিষয়াদি।
ডাইরী নং-০৪৭, তারিখ-০৯/০৪/২০১৩ খ্রি.
নথি নং-১০.০০.০০০০.১২৯.০৪.০৪৭.১৩
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
আইন ও বিচার বিভাগ
মতামত শাখা।
বিষয়: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উথাপিত ১৩ দফা দাবীর সাংবিধানিক/আইনগত কার্যকারিতা প্রসঙ্গে।
সূত্রঃ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-এফ.এস.-০১/২০১৩, তারিখ-০৭-০৪-২০১৩খ্রিঃ
সূত্রে বর্ণিত স্মারক পত্র এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কর্তৃক উথাপিত ১৩ দফা দাবী সংক্রান্ত পত্রিকার কাটিং সদয় অবলোকন করা যেতে পারে।
২. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত স্মারক পত্রের মর্মানুযায়ী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কর্তৃক উথাপিত ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং দেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইন সমূহ পর্যালোচনা করে উক্ত বিষয়ে সাংবিধানিক/আইনগত অবস্থান নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর উত্থাপিত ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক/আইনগত অবস্থানঃ
১/ হেফাজতে ইসলাম এর দাবীঃ
সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুন:স্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রস্তাবনার ২য় দফা নিম্নরূপঃ
‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ধুদ্ধ করিয়াছিলÑ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে;’
সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ দ্বারা উক্ত প্রস্তাবনার ২য় দফায় নিম্নরূপ সংশোধন অনুমোদন করা হয়ঃ
‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় ¯^াধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অথনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে;’
উক্ত সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ রিট মামলা নং-৬০১৬/২০০০-এ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২৯/০৮/২০০৫খ্রিঃ তারিখে প্রদত্ত রায় দ্বারা বাতিল করা হয়। মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত রায় মাননীয় আপীল বিভাগ কর্তৃক সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীল নং-১০৪৪, ১০৪৫/২০০৯-এ প্রদত্ত ১/০২/২০১০খ্রিঃ তারিখের রায়ে বহাল রাখা হয়েছে। মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত উপরোক্ত রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে পূর্বে বর্ণিত ১৯৭২ সনের সংবিধানের প্রস্তাবনার ২য় দফা পুনর্বহাল করা হয়েছে।
মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত উপরোক্ত রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে সংশোধিত ৮ অনুচ্ছেদ নিম্নরূপঃ
‘(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপে¶তা এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভুত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনা মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।
(২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন-প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে.. ..।’
তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ধর্ম প্রভৃতি কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। ২৮(১) অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপঃ
‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’
ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সংক্রান্ত ১৯৭২ সনের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদটি সামরিক ফরমান দ্বারা বাতিল করা হয় যা সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ দ্বারা অনুমোদন করা হয়।
মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ কর্তৃক সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ বাতিল করে প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদটি পুনর্বহাল করা হয়েছে, যা নিম্নরূপঃ
‘১২/ ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তাবায়নের জন্য
(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর
নিপীড়ন,
বিলোপ করা হইবে।’
ধর্ম নিরপেক্ষতার উক্ত রূপ নীতি ইসলাম ধর্মের মূল চেতনার সাথে সংগতিপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) কর্তৃক সমর্থিত ও অনুমোদিত ‘মদিনা সনদ’ বিশেষ ভাবে প্রণিধান যোগ্য।
এছাড়া ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রনয়ণ ও গ্রহণ কালে ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থে সকল ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদানের বিষয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল গণপরিষদ সদস্যদের ঐকমত্য ছিল।
কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন বাংলাদেশে বিদ্যমান নেই এবং কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। বাংলাদেশের সকল ধর্মাবলম্বী নাগরিকগণ নিজ নিজ ধর্মের জন্য বিদ্যমান ব্যক্তিগত আইন অনুসরণ করে থাকেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কর্তৃক উথাপিত ১৩ দফা দাবী সর্ম্পকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই গত ০৮/০৪/২০১৩ খ্রিঃ তারিখে বিবিসি‘র সাক্ষাৎকারে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সরকারের অবস্থান দৃঢ়ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের আলোকে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ প্রণয়নকালে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভুতিকে সর্বোচ্চ সম্মানের স্থানে রেখে সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রারম্ভেই ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং অনুচ্ছেদ ২ক- এ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংরক্ষণ করায় মূলতঃ আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে সংরক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের আলোকে আনীত সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে সংশোধিত উপরোক্ত প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ১২, ২৮(১), ৩৮-এ প্রদত্ত রক্ষাকবচের ফলে হেফাজতে ইসলামের ১নং দাবীটি সংবিধানের মূল নীতির পরিপন্থি হওয়ায় উহা পূরণ করার সাংবিধানিক আবশ্যকতা
নেই।
২/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
আল্লাহ্, রাসুল (সা:) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
দন্ডবিধির ২৯৫এ ধারা অনুসারে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দন্ডনীয় অপরাধ। দন্ডবিধির ২৯৫এ ধারাটি নিম্নরূপঃ
‘Whoever, with deliberate and malicious intention of outraging the religions feelings of any class of the citizens of Bangladesh, by words, either spoken or written, or by visible representations insults or attempts to insult the religion or the religious beliefs of that class, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both.’
তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ধর্মের প্রতি অবমাননাকর কোন অপরাধ সংঘটন করলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ৫৭ ধারা অনুসারে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। উল্লিখিত আইনের ৫৭ ধারা নিম্নরূপঃ
‘ (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্ধুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন।’
হেফাজতে ইসলাম এর দাবী মতে ২/১ টি মুসলিম রাষ্ট্র ব্যতিত বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রেই বিষয়টির উপর মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিধান নেই।
বর্ণিত অবস্থায় হেফাজতে ইসলাম এর ২নং দাবী সর্ম্পকে দেশের বিদ্যমান আইন বর্তমান পর্যায়ে যথেষ্ট উপযোগী বিধায় মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইন প্রণয়নের কোন আবশ্যকতা নেই।
৩/ হেফাজতে ইসলাম এর দাবীঃ
কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা:)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ নতুন প্রজম্মের প্রগতিশীল চিন্তা ধারার যে সকল যুবক-যুবতী শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী করে আসছে তারা ধর্মদ্রোহী বা ধর্ম অবমাননাকারী নয় মর্মে শুরু থেকেই দৃঢ়ভাবে দাবী করে আসছে। শাহবাগ প্রজম্ম চত্বরে নেতৃত্বদানকারী এবং অংশগ্রহণকারী যুবসমাজ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে বহু সংখ্যক বার উচ্চারণ করেছেন যে তারা কোন সময়ই আল্লাহ্, হযরত মোহাম্মদ (স:), ইসলাম ধর্ম কিংবা অন্য কোন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে কোন বক্তব্য প্রদান করেননি এবং কোন কার্যক্রমও গ্রহণ করেননি। এতদসত্ত্বেও ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) সম্পর্কে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য সরকারের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় উক্ত বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যেই সন্দেহভাজন ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম চলবে। কোন ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সুপরিকল্পিতভাবে অন্যের উপর দোষ চাপানোর লক্ষ্যে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করছে কিনা সে বিষয়েও সরকারের তদন্ত কার্যক্রম চলবে। তদন্ত সাপেক্ষে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরকে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
৪/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্জলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
ব্যভিচার দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ। দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারাটি নিম্নরূপঃ
‘Whoever has s-e-xual intercourse with a person who is and whom he know or has reason to believe to be the wife of another man, without the consent or connivance of that man, such s-e-xual intercourse not amounting to the offence of rape, is guilty of the offence of adultery, and shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to five years, or with fine, or with both. In such case the wife shall not be punished as an abettor.’
তাছাড়া The Dhaka Metropolitan Police Ordiance, 1976 – এর ৭৫ ধারায় প্রকাশ্যে অশ্লীল আচরণের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ৭৫ ধারাটি নিম্নরূপঃ
Whoever willfully and indecently exposes his person in any street or public place or within sight of, and in such manner as may be seen from any street or public place whether from within any house or building or not, or uses indecent language or behaves indecently or riotously, or in a disorderly manner in a street or public place or in any office, station or landing place, shall be punishable with imprisonment for a term which may extend to three months, or with fine which may extend to five hundred taka, or with both.
অন্যান্য Metropolitan Police Ordinance গুলোতেও একইরূপ শাস্তির বিধান রয়েছে।
সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
‘১৯(৩) জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।’
সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
‘৩৬) জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুন:প্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩৯ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপঃ
‘(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক, জনশৃংখলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানী বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সর্ম্পকে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে –
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং
(খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’
ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অবাধ বিচরণ সংবিধানের স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। উক্ত অধিকার ক্ষুণ্ণ করে কোন বিধান প্রণয়ন করা হলে উহা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬ পরিপন্থি হবে বিধায় অনুচ্ছেদ ৭ ও ২৬ অনুযায়ী উক্ত বিধান বাতিল হবে।
উল্লেখ্য, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অবাধ বিচরণ নিষিদ্ধ করা হলে সরকারী বেসরকারী কর্মস্থলসহ জাতীয় উন্নয়নের চাবি কাঠি গার্মেন্টস্ সেক্টরে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ নারী কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বে যা জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এছাড়াও এ দাবী পূরণ করা হলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন বিঘ্নিত হবে, যা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী।
৫/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচীতে মুসলমানদের জন্য ইসলাম ধর্ম শিক্ষা এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাদের নিজ নিজ ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা বিদ্যমান। ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে তা সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের লংঘনের সামিল। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। ৪১ অনুচ্ছেদ নিম্নরূপঃ
‘(১) আইন, জনশৃংখলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে –
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;
(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।
(২) কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।
সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে নারীর প্রতি সমান আচরণ এবং নারীদের উন্নয়নের জন্য সরকারকে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ২৮ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপঃ
‘ (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।
(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত বিভিন্ন বিধান এবং সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ১৯৪৮ এ বর্ণিত বিধান জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে।
তাছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত Convention on Elimination of all forms of Discrimination against women-1982 এর ম্যান্ডেট অনুযায়ী নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে নারী নীতিমালা প্রণয়ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল।
সংবিধানের বিধান এবং জাতিসংঘের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রণীত নারীনীতি ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী না হওয়ায় এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকায় উক্ত নারী নীতি ও শিক্ষানীতি বাতিলের কারণ ও সুযোগ নেই।
৬/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
সরকারীভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
সংবিধানের ২৮ এবং ৪১ নং অনুচ্ছেদ নাগরিকদের ধর্ম চর্চার সমতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। উক্ত অনুচ্ছেদের লংঘন করে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষনা এবং তাদের প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে তারা মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপঃ
‘(১) এই ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবৎ করিবার জন্য এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।’
সংবিধানের উক্ত বিধান অনুযায়ী কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণার কোন সাংবিধানিক সুযোগ নেই।
৭/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
সংবিধানের ২৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে সরকার জাতীয় সংস্কৃতি ও শিল্পকলা সমূহের পরিপোষণ এবং উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। ২৩ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপঃ
‘রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার র¶ণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন।’
তাছাড়া সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদ জাতীয় সংস্কৃতি নিদর্শন সমূহ সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রকে ক্ষমতা প্রদান করেছে। ২৪ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপঃ
‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিতসংস্কৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থান-সমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
সংবিধানের উক্ত বিধান অনুসারে বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত সংস্কৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থান-সমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ করার সাংবিধানিক ও আইনগত কোন সুযোগ নেই।
এছাড়া, জাতিসংঘের কালচারাল হেরিটেজ সংক্রান্ত বিভিন্ন কনভেনশন এবং ইউনেসকো‘র কার্যক্রমের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের প্রস্তুব গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে নিজেকে বিছিন্ন করতে পারে না।
৮/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের কোন মসজিদে নামাজ আদায় কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধা কিংবা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সুযোগ প্রদান করেছে। সরকার নাগরিকদের এই সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সচেতন। সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে না। তবে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন মুসল্লিবেশে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এ প্রবেশ করে উক্ত মসজিদের সম্মানিত খতিবকে জুম্মার নামাজে ইমামতি করা হতে বিরত থাকতে জোরপূর্বক বাধ্য করায় এবং মসজিদের ভিতরে জায়নামাজে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় জাতীয় মসজিদ ও আপামর ধর্মপ্রাণ মুসল্লির নিরাপত্তার স্বার্থে মসজিদ প্রশাসন এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু শৃংখলামূলক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ নির্বিঘ্নে উক্ত মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় কার্যকলাপে অংশ গ্রহণ করছেন।
৯/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
রেডিও টেলিভশন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজম্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
নাটক-সিনেমায় সাধারণত সামাজিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির প্রতিফলন ঘটানো হয়। সেখানে ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় ধরনের চরিত্রই প্রদর্শন করা হয়। ইচ্ছাকৃত ভাবে নাটক-সিনেমায় ধর্মের প্রতি অবমাননাকর কোন কিছু প্রচার করা হলে তা প্রচলিত আইনেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। (দন্ডবিধি ধারা ২৯৫এ)
১০/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
পার্বত্য চট্রগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনসহ ধর্ম প্রচারেরও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্ম প্রচারের কাজ বন্ধ করা সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের লংঘন হবে। কোন এনজিও বা মিশনারী কোন ধর্মের প্রতি অবমাননাকর কোন কর্মকাণ্ড করলে তা প্রচলিত আইনেই বিচারযোগ্য।
১১/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
রাসুল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্র্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
রাসুল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যার মত কোন ঘটনা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়নি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় রেখে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বর্তমান সরকার সে প্রচেষ্টাই গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার অহেতুক কোন নাগরিকের উপর শক্তি প্রয়োগের নীতিতে বিশ্বাসী নয়। যে সকল ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচীর ছদ্মাবরণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলগাড়ী, রেললাইন, বাস-ট্রাক-প্রাইভেটকার সহ সকল প্রকার যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, সংখ্যালঘুদের বসত বাড়ীসহ বিভিন্নস্থনে অগ্নিসংযোগ করা, রেললাইন উপরে ফেলে জীবনহানীর ঘটনা ঘটানো, গাড়ীতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা, বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে জীবনহানী ও জনজীবনে আতংক সৃষ্টি করা সহ সুনির্দিষ্ট অপরাধ ও সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের অভিযোগে এবং উক্ত অপরাধ সংঘটনের উস্কানিদাতা ও হুকুমদাতা হিসেবে যে সকল অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দেশে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে তারা কেউই হেফাজতে ইসলাম এর দাবী অনুযায়ী রাসুল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতা নয়। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের ইচ্ছাকৃত ও সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের উপক্রম হলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত রূপ সন্ত্রাসী ও ফৌজদারী অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে সংশ্লিষ্টদের নিবৃত করার জন্য আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। হেফাজতে ইসলাম এর দাবী অনুযায়ী বর্তমানে দেশে কোন গণহত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়নি।
১২/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত কোন প্রকার ঘটনা সংঘটিত হয়নি। হেফাজতে ইসলাম এর পক্ষ হতে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ উথাপন করা হলে সে সর্ম্পকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। এছাড়াও সংক্ষুব্ধ যে কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতে আশ্রয় গ্রহণের অধিকারী।
১৩/ হেফাজতে ইসলামের দাবীঃ
অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও আইনগত অবস্থানঃ
রাসুল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যার মত কোন
ঘটনা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়নি। যে সকল ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচীর ছদ্মাবরণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলগাড়ী, রেললাইন, বাস-ট্রাক-প্রাইভেটকার সহ সকল প্রকার যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, সংখ্যালঘুদের বসত বাড়ীসহ বিভিন্নস্থানে অগ্নিসংযোগ করা, রেললাইন উপড়ে ফেলে জীবনহানির ঘটনা ঘটানো, গাড়ীতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা, বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে জীবনহানি ও জনজীবনে আতংক সৃষ্টি করাসহ সুনির্দিষ্ট অপরাধ ও সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের অভিযোগে এবং উক্ত অপরাধ সংঘটনের উস্কানিদাতা ও হুকুমদাতা হিসেবে যে সকল অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দেশে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে তারা কেউই হেফাজতে ইসলাম এর দাবী অনুযায়ী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতা নয়। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের ইচ্ছাকৃত ও সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের উপক্রম হলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্তরূপ সন্ত্রাসী ও ফৌজদারী অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে সংশ্লিষ্টদের নিবৃত করার জন্য আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
৩. হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উথাপিত ১৩ দফা দাবীর সাংবিধানিক/আইনগত কার্যকারিতা প্রসঙ্গে অনুচ্ছেদ ২ এ প্রদত্ত ব্যাখ্যা সদয় অনুমোদিত হলে উহা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করণের জন্য নথিটি আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৫ এ প্রেরণ করা যেতে পারে।
@চুত্রাপাতা ১৮+
Leave a Reply