• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

অন্তরাত্মার সন্ধানে – ৩য় পর্ব – (বিশু কর্মকারের ডায়েরি থেকে)

You are here: Home / পাল্লাব্লগ / অন্তরাত্মার সন্ধানে – ৩য় পর্ব – (বিশু কর্মকারের ডায়েরি থেকে)
April 28, 2019
একলব্য

লিখেছেন : বিশু কর্মকার

‘অন্তরাত্মার সন্ধানে’ শিরোনামে পাল্লা বছর পাঁচেক আগে একটি লেখা লিখেছিল। বছর দেড়েক পরে এর দ্বিতীয় পর্ব লেখে। এই দ্বিতীয় পর্বে সে আমাকে যুক্ত করে ফেলে। তারপর থেকেই আমাকে বলে আসছিল পরের পর্বটা লিখে দিতে। কিন্তু আমি সেরকম লেখক নই, তাই উলটো পাল্লাকেই বলছিলাম তার মত করে লিখতে। সে তবুও আমাকে দিয়েই লেখাবে বলে ঠিক করেছে।

এই গল্পটা অনেক আগেই পাল্লাকে বলা হয়েছিল। কলেজ জীবনের কিছু কথা একটা ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলাম, তাতেও এর কিছুটা উল্লেখ ছিল। এই মুহূর্তে আমার মাথায় যা আসছে, লিখে দিচ্ছি। পাল্লাকে বলেছি ভুলভ্রান্তি হলে বা কিছু বাদ পড়লে যেন ঠিক করে দেয়।

নটরডেম কলেজের ভর্তি এবং তারপর রামকৃষ্ণ মিশনে থাকার ব্যবস্থা–এসব নিয়েও পাল্লা সেই ডায়েরি থেকে কিছু কথা তুলে দিয়েছিল। তাই এসব নিয়ে নতুন করে কিছু বলছি না। বরাবর জানতাম যে নটরডেম কলেজে ছাত্রাবাস নেই এবং এখানে শুধু ইন্টার পর্যন্তই পড়াশুনা। এ কারণেই এক শীতের সকালে কলেজের ভেতরে অনিকেত দাদাকে দেখে অবাক হই। তিনিও অবাক হয়েছিলেন।

রিক্সা বাইরের গেটে ছেড়ে দিয়ে হেঁটে মেইন বিল্ডিংয়ে ক্লাসের দিকে যাচ্ছি। আর অনিকেতদা কলেজের বাস্কেটবল কোর্টের পাশ দিয়ে কয়েকজনের সাথে হেঁটে আসছিলেন। প্রায় মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলাম। আমি থমকে দাঁড়িয়ে বলছিলাম, ‘অনিকেতদা না!’

‘আরে বিশু, তুই এখানে!’ বলে অনিকেত দা এসে জড়িয়ে ধরছিলেন। বলছিলাম যে এখানে চান্স পেয়েছি। খুশি হলেন খুব। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। তারপর নিজের কথা বলছিলেন বিদেশে যাওয়ার জন্য কী একটা কোর্স করছেন ওখানে থেকে। আমি অবাক হয়ে বলছিলাম যে, এখানে তো থাকার জায়গা নেই। হেসে বলছিলেন খ্রিষ্টানদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে।

অনিকেতদা’রা খ্রিষ্টান। কিন্তু নামের মধ্যে খ্রিষ্টানিটির কিছু নেই। অনেকে যেমন মাইকেল, গোমেজ ইত্যাদি ব্যবহার করে, এদের মধ্যে সেরকম কিছু শুনি নাই। অবশ্য মিডল নেমে কিছু থাকলেও থাকতে পারে। আমাদের একই বংশের মানুষ, তবে ভিন্ন একটি ‘হিন্দু’ টাইটেল ব্যবহার করেন। উনার একটু তাড়া ছিল, আমারও ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, তাই বেশি দেরী করলেন না। উনাকে কোথায় কখন পাওয়া যাবে, সেটা জানিয়ে তখনকার মত বিদায় নিলেন।

উনি কলেজে পড়াকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়ির ছোটদের বলা হল যে, সবার জন্য নতুন একজন মাস্টার রাখা হয়েছে বাড়িতে। অনিকেতদা’র চেহারা খুব সুন্দর ছিল। বেশ ফর্সা ছিলেন। সকালে বাড়ির ছোটদেরকে পড়াতেন। তারপর খেয়েদেয়ে কলেজে যেতেন। বিকেলে আমাদের সাথে খেলতেন, আবার সন্ধ্যা হলে পড়াতে বসতেন। পরে জেনেছিলাম উনাদের খুলনা এলাকার এক প্রভাবশালী হিন্দুর মেয়ের সাথে প্রেমঘটিত জটিলতায় আর এলাকায় থাকতে পারছিলেন না। তাই দক্ষিণ থেকে সোজা উত্তরে এসে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। ইন্টার পরীক্ষা পর্যন্ত আমাদের বাড়িতেই ছিলেন। পরে ঢাকা চলে যান।

বর্তমানে আমাদের যেখানে বাড়ি, তার আগে আরো দু জায়গায় আমাদের ভিটে আছে। সেখানে এখনো আমাদের বংশের অন্যান্য শরিকেরা বাস করে। বুঝতে পারছিলাম যে আমরা কয়েক পুরুষ ধরে মোটামুটি মুভের উপর ছিলাম। পাল্লা এ ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে আমাদের এই তিনটে ভিটার আগে আমরা কোথায় ছিলাম। তিনি বলছিলেন, যশোর। যশোরে কোথা থেকে এসেছিলাম, সেটা তিনি জানেন না। তবে তার বাবা, মানে আমার ঠাকুরদা জানতেন। কিন্তু তিনি অনেক আগেই গত হওয়ায় এখন আর সেসব জানা সম্ভব নয়। ঠাকুরদার সময়বয়সী আর কেউ যদি আমাদের বংশে কোথাও থাকেন তাহলে তার খোঁজ করে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যেত।

বাবা বলছিলেন, যশোর থেকে আমাদের বংশ তিনভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটা মাঝারি অংশ যায় দক্ষিণে, খুলনার কুলি লাইনের দিকে। খুব সম্ভবত ইংরেজরা যখন খুলনায় কলকারখানা-রেললাইন গড়ে তুলেছিল, এটা তখনকার ঘটনা। পেশা হিসাবে এরা প্রধাণত কুলিগিরি করাটাকেই বেছে নেয়। আরেকটা বড় অংশ যায় পূর্বের দিকে, নড়াইলে। সেখান থেকে আবার একের পর এক নদী পার হয়ে হয়ে কাশিয়ানী, ওড়াকান্দি হয়ে পুরো গোপালগঞ্জ জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। (অনিকেতদা’র কাছে পরে জেনেছিলাম আমাদের বংশের একজন নটরডেম কলেজে পড়ান। বাড়ি কাশিয়ানী।) এই অংশটা জমিজমা নিয়েই বেশি ছিল। খুলনার পরে গোপালগঞ্জ জেলা জুড়েই আমাদের বংশের লোকজন সবচেয়ে বেশি। এখনো অপেক্ষাকৃত এরাই বেশি গরীব অবস্থায় রয়েছে। আরেকটা ছোট অংশ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া হয়ে পদ্মা পার হয়ে চলে আসে উত্তরবঙ্গে।

যাদের চাষাবাদের দিকে বেশি ঝোঁক ছিল তারা তার মূলত নদীর পাড়ে বসতি গড়ত। সাঁওতালদের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা জানেন যে এরা নিজেরা জঙ্গল সাফ করে জমি তৈরি করে নিত। পরে অন্য জাতের লোকেরা এগুলা জোরজবরদস্তি করে মেরেধেরে জমিজমা দখল করে এদের উচ্ছেদ করত। আর এরা নদী পার হয়ে আবার সামনে এগিয়ে গিয়ে আবার নতুন জমি তৈরি করে নিত। খুলনার অংশটা পরে পড়াশুনা করেছে, জমিজমা বেশি না করতে পেরে ব্যবসাবানিজ্যে ঝুঁকেছে বেশি। উত্তরবঙ্গের অংশটা প্রথমে বেশ জমিজমা করলেও পরের দিকে পড়াশুনা শিখে চাকরি-বাকরিতেই বেশি জায়গা করে নিতে পেরেছে ভালো। আর পূর্বের দিকে যারা গেছে তারা জমিজমা নিয়েই আছে বেশি।

এই হল মোটামুটি আমাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। কিন্তু যশোরে আমরা কোথা থেকে এলাম? যেহেতু যশোর থেকে আমরা উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বে ছড়িয়ে পড়েছি, তাই এটা বলা যায় যে আমরা যশোরে এই তিনটি দিক থেকে আসি নি। তাহলে বাদ থেকে পশ্চিম দিক। যশোর থেকে পশ্চিমে একটা সরলরেখা টানলে পাই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া হয়ে ঝাড়খণ্ড যেখানে এখনো সবচেয়ে বেশি সাঁওতালের বাস। এত দূর খোঁজার সাধ্য আমার নেই। তবে যেহেতু বার বার নদী পার হয়ে আসার কাহিনী দেখি, তাই অনুমান করি, যশোরে আমরা আসছিলাম হুগলি নদী পার হয়ে। কেন আসছিলাম? নিশ্চয়ই তাড়া খেয়ে বা বিতাড়িত হয়ে। ইতিহাস বলে, একটা সময়ে হুগলির ওপাড় থেকে অনেকেই এপাড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে বর্গী হামলার সময়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪১ থেকে বর্গি হামলা শুরু হয়। আর তার আগের বছর আলিবর্দি খাঁ বাংলার নবাব হন। বর্গি হামলা চলে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত। আলিবর্দি খাঁ বর্গি হামলা ঠেকাতে পারেন নি। পরে ১৭৫১ সালে তিনি মারাঠাদের সাথে চুক্তি করে উড়িষ্যার অধিকার ছেড়ে দিলে বর্গি হামলা বন্ধ হয়। বর্গিরা বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলেই বেশি লুটপাট করে কিন্তু তারা হুগলি নদী পার হয়ে এপাড় আসতে পারে নি। সে কারণেই হয়তো বর্গিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ পশ্চিম দিকটা ত্যাগ করে হুগলি নদী পার হয়ে পূর্বে চলে আসে। আমাদের পূর্বপ্রজন্মও হয়তো তাদের মধ্যে ছিল। আর সেখান থেকে ধীরে ধীরে আরো পূর্বে, যশোরে চলে আসে।

অনিকেতদা প্রথম যেদিন আমাদের বাড়িতে আসেন, তখন সাথে তার বাবা ছিলেন। সম্পর্কে আমার জ্যাঠামশাই হন। আগেই বলেছি যে, অনিকেতদা’র চেহারা খুব সুন্দর ছিল, এবং তিনি ফর্সা ছিলেন। কিন্তু তার বাবা ছিলেন কুচকুচে কালো। অনিকেতদা’র ইন্টার পরীক্ষার সময় আবার তার বাবা এসেছিলেন, সাথে তার মা। তখন বুঝেছিলাম অনিকেতদা তার চেহারা আর গায়ের রঙ পেয়েছেন তার মায়ের দিক থেকে।

আমাদের পরিবারের সবার শারীরিক গঠন বেশিরভাগই সাঁওতালদের মত, বাকিটা গড়পড়তা বর্তমান বাঙালিদের মত। গায়ের রঙটাও খুব একটা ফর্সা নয়, আবার সাঁওতালদের মতো কুচকুচে কালোও নয়। মায়ের কাছে শুনেছি, আমার ঠাকুরদার ঠাকুরদা নিঃসন্তান ছিলেন। পরে এক সাধুর দেয়া কী একটি ফুল বেটে খেয়ে নাকি সন্তান লাভ করেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই সেই সন্তান পূর্বপ্রজন্মের কারও মত অর্থাৎ পুরোপুরি সাঁওতালদের মত দেখতে হয় নি। কিছুটা সেই সাধুর মতও হয়েছিল। নানাজনে নানা কথা বলতে পারে ভেবে তিনি সেই ভিটেমাটি ত্যাগ করে বউ-বাচ্চা নিয়ে বর্তমানে আমরা যেখানে আছি, সেখানে এসে বাড়ি নতুন জীবন শুরু করেন।
আর এভাবেই ধীরে ধীরে বাঙালিদের সাথে মিশে যাওয়া। যারা উত্তর বঙ্গে গেছে তারা বেশিরভাগেই মুসলিম হয়েছে, দক্ষিণের দিকে যারা গেছে তারা বেশিরভাগেই খ্রিষ্টান হয়েছে, আর পূর্বের দিকে যারা গেছে তারা বেশিরভাগেই হিন্দু।

এই হল মোটামুটি গল্পটা। লেখালেখির অভ্যাস নেই বলে সেভাবে সুন্দর করে করে সাজিয়ে লিখতে পারলাম না, সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আর পরবর্তীতে অন্তরাত্মার সন্ধানে আরও যদি নতুন কোনও তথ্য পাওয়া যায় বা যদি কিছু মনে আসে, সেগুলো পাল্লাকে বললে সে নিশ্চয়ই লিখে দেবে। ধন্যবাদ।

Category: পাল্লাব্লগTag: বিশু কর্মকার
Previous Post:হিংসে হয়হিংসে হয়
Next Post:মরুক গিয়া, আমার কী!

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top