কথাটা আসলে ‘ইস্যু আসে, ইস্যু যায়’–এই ধরনের কথা বলতে বলতে বা শুনতে শুনতে সবাই কমবেশি হয়রান আবির হয়ে গেছেন–এই কথা বলাটা বা শোনাটাও আবার হয়রানের মধ্যে পড়ে।
গীর্জা-মন্দির এবং শিয়া-আহমদিয়া মসজিদে হামলা হবে, কেউ কেউ চিল্লাবে, বেশিরভাগে মজা নেবে; সুন্নি-মসজিদে হামলা হবে, বেশিরভাগে চিল্লাবে, কেউ কেউ মজা নেবে; অমোজলেমরা মোজলেম মারবে, বেশিরভাগে চিল্লাবে, কেউ কেউ মজা নেবে; মোজলেমরা অমোজলেমরে হত্যা করবে, কেউ কেউ চিল্লাবে, বেশিরভাগে মজা নেবে; ইহুদিরা ‘গাঁজা’ খাইলে কমবেশি সবাই চিল্লাবে, কিন্তু ইয়েমেন খাইলে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে–টুঁ শব্দটি না… একই ভাবে নাস্তিক কোতল, নির্বাচন, দুর্ঘটনা, ধর্ষণ, খুন, দুর্নীতি, উন্নয়ন… (দুর্নীতি আর উন্নয়ন শব্দ দুইটা পাশাপাশি দেখে একা-একা একটু হেসে নিলাম)…
এর মধ্যে গিরগিটির বাচ্চারা আখের গুছিয়ে নেবে… কুত্তার বাচ্চারা ঘেউ ঘেউ করবে, মানকির বাচ্চারা পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দেবে, বিজলানিরা বিজলার মধ্যে মোমবাতি ঢুকাবে… আর পাল্লা? লাইক বেঁইচা খাট বানিয়ে ব্যাকটেরিয়ার মা বোন বউ মেয়েদের বিছানায় তুলবে, সেই কাহিনী আবার ব্লগে লিখে ডলার কামানোর ধান্দা করবে… আর চৈত্তিরের খরায় পুইড়া পুইড়া রূপাদের ‘সর্বনাশ’ হওয়া দেখবে… ওই যে যেমন–সেদিন চৈত্রমাস… হিমুদের চোখে রূপারা সর্বনাশ দেখে। আর…
আর ক্লান্তিতে চোখ বুজলে দেখে–খাল ভর্তি বালি, মাঝে হাঁটু পানি। পাল্লা সেই পানির পাশ দিয়ে খালি পায়ে হাঁটে…
দল বাইন্ধা গরু নিয়া পাথারে গেলে চকের মধ্যে গরু ছাইড়া দিয়া সবাই খালের পাড়ে খই আর বাবলা গাছের ছায়ায় আইসা বসি। কেউ কেউ বাঁশের বাঁশি নিয়া আসে। বাজায়। ছায়ায় টান হইয়া শুইয়া পড়ি। শুইয়া শুইয়া উপরে দেখি–পাখিরা আইসা খই খায়, আর বাঁশি শুনি। মাঝে মাঝে বাঁশি নিয়া ফুঁ দেই। বাজে না।–আকাশে নাই চাঁদের মধু জোসনা/ দূরেই রহিল সে… বাজে না বাঁশি গো…
বাঁশী শুনে আর কাজ নেই… উইঠা গিয়া খই পাড়ার ব্যবস্থা করি। আরো কয়েকজনে হাত লাগায়। বইসা বইসা চিবাই। একসময় গলা শুকাইয়া আসে। কেউ কেউ জগে কইরা খাওয়ার পানি নিয়া আসে। এক পর্যায়ে পানি ফুরাইয়া যায়, নয়তো গরম হইয়া যায়। খালের মাঝখানে হাঁটুপানিতে নাইমা আঁজলা ভইরা পানি খাই।
আরেকটু আগাইলে ওই বাঁকটায় গলা পর্যন্ত পানি। ফেরার পথে গরুগুলারে ওই দিকটায় খালের মধ্যে নামাইয়া দেই। লুঙ্গি পাড়ে থুইয়া গামছা পইরা নাইমা পড়ি। গরুগুলারে গোসল দেই। মা’য় বইলা দিত আইজ গোসল দিয়া আনাইতে। রাস্তা থিকা খড় টোকাইয়া বা দূর্বা তুইলা ভালো কইরা যেন ঘইসা ঘইসা গোসল দেই যাতে গরুগুলার গায়ে গোবর-টোবর না লাইগা থাকে।
গরুর সাথে সাথে নিজেও গা-গতর ধুইয়া ঘইসা-মাইজা ডুব দেই। পাড়ে উইঠা গামছা খুইলা লুঙ্গি পরি। গামছা দিয়া গা হাত পা মুইছা মাথার উপর দেই। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সব শুকাইয়া যায়…
চোখ খুইলা মনে হয়–মনটাও ওমনে শুকাইয়া গেছে…
Leave a Reply