লিখেছেন- থাবা বাবা
চারজন মানুষ, এক জন একটি বিবাহিত দম্পতির সন্তান, একজন গভীর প্রেমে আবদ্ধ কিন্তু অবিবাহিত যুগলের সন্তান, একজন ধর্ষনের শিকার একটি অসহায় মেয়ের ধর্ষিত হবার ফলাফল, শেষ জন একজন একজন বেশ্যার সন্তান। এই চার জন মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমাদের সমাজ এই চারজন মানুষের মধ্যে শেষের তিন জনকে অবৈধ বলে ঘোষনা করেছে। কেন? কারন শেষের তিন জনের মা-বাবার মধ্যে কোন বৈবাহিক সম্পর্ক নেই।
আমাদের সাহিত্য থেকে শুরু করে সমাজ সবাই সন্তান জন্মের প্রক্রিয়াটাকে খুব সুন্দর করে ভালবাসার চাদরে মুড়িয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। বলা হয় দু’জন মানুষের ভালবাসা থেকে সন্তানের জন্ম হয়। ভালবাসা ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব না। এই চাদর মুড়ি দেয়া সত্যের সঙ্গায় ধর্ষিতা মেয়েটির সন্তান কি তাহলে মিথ্যে? অবিবাহিত একটি যুগল, যারা নিজেদের প্রচন্ড ভালবাসা নিয়ে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তাদের সন্তান তাহলে সত্য না কেন? শুধু বিয়ে নামের একটা সামাজিক আচারের অভাবে? আর সন্তান জন্মদানের পরে তাদের প্রেমকে অবৈধ বলারই বা যুক্তি কোথায়?
বিয়ে হলেই সেখানে খুব ভালবাসা থাকবে তার কি কোন ধরনের নিশ্চয়তা আছে? এখনো অগণিত বিবাহিতা মেয়ে প্রতিরাতে তাদের স্বামী দ্বারা ধর্ষিত হয়। স্বামীর দ্বারা ধর্ষনের শিকার হওয়া মেয়েটি যখন তার ধর্ষক স্বামীর ঔরষে সন্তানের জন্ম দেয়, তখন তাকে বৈধতা দেয়ার যুক্তি কি? সেও তো একজন ধর্ষিতার সন্তান।
এখনো আমাদের সমাজে বাড়ীর বৌদের স্ত্রী হিসেবে একটা অদৃশ্য বা অব্যাক্ত ভূমিকা আছে। সেটা হলো তারা স্বামী বলে একজন পুরুষের যৌন ক্ষুধা মেটানোর একটা যন্ত্র, বিনিময়ে মেয়েটা স্বামীর কাছ থেকে খাওয়া-পড়া-থাকার সুবিধা পায়। একজন প্রচলিত বেশ্যার সাথে এই মেয়েটার পার্থক্য একটাই, একজন বেশ্যাকে এক এক সময় এক একজন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে হয়, আর এই মেইয়েটিকে সারা জীবন একজন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হিসেবই কাটাতে হয়। একজন বেশ্যা যেমন আমৃত্যু তার আবদ্ধ জায়গায় শুধু দেহদান করে বন্দী জীবন কাটায় এই মেয়েটিও তাই। তাহলে তার সন্তানের সাথে বেশ্যার সন্তানের পার্থক্য করা কেন?
মসজিদের ইমাম নির্বাচন করা প্রসঙ্গে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। অবৈধ প্রেমের ফল, বেশ্যার ছেলে, যুদ্ধশিশু ও ধর্ষনের ফলে জন্ম নেয়া অবাঞ্ছিত কেউ ইমাম হতে পারবে না। তাহলে বিয়ের নামে ধর্ষনের শিকার মেয়েটির সন্তান কি মসজিদের ইমাম হতে পারে? ভাত-কাপড়ের বিনিময়ে যে মেয়েটি তার জীবন বিকিয়ে সারা জীবন স্বামী নামক একটা মানুষের যৌন চাহিদা মেটায় তার ছেলে কি মসজিদের ইমাম হতে পারে? আর বাবা-মায়ের প্রচন্ড ভালবাসা নিয়ে জন্ম হওয়া ছেলেটি, যার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধনটি ছিল না, মসজিদের ইমাম হতে তার দোষটাই বা কোথায়?
Leave a Reply