মানকির বাচ্চাদের মানববাদ

নারীবাদী না, কিন্তু মানববাদী–এমন সব মানকির বাচ্চাদের পুণ্যস্মৃতির স্মরণে এই লেখাটি উৎসর্গ করা হলো :

হুমায়ুন আজাদের মতে দুনিয়ার প্রথম বিছানাবাদী পুরুষ হলেন রাজা রামমোহন রায়। তবে আমার মতে প্রথম বিছানাবাদী পুরুষ হলেন নবী মুহাম্মদ। তিনি বুড়ি-ছুঁড়ি-সধবা-বিধবা-দাসী-বাঁদী সবাইকে বিছানায় নিয়ে ‘উদ্ধার’ করতেন। ভাবা যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনেক আগেই তিনি বিধবা বিবাহ নিয়েও ভেবেছিলেন! রাজা রামমোহনও আবার নবীর দেখাদেখি একাধিক বিবাহ করেছিলেন। সতীদাহ-প্রথা রদ করা আসলে নারীদেরকে বিছানায় নেয়ারই একটা ছুতা ছাড়া আর কিছু নয়।

তো হুমায়ুন আজাদ রাজা রামমোহন সম্পর্কে উনার বিখ্যাত নারীবাদী বই ‘নারী’তে লিখেছেন–“রামমোহন সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম নারীবাদী পুরুষ, যিনি নারীকে দিতে চেয়েছিলেন বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু, পিতৃতন্ত্র যা দিতে চায় নি।”–আচ্ছা, সতীদাহ প্রথার মত আরো কত প্রথাই তো তখন ছিল–যেমন, বর্ণভেদ প্রথা, জাতিভেদ প্রথা, শ্রেণীভেদ প্রথা। এত সব বাদ দিয়ে দিয়ে তিনি আলাদা করে নারীদের পক্ষে লেখালেখি করতেন কেন? এই যে আমার কথাই ধরেন–একখান বিয়া কইরা মাইনকা চিপায় ফাঁইসা গেছি…এরকম আরো কত পুরুষ সংসারে অশান্তির আগুনে জ্বলতেছে, কই তিনি তো আমাদের মত পুরুষদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন নি।

ওদিকে আরেক বিছানাবাদী বিদ্যাসাগর! নারীশিক্ষার পাশাপাশি বিধবাবিবাহ নিয়ে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। কই তিনি তো আমাদের মত বিয়া কইরা মাইনচিপায় ফাঁইসা যাওয়া পুরুষদের আরো কয়েকটা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে কোনো প্রস্তাব করে কোনো বই রচনা করেন নি। উলটা বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা, সেই নিয়ে কত ঘ্যানঘ্যান!

তারপর আসে বেগম রোকেয়া। কী সব ‘বিপ্লবী’ প্রবন্ধরে বাবা! কয় কিনা নারীদের অন্ধকারে রাখার জন্য পুরুষেরা ধর্মগ্রন্থ রচনা করছে! [প্যাঁ প্যুঁ প্যাঁ প্যুঁ… সরলীকরণ এলার্ট–ইয়ে মানে ‘সব পুরুষ এক না’।] শুধু লেখালেখিই নয়, মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল! কই তিনি তো আমার মত স্কুল ফেইল করা মানবের জন্য ‘মানব স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন নি। আচ্ছা, বেগম রোকেয়া ‘মানববাদী’ না হয়ে ‘নারীবাদী’ হলেন কেন?

এনারা সবাই বেঁচে থাকলে একটা প্রশ্ন করতাম–আচ্ছা আপনারা শুধু নারীদের জন্য আলাদা এসব করতে বা লিখতে গেলেন কেন?
অন্তত হুমায়ুন আজাদ বেঁচে থাকলে এটা না বলে পারতামই না–হে কবি, আপনি আপনার মানকির বাচ্চাদের বলে দিন–আপনি কেনো মানববাদ নিয়ে ‘মানব’ নামে কোনো গ্রন্থ না লিখে আলাদা করে নারীবাদ নিয়ে ‘নারী’ গ্রন্থটা লিখতে গেলেন?

সর্বশেষ প্রশ্ন–নারীবাদী না হয়ে মানববাদী হতে চাওয়া এমন কোনো মানকির বাচ্চা আছে যে ‘মানববাদী না হয়ে নারীবাদী’ হওয়ার জন্য বেগম রোকেয়ার সমালোচনা করতে বা তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটাতে সাহস করে?