বোরখা-হিজাবের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে একবার তসলিমা নাসরিন এরকম কিছু বলেছিলেন–যেসব মেয়েদের মা-বাবা বোরখা-হিজাব ছাড়া মেয়েদেরকে বাইরে যেতে দিতে চায় না, সেসব মেয়েরা যদি বোরখা-হিজাব পরে বাইরে যাওয়ার অনুমতি পায় তো বোরখা-হিজাব পরেই বাইরে যাক, পড়াশোনা করুক, চাকরি-বাকরি করুক, স্বাবলম্বী হোক…।–গত সপ্তাহ দেড়েক আগে একটা স্ট্যাটাসে এই কথাগুলো উল্লেখ করেছিলাম।
স্বনামধন্য মুক্তমনা ব্লগার আকাশ মালিক বোরখা-হিজাব পরে তনু হত্যার বিচার চাইতে আসা মেয়েদেরকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করা একজনের স্ট্যাটাসের প্রতিবাদেও প্রায় তসলিমা নাসরিনের মতই কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেতে চাইছিলেন যে বোরখা-হিজাব এখন একটা ফ্যাশনের মত মাত্র। সময়ের আবর্তনে এই ফ্যাশনও একদিন চলে যাবে, নতুন কিছু আসবে। তাই এসব নিয়ে বাঁকা মন্তব্য করলে প্রতিবাদ করতে আসা মেয়েরা লজ্জায় বা হতাশ হয়ে আবার ঘরের মধ্যে চলে যাবে। তার চেয়ে তারা বাইরে আসুক, যেভাবেই হোক, প্রতিবাদে সামিল হোক, তাতে আমাদের প্রতিবাদের কণ্ঠ আরো জোরালো হবে।
উপরের দুইটি ব্যাপারই আপাত দৃষ্টিতে খুব যুক্তিযুক্ত এবং উনাদের কথা শতভাগ সমর্থনযোগ্য।
এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকবিরোধী সমাবেশ প্রসঙ্গে আসি। সমাবেশে প্রথমে নারী শিল্পী রাখার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। কোনো মুসলমানদের সেরকম কোনো প্রতিবাদ নেই। বরং নীরব সমর্থন আছে সেই আপত্তিতে। তো তাদের কথামত আয়োজকরা অনুষ্ঠান থেকে নারী শিল্পী বাদ দিয়েছেন। আর তাতেই বান্দর লাই পেয়ে মাথায় উঠে গেছে। এবার আপত্তি জানিয়েছে–নারী দর্শকেরাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
তাদের এই দাবী মেনে নিলে তারপর কী? নারী শিল্পী আসতে পারবে না, নারী দর্শক আসতে পারবে না… আপাতত মেয়েদেরকে বোরখা-হিজাব পরে বের হতে দিচ্ছে। কিন্তু যখন শরিয়তি বিধানের কথা ভালো করে জানবে, তখন তাও দিবে না। শরিয়া আইন মোতাবেক মেয়েদেরকে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখবে–স্বামীর দাসীগিরি আর তার বাচ্চা পয়দা করা ছাড়া মেয়েদের আর কোনো কাজ থাকবে না।
এবার আবার সেই বোরখা-হিজাব পরে বাইরে বের হওয়ার তসলিমা নাসরিন ওআকাশ মালিকদের যুক্তিতে ফিরে যাই। বোরখা-হিজাব না পরলে বাইরে বের হতে পারবে না–এই কথার প্রতিবাদ না করে তাদের শর্ত মেনে নিয়ে যদি মেয়েরা বোরখা-হিজাব পরেই বের হয় তাহলে একটা সময়ে যখন ঘর থেকেই বের হতে দিতে চাইবে না, তখন কি আর প্রতিবাদের অবকাশ থাকবে? তারচেয়ে প্রতিবাদটা প্রথম পদক্ষেপেই হওয়া উচিত নয় কি? নাকি সব সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত যে সময়েই একদিন সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে?
Leave a Reply