বোরখা-হিজাবের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে একবার তসলিমা নাসরিন এরকম কিছু বলেছিলেন–যেসব মেয়েদের মা-বাবা বোরখা-হিজাব ছাড়া মেয়েদেরকে বাইরে যেতে দিতে চায় না, সেসব মেয়েরা যদি বোরখা-হিজাব পরে বাইরে যাওয়ার অনুমতি পায় তো বোরখা-হিজাব পরেই বাইরে যাক, পড়াশোনা করুক, চাকরি-বাকরি করুক, স্বাবলম্বী হোক…।
কিছুদিন আগেও আমরা ওড়নার পক্ষে মুসলমানদের জোরালো অবস্থান দেখেছি–অনলাইন-অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে। অনলাইনে ওড়না পেজগুলোর কথা ভুলে যান নাই নিশ্চয়ই। রাস্তাঘাটেও ওড়না গলায় ঝুলতে দেখলে মুসলমানরা মনে করিয়ে দিত ওটা বুকে দিতে, আবার আজানের সময় মাথায় দিতে। তারপর শাড়ি-সালোয়ার-কামিজ-ওড়নাতেও মুসলমানদের মন ভরল না। শুরু হলো বোরখা-হিজাব চাপিয়ে দেয়া। মেয়েরা বাধ্য হয়ে বোরখা-হিজাব পরা শুরু করল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বোরখা-হিজাব পরেও মেয়েরা বাইরে নিরাপদ নয়।
এই যে এখন মুসলমানরা বোরখাওয়ালী-হিজাবীদের উপরেও আক্রমণ চালাচ্ছে, এটাকেও সেই আগের ধাপগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষাই মনে হচ্ছে–একটু একটু করে বস্তাবন্দী, তারপর ঘরবন্দী। ইসলাম আলটিমেটলি যেখানে মেয়েদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখতে চায়। তারা শেষ পর্যন্ত সেই শরিয়া আইনের দিকেই যেতে চাচ্ছে, সেখানে বলা আছে মেয়েদেরকে ঘর থেকে বের হওয়াই নিষিদ্ধ। তাই এই ঘটনাগুলো ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে পরোক্ষভাবে শরিয়া আইনের পথই সুগম করতে চাইছে।
====================
যারা ল্যাদাবেন, তাদের জন্য আগে-ভাগে শরিয়া আইনের দুটি ধারা–
শারিয়া আইন এম ১০.৩ (উমদাত আল সালিক, পৃঃ ৫৩৮): স্বামী তার স্ত্রীকে পবিত্র আইন শিক্ষার জন্য গৃহের বাইরে যাবার অনুমতি দিতে পারবে। সেটা এই কারণে যে যাতে করে স্ত্রী জিকির করতে পারে এবং আল্লাহ্র বন্দনা করতে পারে। এই সব ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য স্ত্রী প্রয়োজনে তার বান্ধবীর গৃহে অথবা শহরের অন্য স্থানে যেতে পারে। এ ছাড়া স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোন ক্রমেই তার মাহরাম (যে পুরুষের সাথে তার বিবাহ সম্ভব নয়, যেমন পিতা, ভ্রাতা, ছেলে…ইত্যাদি) ছাড়া গৃহের বাইরে পা রাখতে পারবে না। শুধু ব্যতিক্রম হবে হজ্জের ক্ষেত্রে, যেখানে এই ভ্রমণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার ভ্রমণ স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্বামীও অনুমতি দিতে পারবে না। হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রী স্বামী অথবা তার মাহরাম ছাড়া শহরের বাইরে যেতে পারবে যতক্ষণ না এই দূরত্ব ৭৭ কি: মিঃ (৪৮ মাইল) এর অধিক না হয়।
শারিয়া আইন এম ১০.৪ (ঐ বই, পৃঃ ৫৩৮): স্ত্রীর ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা। স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে পা না দেবার আদেশ দেওয়া। (O. কারণ হচ্ছে বাইহাকি এক হাদিসে দেখিয়েছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন: যে মহিলা আল্লাহ্ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে সে পারবেনা কোন ব্যক্তিকে গৃহে ঢোকার যদি তার স্বামী সেই ব্যক্তির উপর নারাজ থাকে। আর স্বামী না চাইলে স্ত্রী গৃহের বাইরে যেতে পারবে না।) কিন্তু স্ত্রীর কোন আত্মীয় মারা গেলে স্বামী স্ত্রীকে অনুমতি দিতে পারে গৃহের বাইরে যাবার।
Leave a Reply