হুবাল — ইসলামপূর্ব আরবে কোরাইশ-পৌত্তলিকদের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইলাহ; যার অর্থ দেবতা, তবে একক নয়। যখন একক ভবে উপাস্য হতে শুরু করল, তখন থেকে ইলাহ-এর আগে আল উপসর্গ যোগ করা হয়, যার অর্থ একমাত্র। সেই থেকেই আল-লাহ বা আল্লাহ।
২) আবদুল্লাহ — নবীর পিতার নাম ছিল। আবদুল + আল্লাহ = দাস + আল্লাহ = আল্লাহর দাস।
৩) লাত, উজ্জা, মানাত — হুবাল অর্থাত আল্লাহর ৩ মেয়ে। ইশা নবীকেও এই হুবাল অর্থাত আল্লাহর সন্তান বলে ধরা হত। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পর কোরানে এসব কথাকে অস্বীকার করা হয়। ফলাফলে এখন ইশা নবীর জন্ম পরিচয় জানতে চাইলে মুসলমানরা পালানোর পথ খোঁজে।
৪) হুবালের আরেকটা পরিচয় ছিল — চন্দ্রদেবতা। তার যে মূর্তি পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় তার মূর্তিতে চন্দ্র খোদাই করা। সেই থেকেই ইসলামে চন্দ্র সিম্বলটা মসজিদ-মিনার-পতাকাসহ অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হয়। সেই হুবাল/চন্দ্রদেবতাই ইসলাম পরবর্তী যুগের আল্লাহ।
৫) ৯৯ নাম — কোরান-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহকে বিভিন্ন গুণবাচক বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে। সেসব আরবিক শব্দের আগে আল, আর, আস, আজ, আন প্রভৃতি উপসর্গ যোগ করে একক অর্থে বোঝানো হয়েছে। পরে মুসলমানদের মধ্যে ওসব গুণবাচক বিশেষণগুলোই নামবাচক বিশেষ্য হিসাবে নামকরণের চল হয়। তবে উপসর্গগুলো ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, কেননা সেগুলা শুধুমাত্র একক অর্থে আল্লাহর নামকরণ।
৬) ৯৯ টি বিশেষণের মধ্যে আমাদের দেশের মুসলমানরা যেসব শব্দকে নাম হিসেবে বেশি ব্যবহার করে — রহমান, রহিম, মালিক, কুদ্দুস, সালাম, মুমিন, মুহাইমিন, আজিজ, জব্বার, খালেক, বারী, গাফফার, ওয়াহাব, রাজ্জাব, ফাত্তাহ, আলিম, বাসিত, রফি, সামি, বছির, লতিফ, কবীর, হালিম, আজিম, গফুর, শাকুর, হাফিজ, মুকিত, হাসিব, জলিল, করিম, রাকিব, মুজিব, হাকিম, মজিদ, শহিদ, ওয়াকিল, মতিন, হামিদ, কাইয়ুম, ওয়াজিদ, সামাদ, আউয়াল, জহির, ওয়ালি, রউফ, ইকরাম, গণি, নাফি, নূর, হাদি, বাকি, রশিদ, সবুর ইত্যাদি।
৭) আবদুল গাফফার — গাফফার অর্থ ক্ষমাশীল। আল-গাফফার অর্থ পরম ক্ষমাশীল, অর্থাত আল্লাহ। আবদুল গাফফার হলো পরম ক্ষমাশীলের দাস…আল্লাহর দাস।
৮) আবদুল মান্নান — মান্নান মানে করুণাময়। আবদুল মান্নান মানে পরম করুণাময়ের দাস।
৯) হিন্দুধর্মে কৃষ্ণেরও খুব সম্ভবত ১০৮টি নাম আছে। একই ভাবে সেই নামের সাথে দাস লাগিয়ে কৃষ্ণদাস, ব্রজদাস, শ্যামদাস, কানাইদাস, দেবদাস, হরিদাস, বৃন্দাবনদাস ইত্যাদি নামগুলো হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত।
১০) এছাড়া হিন্দুদের মধ্যে পদবী হিসাবে বিভিন্ন প্রাণী-গাছপালা-বস্তুর নাম এখনো দেখা যায়। যেমন সিংহ পদবী এখনো অনেকে ব্যবহার করে। এই পদবী কিভাবে আসছে সেটা জানতে হলে আদিম কৌমসমাজের ইতিহাস জানতে হবে। সেখানে দেখা যাবে যে বিভিন্ন গোত্রের একেকটি উপাস্য দেবতা বা এরকম কোনো সিম্বল ছিল যার থেকে সেই গোত্রের লোকেরা নিজেদের পরিচয় দিত। এভাবেই বংশের সূত্রপাত। যেমন বলা হয় রাম ছিল সূর্যবংশের সন্তান।
১১) প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের অন্যতম প্রাচীনতম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হোরাস। তার মূর্তিতে দেখা যায় তার মাথাটা বাজপাখীর। ধারণা করা হয় এই সিম্বল তৎকালীন একটা গোত্র থেকে এসেছে যাদের উপাস্য দেবতা ছিল বাজপাখি। এই হোরাসকে শিয়ালের মাথাওয়ালা অন্য কারো সাথে যুদ্ধাবস্থায় দেখা যায়। অর্থাত অন্য পক্ষটা ছিল শিয়াল গোত্রের। তাদেরকে মেরেই হোরাস ক্ষমতায় আসে।
১২) পৃথিবীর সবখানেই প্রায় একই ভাবে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে। আগে পরে হলেও এই প্রক্রিয়াটা প্রায় একই। এই প্রক্রিয়ার কোন একটা পর্যায়ে সবখানেই এই গোত্র প্রথা ছিল। যেমন সবাই জানেন, তৎকালীন আরবেও অনেক গোত্র ছিল। তাদের মধ্যে হানাহানি থাকলেও ধর্মীয় ব্যাপারে সবাই এক হয়ে মিলেমিশে ধর্ম উদযাপন করত। প্রমাণ হিসাবে বলা যায়, কাবা ঘরে এদের সবার উপাস্য দেব-দেবীদের মূর্তি ছিল। এই কাবাকে ঘিরেই এদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি চলত। উৎসবের সময় এখানে সবাই সব ভেদাভেদ ভুল মিলিত হত।
১৩) আবু বকর মানে বকরির আব্বা, আবু হুরাইরা মানে বিড়ালের আব্বা। এরা নবীর কাছের লোক ছিল। খুব সম্ভবত বকরি এবং বেড়াল গোত্রের কেউ ছিল এরা।
১৪) বিশ্বাস, সিকদার, সরকার, ঠাকুর, চৌধুরী, হাওলাদার–ইত্যাদি “হিন্দু টাইটেলগুলা” এখনো এদেশের মুসলমানরা ব্যবহার করে।
১৫) মোহাম্মদ, আলি, খাদিজা, বকর, উমর, উসমান, আবদুল্লাহ, আল্লাহ–ইত্যাদি নামগুলাও “পৌত্তলিক নাম”। পৌত্তলিক ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও এরা আগের নাম পরিবর্তন করে নাই। কারণ ভাষার কোনো ধর্ম ছিল না, নাই।
Leave a Reply