তুমি তোমার ছেলেকে
অহোরাত্রি অসংখ্য মিথ্যার বিষ গলিয়েছ।
শৈশবে সে হাসেনি,
কেননা
সমবয়সীদের সে শত্রু বলে জানত।
চুতরাপাতা দিয়া চুলকানি দেয়া যার স্বভাব, তার পক্ষে ‘গিয়ান’ দেয়া যে কতখানি পেইন, সেটা বলে বুঝানো যাবে না। তারপর আবার গিয়ান দিতে গেলে কেমুন কেমুন যেন একটা ভাব চলে আসে। অন্যের কী হয় জানি না, আমার কাছে রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া ভোদাই ভোদাই মনে হয়। যা কইতে ছিলাম–
নীরেন্দ্রনাথের ‘তোমার জন্য ভাবি না’ কবিতার প্রথম পাঁচটি লাইন। কিছুদিন আগে পুরো কবিতাটি কপি-পেস্ট করেছিলাম। আজ এইটুকু নিয়ে বলি–
ভারত আর ফাকিস্তানের একটা তুলনামূলক চিত্র নিজেরাই এঁকে নিতে পারবেন। একই সময়ে জন্ম নেয়া পাশাপাশি দুইটা রাষ্ট্র শুরুতে কেউ কারো চেয়ে কম ছিল না। তারপর ফাকিস্তান হাঁটল ধর্মের পথে, মৌলবাদের পথে, সংখ্যালঘুদের কোতল করার পথে। আজ সেখানে প্রায় সবাই মুসলমান, কিন্তু তারপরও সংঘাত এদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু কেন?
ভারতও ইচ্ছে করলে ধর্মের পথে হাঁটতে পারত, ইচ্ছে করলেই দেশের সংখ্যালঘুদের কোতল করতে পারত। সেই দিকে না গিয়ে তারা চেষ্টা করছে সবাই মিলেমিশে থাকার, একসাথে দেশটাকে উন্নত করার।
ফাকিস্তানীদের মনোভাব বুঝতে পেরেই বাংলাদেশীরা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু রক্ত বেইমানী করে না বইলা একটা কথা আছে। আজ সেই রক্ত কথা বলছে…বাংলাদেশীরাও ফাকিস্তানীদের দেখানো পথে হাঁটছে। আমাদের রক্তের মধ্যে লুকিয়ে আছে সেই মিথ্যা আর ঘৃণার বিষ। আমাদের শেখানো হয়েছিল বিধর্মীরা আমাদের শত্রু, ভিন্ন মতবাদীরা আমাদের শত্রু…সেই ঘৃণার বিষ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরাও ধর্মের পথে হাঁটছি, মানুষকে ঘৃণা করে করে বড় হয়েছি।
উপরে প্রশ্ন রাখছিল ফাকিস্তানে বিধর্মীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তাদের মধ্যে সংঘাত কেন? কারণ ততদিনে রক্তের মধ্যে সংঘাত মিশে গেছে। এই রক্ত এখন অন্যদের হিংসা আর ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। একই ভাবে আমরাও সে দিকে আগাচ্ছি। আমরা বিধর্মীদের ঘৃণা করি, ভারতে হিন্দু বেশী বলে ভারতের সাথে এদেশের হিন্দুদেকেও হিংসা করি, তাদের সম্পত্তিতে লোভ করি।
ফাকিস্তানের মত একদিন এদেশেও বিধর্মী থাকবে না। কিন্তু আমাদের রক্তের সাথে মিশে থাকবে লোভ, হিংসা, ঘৃণা। এই রক্তই তখন ভাইতে ভাইতে সংঘাতে জড়িয়ে দেবে। ভাইয়ের ভালো থাকায় আমাদের হিংসা হবে, ভাইয়ের সম্পত্তিতে আমাদের লোভ হবে–তার প্রতি ঘৃণা বের হয়ে আসবে। একদিন নিজেরা নিজেরাই মারামারি-কাটাকাটি করে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। এবং আমরা সেই দিকেই যাচ্ছি…
পুরা কবিতাটা আরেকবার পড়ি–
তুমি তোমার ছেলেকে
অহোরাত্রি অসংখ্য মিথ্যার বিষ গলিয়েছ।
শৈশবে সে হাসেনি,
কেননা
সমবয়সীদের সে শত্রু বলে জানত।
যৌবনে সে নারীকে ভালবাসেনি,
কেননা
নারীকে সে নরক বলে জানে।
ধীরে-ধীরে সেই অকালবার্ধক্যের দিকে সে এখন
এগিয়ে যাচ্ছে,
চুলগুলিকে যা সাদা করে দেয়,
কিন্তু চিত্তের মালিন্য যা মোচন করতে পারে না।তোমার জন্য আমার কোনো ভাবনা নেই,
কিন্তু
তোমার ছেলের জন্য আমার বড় দুঃখ হয়।তুমি তোমার মেয়েকে
অহোরাত্রি অসংখ্য কুৎসার কালি
গিয়িয়েছ।
শৈশবে সে ফুল কুড়ায়নি,
কেননা সে শুনেছিল
প্রত্যেকটা গাছেই আছে একানড়ের বাসা।
যৌবনে তার জানলা দিয়ে বাতাস বয়ে যায়নি,
কেননা
প্রতিবেশীর পুত্রকে সে লম্পট বলে জানে।
ধীরে-ধীরে সে এখন সেইদিকে এগিয়ে যাচ্ছে,
যেখানে
দুপুরগুলি বিকেলের মতো বিষণ্ণ তার
বিকেলগুলি রাত্রির মতো অন্ধকার।তোমার জন্য আমার কোনো ভাবনা নেই,
কিন্তু
তোমার মেয়ের জন্য আমার বড় দুঃখ হয়।
Leave a Reply