লিখেছেনঃ আরিফুর রহমান
অবস্থাদৃষ্টে যেইটা বোঝা যাইতেছে বাংলাদেশের সউদিপন্থী সরকার ‘ব্লগিং’ বিষয়টা ভালো চোখে দেখতেছে না। যেই ব্লগারদের অপরিসীম পরিশ্রমের বিনিময়ে গত নির্বাচনে রাজাকারের বিচারের মুলা ঝুলাইয়া আম্লীগ সরকারে আসলো, মাঝখানের পাঁচবছর ছাগুদের আশকারা দিতে দিতে এমন অবস্থা করে ফেলেছে যে, এইবারের নির্বাচনে সেই ব্লগাদেরই শত্রু বানানো জরুরী হয়ে পড়েছিলো।
ব্লগাররা সবার জন্যই চিন্তার বিষয়, কারন তারা কারো নুন খায় না, কারো কাছে পোঁদ ভাড়া দেয় না, কারো ধার ধারে না। দেশ, মানুষ এবং নৈতিকতাই যাদের ব্লগিঙের প্রেরণা যোগায়।
অবশ্য লাইক-পিয়াসী কিছু সেলিব্রেটী এই লিস্ট থেকে বাদ দিতে হবে। ইনাদের ‘বিপুল’ জনপ্রিয়তার পেছেনে কাজ করে একটা বিশাল নিক ফ্যাক্টরি, একই নিক ফ্যাক্টরি সামহোয়ারকে সাম-খোঁয়ার-ইন-ব্লগ বানিয়ে ফেলেছিলো, তারপর গত তিনবছরে সবাই যখন ফেসুবক এক্সচেঞ্জে হিজরত করেছে, তখন নিক ফ্যাক্টরির আঁকশিগুলো ফেসবুকে আমাদের প্রত্যেকের ফ্রেন্ডলিস্টে ঢুকে বসে নানান কিসিমের আবজাব শেয়ার করতে থাকে। সেন্ট্রাল কোন একটা কমান্ড থেকে তাদের কাছে নিয়মিত পরামর্শ আসে আজকে কি বলদারগু বিতরণ করতে হবে বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে, তারা সকাল থেকে বিকাল মোটামুটি আশিভাগ ‘আনসাসপেক্টিং’ জনগনকে মোটামুটি বুঝিয়ে ফেলে, যে ‘ব্লগিং আসলে নাস্তিকতা’, কিংবা ‘গনজাগরন ‘নষ্ট’ করবার পেছনে আসলে নাস্তিকেরাই দায়ী’, কিংবা ‘সাঈদী’র পুটু-মোবারক চাঁদে দেখা গেছে’, কিংবা ‘টিকা দিলে বাচ্চা মরবে’, এই তালিকা দীর্ঘ।
সারাদিন হাজার হাজার নিক মোটামুটি আমাদের ফেসবুক ওয়াল, ব্লগের পাতা সয়লাব করে ফেলে গারবেজ দিয়ে। গুয়ের সেই স্রোত ঠেলে আমাদের আর চিন্তাশীলতার চর্চা করা হয়ে ওঠে না। আমাদের সেলিব্রেটী ব্লগাররা তাদের লাইক/ফলোয়ার/ফ্রেন্ড ইত্যাদি গুনতে গুনতে একটা মানসিক কুয়ার ভেতরে ঢুকে যান, ভক্তরাই সংঘবদ্ধভাবে আমাদের সেলিব্রেটীদের ট্রেইন করতে থাকেন কখন কি বলতে হবে, কিংবা কোনটা ভুল করে বলে ফেললে কপালে মাইর আছে, অথবা কোনটা এই মুহুর্তে বললে বাতাসের সঠিক দিকে পপুলারিটির সুগন্ধ ম ম করতে থাকবে।
প্রাগৈতিহাসিক তেলাপোকা থেকে উঠতি সেলিব্রেটি কেউই বাদ যায় না, বাদ যায় না মুক্তমনা, মডারেট কিংবা ছাগু সেলিব্রেটিও। আড়াল থেকে নিক ফ্যাক্টরির নিয়ন্ত্রন যার বা যাদের হাতে, তারাই আমাদের চিন্তার স্রোত নিয়ন্ত্রন করে আসছে, আমরা হয়তো জানিও না।
সমস্যা হয়ে গেছে শাহবাগের বিষ্ফোরণ শুরু হয়ে, সউদিপন্থী সরকার এর নিয়ন্ত্রন হাতে নিয়েও খুব একটা সুবিধে করতে পারে নাই, কারন ততোক্ষণে সরকারী দল, তার ভবিষ্যৎ শয্যাসঙ্গী, প্রাক্তণ শয্যাসঙ্গী ইত্যাদি বিষয়াদি জনগনের নজরে চলে এসেছে। নন্দঘোষ হিসেবে একমাত্র গোষ্ঠী যারা সত্যিই দেশকে একবিংশ শতাব্দীতে আনতে চেয়েছিলো, সেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠী নিধার্মিক, নাস্তিকদেরই সকলে মিলে টার্গেট করে ফেলে। সকল সমস্যার দায় নাস্তিকদের কাঁধে চাপানোর হঠকারিতায় আওয়ামী লীগের ব্লগার বাহিনী, ইসলামিস্ট ছাগ্লার বাহিনী সকলেই রাতের আঁধারে একমত হয়।
ভাবখানা এমন, এই দেশ সউদিপন্থী মডারেট এবং উগ্র দুই গোষ্ঠী আপসে নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিলো, বাকি ধর্ম, নিধর্ম, মানুষ এরা যেন অপাঙতেয়, নমঃশূদ্র। ছাগুরা চেঁচায়.. ‘গনজাগরন আসলে নাস্তিক, নাস্তিক, নাস্তিক’… আমাদের মডারেট-রাও তাদের টুপি পড়া ঘাড় দুলিয়ে সায় দিতে দিতে আরো জোরে চেঁচায়… ‘এই নাস্তিকদের জন্যই তো ছাগুরা বলতে পারে গনজাগরন নাস্তিক, নাস্তিক, নাস্তিক’। নাস্তিকদের তাই খতম্ করো, তাদের জেলে ঢোকাও, গোল্লায় যাক বাক-স্বাধীনতা, গনতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি, পরকাল সবার আগে।
মডারেট, যাদের কিনা আমরা আধা-সেদ্ধ-গনতান্ত্রিক বলে ভুল করি, তাদের আধা-সউদি-আধা-গনতান্ত্রিক মগজে খেলা করলো না, এইসব সুর মেলানো আসলে এতোদিনের রাজাকার বিচার প্রক্রিয়ার পিঠে ছুরি মারারই আরেক নাম। এ্ই মডারেটদের ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা ছাগুরাই রাজাকার আব্বাদের বাঁচিয়ে দেবে, আর নিক ফ্যাক্টরির ক্রমাগত বুলশিট স্রোতের বদৌলতে আমরাও গ্লাসে করে গরম সেই বলদারগু চুক চুক করে খেতে থাকবো তারিফ করতে করতে।
সউদি ইজম আমাদের পট মারা দিতে থাকবে যুগে যুগে, বিচার চাই বিচার চাই গান আমরা গাইতে থাকবো দশকের পর দশক ধরে, কোনদিনও আর একাত্তরের শহীদেরা, ধর্ষিতারা ন্যায্য বিচার পাবে না। কাল্পনিক পরকালের লোভে আর ভয়ে আমরা বাস্তব জীবনকে এভাবেই প্রতিনিয়ত ধর্ষন হতে দিয়ে বেঁচে থাকার অভিনয় করে যাবো।
Leave a Reply