“বেয়াদব” পেজ হইতে-
স্কুলে পড়াকালীন কিছু লিফলেট বিলি হতে দেখতাম। তখন ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না। লিফলেটগুলো কিছু অদ্ভুত কথাবার্তায় ভর্তি থাকত। এগুলোতে কিছু ধর্মীয় ব্যাপার লুকিয়ে থাকত।
যেমন, কোন এক গ্রামে কবরের ভিতর থেকে তীব্র আওয়াজ শোনা গেছে এবং কবরের ব্যাক্তিটি তাঁর পাপ কর্মের জন্য ক্ষমা চাইতেছে কারো নিকট। পরবর্তীতে গ্রামবাসী সে কবর খুঁড়ে দেখল লোকটিকে বড় অজগড় সাপে জড়িয়ে ধরেছে এবং লোকটির চেহারা ভয়ংকর হয়ে গেছে। অর্থাত্ সৃষ্টিকর্তা পাপীব্যক্তিটিকে শাস্তি দিচ্ছে। সর্বশেষ লিফলেটটির নিচে লেখা থাকত এই লেখা যে পড়বে সে যদি তা ১০০ জনের সাথে শেয়ার না করে, তবে তার পরিবারের অমঙ্গল হবে। যদিও এর কোন বাস্তব ভিত্তি ছিল না। তবুও অমঙ্গলের ভয়ে একবার ১০০ টি চিঠি লিখেও ছিলাম। কিন্তু মানুষ সচেতন হয়ে যাওয়াতে খুব একটা বিলি করতে পারি নি। পরবর্তিতে আমিও এইসব এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতাম বলে আর পড়া হয়ে উঠে নি। এই ভুলে যাওয়া বিষয়টি ১০ থেকে ১২ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে মনে পড়ল। ইদানিং বিভিন্ন পেইজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সব লিফলেটগুলোর ডিজিটাল প্রচার শুরু হয়েছে এবং এখানেও শেয়ার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদিও ইন্টারনেট ঘেঁটে মুক্তমনা বন্ধুগণ এসব মিথ্যা হিসাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবুও ধর্মান্ধদের এইসব অপপ্রচার থেমে থাকেনা শুধুমাত্র সামান্য লাইক আর শেয়ারের আশায়। সস্তা জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে প্রতিদিনই এইরকম পোস্ট প্রচার করে সাধারণ মানুষের মাঝে মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে। একদিন হয়ত এই মিথ্যাগুলো চরম সত্য হিসাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ানো হবে এবং আরও একটি প্রজন্ম মিথ্যার আশ্রয়ে সমাজে বড় হয়ে উঠবে । ধর্মান্ধতা সত্যিই ভয়ংকর কেননা এর মাধ্যমে মানুষ সত্য হতে বঞ্চিত হয়।
– Myforbidden Kingdom
[বর্তমান যুগে এ ধরণের প্রতারণা পেয়েছে নতুন মাত্রা। বিভিন্ন ফটোশপের সাইট থেকে নেয়া বৃহদাকার কঙ্কালকে বানিয়ে দেয়া হয় আদম বা আদ জাতির কঙ্কাল! ধর্মান্ধরা এই ব্যাপারটা নিয়ে এতই লাফালাফি করেছিল যে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সাইটে এই নিয়ে আর্টিকেল পর্যন্ত লেখা হয়েছিল (http://bit.ly/s4O4)।
ফটোশপে বানানো উড়ন্ত কোন পাথর বানিয়ে দেয়া হয় আল্লাহর কীর্তি! ঢালু রাস্তা দিয়ে ইঞ্জিন ছাড়া গাড়ি চলার ঘটনাকে বানিয়ে দেয়া হয় জ্বীনের কীর্তি! এছাড়া গাছ, মাছ, পাতা আরো কত কি তে ভেসে ওঠে আল্লাহর নাম! (এ নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত একটি কমেন্ট http://on.fb.me/AtSFQg)।
মানুসের মস্তিষ্কেও তারা কি সব সেজদার মিল পায়! (http://on.fb.me/yqSXYg)।
ঐতিহাসিক স্থান বিকৃতিতেও এদের জুড়ি নেই। দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলার ছবিকে তাই বানিয়ে দেয়া হয় বাবরি মসজিদের ছবি! (http://bit.ly/ABViyM)।
ধর্মীয় পেজ থেকে হটি নটি জোক্স পেজও ভাও বুঝে এ ধরনের পোস্ট দিয়ে যায়। সাথে থাকে প্রবল আকুতি ‘প্লিজ লাইক দিন, প্লিজ শেয়ার করুন, সবাইকে জানিয়ে দিন’। হতাশাজনক ব্যাপার হল, এগুলো যারা লাইক-শেয়ার দেয়, বিশ্বাস করে কমেন্ট করে তারা বেশিরভাগই সমাজে উচ্চশিক্ষিত। কেউ বা কোন ভার্সিটিতে অধ্যয়নরত, কেউ গ্রাজুয়েট, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার! ]
Leave a Reply