টাকা মেরে খাওয়া নিয়ে কিছু কথা। একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছি।
একদিকে নারীবাদ-সাম্যবাদের জয়গান গাওয়া মানববাদীদের অর্থ-বিত্ত, গাড়ি-বাড়ি, ভালো চাকরি, ভালো বেতন, কোরমা-পোলাউ, ব্লাক লেভেল-রেড লেভেল, আভিজাত্য-প্রতিপত্তি, ফলোয়ার-লিক-কমান্ড-গ্রুপিং-এর অহংকার (বিশেষ করে প্রবাসের), অন্যদিকে এর-ওর কাছ থেকে মানববাদীদের ‘টাকা মেরে খাওয়া’র কাহিনী (বিশেষ করে দেশের), সেই সাথে পাল্লার মতো আজাইরা বালছাল বিছানাবাদীদের শুধু বিছানা আর খাটের গল্প–কোনটা রেখে কোনটা বলি…
আপাতত দেশী মানবতাবাদীদের নিয়া একটু বলি–এরা বেশিরভাগেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, কেউ বা পড়াশুনা শেষ করে ছোটোখাটো কিছু একটা করছে, নয়তো চাকরির অভাবে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে… কিন্তু দেশের শহরভিত্তিক জীবনযাত্রার ব্যয় তো বেড়েছে… বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদাগুলো মিটিয়ে একটু ভদ্রস্থভাবে বেঁচে থাকার–না এটাকে লোভ বলব না, ইচ্ছা বলা যায়–এই ইচ্ছাটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অভাবে স্বভাব নষ্ট–বছর পাঁচ দশ আগে যাদেরকে চিনতাম, তাদের তখন ক্যারিয়ার, ফিউচার প্লান বলে সিরিয়াস কিছু ছিল না। কিন্তু এতদিনে তারা অনেকেই এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যারা প্রবাসী তারা কিছু না কিছু করে খাচ্ছেন। বড় কিছু না হলেও আমার মতো ন্যূনতম মজুরিতে ফাস্ট ফুডের দোকান-রেস্টুরেন্টে ইচ্ছে করলেই কাজ করা যায়। বলতে চাইছি যে, কেউ একেবারে না খেয়ে থাকেন না। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয়ে যাচ্ছেই। আর না হলে সরকার তো আছেই–কাউকে একেবারে না খাইয়া রাখে না।
কিন্তু দেশে এই অবস্থাটা নেই। ইচ্ছে করলেই ন্যূনতম মজুরিতে একটা কাজে ঢুকে গেলাম–এরকম ব্যবস্থা সাধারণত দেশে নেই। মাটি কাটা, ভ্যান-রিক্সা চালানোর মতো কায়িক পরিশ্রমমূলক কাজের মতো যারা দিন আনি দিন খাই টাইপের কাজ করেন, খেয়াল করে দেখবেন–এদেরও সারাবছর কাজ থাকে না। প্রাইভেট টিউশনি করে অনেকে চলেন বটে, কিন্তু সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও অন্যদের শিক্ষা দেয়ার মতো যোগ্যতা বা ইচ্ছা থাকে না। মানে সবাই সব কাজ পারবে না। আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ভাতের দোকান, চায়ের দোকান খুলে বসার মতো শিক্ষা বা সমাজ আমাদের নেই।
ওদিকে বেঁচে থাকার আনুষঙ্গিক খরচসহ নিত্যনতুন জিনিসের হাতছানি, সমাজে-বন্ধুমহলে স্ট্যাটাস বজায় রাখা–সব মিলিয়ে এরা যখন দিশেহারা, তখন এদের ওই “টাকা মেরে খাওয়া”র খবরটা শুনলে খুব বেশি একটা অবাক হই না। এর সমাধান কী, আমার জানা নেই।
Leave a Reply