লিখেছেন শহীদুজ্জামান সরকার
একজন মানুষ যখন ধর্ম পালন করে থাকে, তা তার ব্যক্তিস্বাধীনতা বা ব্যক্তিগত ব্যাপার। আবার কেউ যদি ধর্ম না মেনে থাকে, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস না করে থাকে, তাহলে সে ধর্ম পালন করবে না, সেটাও তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। সমস্যা ততক্ষণ পর্যন্তই উদ্ভব হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ কারো ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। এখন লক্ষ্য করার বিষয়, এই দুই গ্রুপের মধ্যে কে কার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে।
যে গ্রুপটা ধর্ম পালন করে থাকে অথবা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, তাদের সহজ করে আস্তিক বলে। এদের বিশ্বাসটা গোঁড়া ও যুক্তিহীন। আর দ্বিতীয় গ্রুপটাকে বলা হয় নাস্তিক। এরা কোনো কাল্পনিক ঈশ্বর ও কোনো ধর্ম মানে না এবং পালনও করে না। আস্তিক গ্রুপটার মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম বিষয়ে পার্থক্য ও মতামতে মিল নাও থাকতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর বিষয়ে সকলেই একমত। এরা সকলেই ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। ঈশ্বর বলে কেউ আছে – এটা তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে নেয়। সেটা হোক কোনো হুবাল অথবা আবাল।
আর নাস্তিকদের একটিই কথা – কোনো প্রমাণ নেই বলে তারা কোনো হুবাল-আবাল ঈশ্বরের অস্তিত্বের দাবি মেনে নেয় না অর্থাৎ কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। এরা চায় যুক্তিসহ প্রমাণ। নাস্তিকতার মধ্যে কোনো গোঁড়ামি থাকা সম্ভব নয় বাই ডেফিনিশন। ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন দাবিকে অস্বীকার করায় গোঁড়ামি কোথায়?
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে, কোনো নাস্তিক কি প্রমাণ করতে পেরেছে ঈশ্বর বলে আসলে কেউ নেই? আছে কি নেই, এটার প্রমাণ তো ঈশ্বরের অস্তিত্ব দাবিকারী বা স্বয়ং ঈশ্বরেরই দেয়া উচিত। ঈশ্বর কি কানে বোবা ও মুখে কালা? নাস্তিকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে বলতে পারে না – আমি আছি আমি আছি?
আবার অনেকে বলে, কেন আপনারা কি দেখেন না, পবিত্র বইগুলোতে ঈশ্বর আছে বলে লেখা আছে? বিষয়টা ‘কালুর গরু খাতায় আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই’-এর মতো। তারপরও যদি বিষয়টা নিয়ে তারা বলতে থাকে, তাহলে আমিও বলি: আমিও একটা পবিত্র বই পড়েছি, সেই বইটাতে লেখা আছে – আকাশ থেকে প্রতিদিন অদৃশ্য ধারায় বাল ঝরে পড়ে। এখন কি আপনি বিষয়টা মেনে নেবেন? বিশ্বাস স্থাপন করবেন সেই বইটার ওপর? নাকি প্রমাণ চাইবেন?
এখন কথা হচ্ছে, কে কার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। ধর্ম তথা আস্তিককুল সব সময় নাস্তিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে আসছে। তারা জোর জবরদস্তি দিয়ে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার কথা বলে। এমনকি অসংখ্য মানুষহত্যাও করেছে। আগের যুগে যে কত খুন হয়েছে, সেটা বলতে পারি না, কিন্তু আপনারা নিজেরাই এখন লক্ষ্য করে দেখুন, সমসাময়িক সময়ে কত মানুষকে ধর্ম না মানার কারণে হত্যা করা হয়েছে।
এমন কি আস্তিকদের কিতাবগুলোতে নাস্তিকদের হত্যার বিষয়ে বলা আছে। এই বিষয়ে ইসলাম ধর্মে কী বলা আছে, নিচে কিছু কুরানের আয়াত দিচ্ছি।
- অবিশ্বাসীদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই। যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি। (সুরা ২:১৯১-২)
- তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্তসমূহকে বিরত না রাখে, তবে তোমরা তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি। (সুরা ৪:৯১)
- মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। (সুরা ৯:৫)
ইহুদি-খ্রিষ্টানদের জন্যও আছে পরম বাঁশ:
- খ্রিষ্টান এবং ইহুদীরা মান্য করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং বড়াই করে যে এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে। (সুরা ৪:৫১)
- কাফেরদের জন্য দোযখের শিখায়িত আগুনই যথেষ্ট। (সুরা ৪:৫৫)
অন্য ধর্মগুলোও কিন্তু নাস্তিকদের বিষয়ে এরকমই অবস্থান নেয়। যেহেতু আমি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, সেক্ষেত্রে ইসলাম সম্পর্কে বেশি জানি এবং বলি।
পক্ষান্তরে নাস্তিকরা কিন্তু কখনো ধার্মিকদের ধর্ম মানতে বাধা দেয়নি। আশা করি, কখনো দেবেও না। আস্তিককুলের মত নাস্তিকদের তো কোনো পবিত্র বইও নেই যে, তারা সেটার বিধান মেনে চলবে। অনেকে বলে, নাস্তিকেরা লেখালেখির মাধ্যমে ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে, আস্তিকদের অনুভুতিতে আঘাত দেয়। তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করে। ইতিহাস প্রমাণ করে, প্রচলিত বিশ্বাসে আঘাত না করে পৃথিবী এগোতে পারে না। আর তাছাড়া বিশ্বাসে আঘাত পেলেই হত্যা করাটা কি মানবিক কাজ?
Leave a Reply