ভ্যালেনটাইন্স-ডে (ভালোবাসা দিবস) টার্মটা প্রথম শুনি ঠিক ২০ বছর আগে।
(বাকিটা #অনলিমি)
তখন ‘ভোরের কাগজ’ থেকে একটা গ্রুপ বের হয়ে গিয়ে সবে ‘প্রথম আলো’ খুলেছে। এক বন্ধু তখন ভোরের কাগজে লেখালেখি করত। ওই সময়ে যারাই ভোরের কাগজে লেখালেখি করত, প্রায় সবাইকে এক এক করে মতিউর রহমান ডেকে পাঠিয়েছিলেন, নয়তো তারাই ঢাকা গিয়ে দেখা করে আসতেন। বন্ধুও ঠিক করল ঢাকা যাবে–ভোরের কাগজেই থাকবে, নাকি প্রথম আলোতে যোগ দেবে–এই নিয়ে কথা। মতিউর রহমান কইলেন যে নতুন পত্রিকা, চলবে কি না ঠিক নেই, তাই তখনই বেতনের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। বেতন নিয়ে চিন্তিত হলে ভোরের কাগজেই থাকতে, আর বেতনের উপর নির্ভরশীল না হলে প্রথম আলোতে যোগ দিতে। বন্ধু তখন ভোরের কাগজ থেকে যা পেত তাই দিয়েই মোটামুটি হাতখরচ চালাত। সে ঠিক করল ভোরের কাগজেই থেকে যাবে।
তো সাংবাদিক বন্ধু ঢাকা যাবে, আমাকেও বলছে সাথে যাব কি না। আমি তখন প্রথম আলো নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। ‘বন্ধুসভা’ নিয়ে যা করছিলাম, সেটাকে এখন রীতিমতো বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়। বন্ধুসভায় তখন নাম দিতে হলে ফরম ফিল-আপ করে সাথে পাসপোর্ট সাইজের ছবিও দেয়া লাগত। সুযোগ পেয়ে ভাবলাম কাজে লাগাই–ফরমটা সরাসরিই জমা দেয়া যাক, সেই সাথে প্রথম আলোর অফিসটাও দেখে আসা হবে।
বিশু তখন ঢাকায়। ফার্মগেটের কাছাকাছি এক মেসে থাকত। দুজনে এসে উঠছিলাম বিশুর মেসে। অন্য রুমমেটরা কী কারণে যেন মেসে ছিল না ওই সময়। মেস মোটামুটি খালি। আমাদের থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বিশু খুশিই হলো। তবে রুমমেটরা না থাকতে বুয়াও নেই। নিজের জন্য টুকটাক রান্না বিশু নিয়েই করে নিচ্ছিল। কিন্তু আমরা আসাতে খাওয়াদাওয়া বেশিরভাগ সময়েই বাইরে হতো।
পরদিন প্রথম আলো অফিসের কাজ শেষ করেই নাইট কোচে বাড়ি ফিরে আসার কথা। বিশু বলছিল যদি বাড়িতে কোনো কাজ না থাকে তবে কিছুদিন থেকে যেতে। থেকে গেলাম আমরা।
সারাদিন বিস্তর ঘোরাঘুরি হতো, দুপুরে খেয়েদেয়ে গিয়ে বসতাম শেরে বাংলা নগর পার্কে (তখন এই পার্কের নাম জানতাম না)। পোলাপানরা এই এতটুকু পার্কের মধ্যেই কীভাবে ম্যানেজ করে যেন ক্রিকেট খেলত। সন্ধ্যা হলে যেতাম সিনেমা দেখতে। আনন্দ সিনেমা হল, পাশে আরেকটা ছিল… আরেকটা কাওরান বাজার মোড়ের একটু আগে–নাম মনে পড়ছে না।
শো শুরুর আগে টাইম থাকলে ফার্মগেটের সুপার মার্কেটে ঘোরাঘুরি। একদিন বিশু বলল ক্যাসেট কিনবে। ৩৫ টাকা করে, ৩টা নিলে ১০০। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ কাভার পিকটা দেখে পছন্দ হলো (যদিও তখন জানতাম না যে ওটা একটা সিনেমার নাম, ভাবছিলাম নচিকেতার নতুন ক্যাসেট), জেমসের ‘ঠিক আছে বন্ধু’ বা মাকসুদের ‘অপ্রাপ্ত বয়স্কের নিষিদ্ধ’ (মেসে দুইটাই ছিল, তাই ঠিক মনে নেই কোনটা ওই সময় কেনা হয়েছিল), আরেকটা ইংরেজি না হিন্দি–ঠিক মনে নেই।
কারণ মেসে যখন বিশু ওটা বাজাত তখন শুধু ‘ভ্যালেনটাইন্স-ডে’ কথাটা কানে আসত–টার্মটা ওই-ই প্রথম শোনা। আগে-পরে আর কিছু মনে নেই কারণ ইংরেজি-হিন্দি–দুইটার কোনোটাই বুঝি না, তাই অন্তত এটা মনে আছে যে ওটা বাংলা গান ছিল না। তবে মনের মধ্যে সুরটা এখনো প্রায়ই বাজে। বাজলেও ভ্যালেনটাইন্স-ডে-এর ভেতরে কোনোদিন ঢোকা হয়ে উঠল না!
[কয়েক বছর আগে এরকম দিনে এক বা একাধিক ফোন এসেছিল একজনের কাছ থেকে… জানতাম সেই ফোনের সাথে ‘ভ্যালেনটাইন্স-ডে’-এর কোনো সম্পর্কই ছিল না–সেটা হুদাই, কিছু না, এমনি… তাই ফোনটা তখন ধরা হয় নাই… তারপর বহুদিন কেটে গেছে… এরকম দিন এলে ফোনটার দিকে তাকাই… ফোনটা হাতে নিই… কিছু না… এমনি…]
==========
আপডেট – ভ্যালেনটাইন্স ডে
valentine’s day hindi song 1999 লিখে সার্চ দিয়ে ইউটিউবে সেই প্রথম শোনা ভ্যালেনটাইন্স ডে গানটা পেয়ে গেলাম। হ্যাঁ, যতদূর মনে পড়ে, এই গানটাই… পাইলাম, আমি উহাকে পাইলাম…আর কী যেন কয়–কো-ইনসিডেন্স না কী যেন…অদ্ভুত–এখানে দেখি রাইমা…
Leave a Reply