লিখেছেন- প্রলয় হাসান
শুনলাম, ভারতীয় পণ্যসমূহ বর্জন করতে গিয়ে পারিবারিকভাবে কেউ কেউ বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। যারা বাধা দিচ্ছেন, তাদের বক্তব্য হলো – “একজন করলেই কি সবটা বর্জন হবে? আগে সবাই বর্জন করুক। তারপর না হয় আমিও করবো।”
বেশ। তবে এই প্রসঙ্গে আমার একটা ঈশপের গল্প মনে পড়ে গেলো। যথারীতি, শিক্ষনীয় গল্প।
এক দেশে এক রাজা ছিলেন। রাজা হঠাৎ ইচ্ছে হলো, তিনি খাটিঁ দুধ দিয়ে সুইমিং পুল বানাবেন। কিন্তু এত দুধ কোথায় পাবেন? মন্ত্রী পরামর্শ দিলো, দুধের যোগান কোন সমস্যা নয়। রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে একটা বড় পুকুর কাটা হবে। রাজ্যের সবাই যদি তাদের বাড়ী থেকে, বেশী না মাত্র এক গ্লাস দুধও যদি সে পুকুরে ডোনেট করে, তাহলে সে পুকুর উপচে পড়বে দুধে!! যে কথা সেই কাজ। গোটা রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করে দেয়া হলো, সবাই এক গ্লাস করে খাটিঁ দুধ রাজার সু্ইমিং পুলে ডোনেট করবে। ব্যস। সারাদিন জনসংযোগে ব্যস্ত থাকায় দুধ প্রদান কর্মসূচীর শুরু ঘোষনা করা হলো সেইদিন সন্ধ্যাবেলায়। সারারাত ধরে সবাই রাজার পুকুরে দুধ ডোনেট করে যাবে।
মন্ত্রীকে তার বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শের জন্য ব্যাপক সোনাদানা দিয়ে পুরস্কৃত করা হলো। এদিকে রাজা তো খুশী মনে রাতে ঘুমাতে গেলো। কারন পরদিন সকালে উঠেই সে দুধের পুকুরে সাতাঁর কাটবে। খুশী আর তার ধরে না।
সকালে উঠে রাজার তো চক্ষু চড়ক গাছ! শুধু রাজা না। গোটা রাজ্য বাসীর সবারই চক্ষু চড়ক গাছ। একি কান্ড!! দুধের পুকুরে থই থই পানি!! রাজা তো রেগে অগ্নিশর্মা!! খবর নিয়ে জানা গেলো, রাজ্যের সবাই একটা কথাই ভেবেছে – “সবাই যদি দুধ দেয়, তাহলে আমার তো দুধ দেয়ার প্রয়োজন নাই। আমার এক গ্লাস পানি দিলেই হবে। আর এক পুকুর দুধের ভেতর এক গ্লাস পানি দিলে রাজার বাপের সাধ্য নাই সেটা ধরতে পারে!”
রাতের অন্ধকারে সবাই এক গ্লাস করে পানিই রাজার পুকুরে ডোনেট করেছে।
সবাই যদি ভাবে, ভারতীয় পণ্য আগে অমুক বর্জন করুক তারপর আমি করবো, তাহলে রাজার সেই পুকুরের মতই অবস্থা হবে!!
আমরা কেন নিজেকে দিয়েই কোন কিছু শুরু করতে পারি না? অপরের শুরু করার আশায় কেন আমাদের বসে থাকতে হয়?
Leave a Reply