সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বলতে গেলে এনার ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। উনার মৃত্যুতে অনলাইন জুড়ে অপূরণীয় ক্ষতি ও শোকের ছায়া নেমে আসছে–প্রিয়জনদের মৃত্যুতে শোক হবে, সেটাই স্বাভাবিক–কিন্তু অপূরণীয় ক্ষতির হিসাবটা জানি না।
অনেকের পোস্টে বলছিলাম–উনার দোষ-গুণ, ভালো-মন্দ, লীগে উনার অবদান, দেশে উনার অবদান, দেশের মানুষের জন্য উনার অবদান ইত্যাদি নিয়ে লেখা চাই। অনেকে হয়তো লেখা রেডি করতেছেন–অপেক্ষায় আছি।
একটা ব্যাপার শুনেছি–উনি নিজের এলাকায় অনেক উন্নতি করেছেন, তবে আর সব নেতাদের মত নিজের সম্পত্তি বাড়ান নাই, নিজের যা ছিল তাই নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন, আর নিজেকে মুসলমানও না, হিন্দুও না–এমন কিছু বলতেন–ধর্মের ঊর্ধ্বে–ব্যক্তিগত ভাবে এগুলা শোনার পর ভালো লাগছে উনাকে।
তো এই যে ব্যক্তিগত ভাবে সম্পত্তি করেন নাই, ধর্মের ঊর্ধ্বে ছিলেন–এগুলা তো বাম টাইপের ব্যাপার। এই বামনীতির কারণেই কি উনাকে এত পছন্দ? তাহলে বামনীতি নিয়ে আবার চুলকানি কেন?
২) ওহ, চুলকানি শুধু বামাতিদের নিয়ে, তাইতো?
সুষুপ্ত পাঠকের একটা পোস্ট ছিল বামাতি শব্দের রহস্য নিয়ে (লিঙ্কটা দরকার)। বলা হয়–বামাতিরা নাস্তিক, কিন্তু রাজনীতির বেলায় এরা ধর্মের সমালোচনা ভালো পায় না বা ধর্ম ব্যাপারটাকে টানতে চায় না। এদের অনেকে আবার উগ্র নাস্তিকরা যেভাবে ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করে, সেটাও ভালো পায় না, উলটা ওই নাস্তিকদের ধুইয়ে দেয়…
আমার কথা হচ্ছে–রাজনীতি আর ধর্ম যেমন আলাদা জিনিস, (এবং বেশিরভাগ নাস্তিকই চায় ধর্ম আর রাজনীতি আলাদাই থাকুক, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার উঠে যাক), তেমনি রাজনীতি আর নাস্তিকতা জিনিসটাও আলাদা। ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতি জিনিসটা আমার কাছে ধর্মের মতোই মনে হয়–মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে–ভালো লাগে না– (ইদানিং শাসক শ্রেণী নিয়া সমালোচনা ট্রল বিরোধিতা–এগুলা হয়তো সেই ভালো না লাগারই ফল। তো রাজনীতি নিয়ে ওসব করলেও এককালে পুরাই ‘আই হেইট পলিটিক্স’ পার্টি ছিলাম… আগ্রহ ছিল শুধু নাস্তিকতায়)–স্বপ্ন দেখি সীমানাহীন, শাসকহীন পৃথিবীর। এই জায়গায় মানুষের সাম্য ও সমান অধিকার চলে আসে–এই হিসাবে বাম মতবাদের প্রতি আগ্রহ আছে বলা যায়। কিন্তু যখনই আবার রাজনীতি চলে আসে, আবার শাসক ব্যাপারটা চলে আসে, তখন আর ভালো লাগে না…
কিন্তু রাজনীতিরে খুব সহজে এড়ানো যায় না, আর সে কারণেই নাস্তিকরা যেমন চায় রাজনীতি আর ধর্ম অন্তত আলাদা হোক–সেটা নিজেও চাই। আবার কিছু নাস্তিকের রাজনীতিতে প্রবল আগ্রহ–রাজনীতির ময়দানে এরা বাম হিসাবে পরিচিতি পায়। এবার এদের কেউ কেউ যদি রাজনীতির স্বার্থে ধর্মরে না টানতে চায় (যেমনটা রাজনীতি না করা অনেক নাস্তিকও চায়), যদি ধর্মের সমালোচনার জন্য সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়–সেজন্য ধর্মের সমালোচনা ভালো না পায়, তাহলে এদেরকে ঠিক কতটা দোষ দেয়া যেতে পারে। বলতে চাইছিলাম–হয়তো ক্লিয়ার করতে পারছি না–যে, যখন নাস্তিকরা ওই বামাতি ট্যাগটা দেয়, তখন ব্যাপারটা স্ববিরোধী হয়ে যায় কি না, ব্যাপারটা নিয়ে আরো আলোচনা দরকার।
৩) টপিকে ফিরে আসি–সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যু। ক্যান্সার। হুমায়ূন আহমেদের পরে আবার ক্যান্সার শব্দটা যতটা আলোচনায় আসা উচিত ছিল, ততটা আসে নাই। তবে এলে ভালো হতো। হুমায়ূন আহমেদ বলছিলেন, বেঁচে গেলে দেশে অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার কাজ চালাবেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ক্যান্সারে মারা গেলেন… বিদেশের হাসপাতালে। দেশে এরকম একটা হাসপাতাল দিতে কত টাকা লাগে? যে টাকা ব্যাংক থেকে লুট হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে গেলো–তারও বেশি কি?
৪) শোকের মধ্যেও আরেকটা ক্যাচাল চোখে পড়ছে–‘বিশিষ্ট ফেসবুকার’ একটা শোকের পোস্টে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামের আগে ‘মদারু’ বিশেষণ যোগ করেছিলেন–আরেকজন সেই পোস্টের বিরোধিতা। এর পর বিরোধী পোস্টকে কেন্দ্র করে একটা গ্রুপ হয়ে গেলো, আর পোস্টের স্বপক্ষে আরেকটা গ্রুপ বলতে লাগল–‘মদারু’ শব্দ দিয়ে উনি আসলে খারাপ কিছু বোঝান নি, ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে, নিজেদের মধ্যে এসব ভালো না, মিটিয়ে ফেলেন… (বি:দ্র: এই পক্ষ-বিপক্ষে যারা যোগ দিছে, তাদের কাউরেই ওই বিশিষ্ট ফেসবুকারের পা-চাটা কুত্তা বা বিপক্ষপোস্টদাতার বিচি-চাটা শুয়ার ট্যাগ দেয়া যাবে না। ওরকম ট্যাগ দেয়ার অধিকার শুধু ওই দুই গ্রুপ হয়ে যারা ক্যাচাল করছে, তাদেরই আছে। হুম!)
৫) এই পোস্টটা ঘুম থেকে উঠেই মাথায় ঘুরছিল। (পোস্ট দিতে দেরি হলো আরেকটা ক্যাচালে পড়ে।) যে কথাটা দিয়ে এই পোস্টটা শেষ করতে চাইছিলাম–সেই কথাটা দেখি Shahidujaman Sarker আগেই হুবহু লিখে পোস্ট দিয়ে ফেলছেন। দেখে অনেকক্ষণ হাসছিলাম খুব। Sarker-এর কথাটাই তুলে দেই–//তিনি মরে গিয়ে সমস্ত ইস্যুকে এক নিমিষেই ঘুরিয়ে দিলেন।//–ভোট-ডাকাতি, গণধর্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি–আপাতত এটাই মনে হচ্ছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সবচেয়ে বড় অবদান না হলেও লীগের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় উপকার।
[আবারো বলছি–সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দোষ-গুণ, ভালো-মন্দ, লীগে উনার অবদান, দেশে উনার অবদান, দেশের মানুষের জন্য উনার অবদান ইত্যাদি নিয়ে লেখা চাই। …অপেক্ষায় আছি। (যদি মনে করেন– উনি ফেরেস্তা টাইপের কিছু, তাহলে দোষ-মন্দ দিকগুলা লেখার দরকার নাই, তাছাড়া মরে গেলে খারাপ কিছু বলা নবির নিষেধ আছে, শুধু নাস্তিকরা কোতল হলে তাদের লেখা খতিয়ে দেখা উচিত।)]
Leave a Reply