লিখেছেন শুভ্র আহমেদ
কোরানের অভ্যন্তরীণ মানে কোরানের অনুবাদ পড়তে গেলে কিছু প্রশ্ন আপনার মাথায় খেলবেই। এর বাইরে কোরানের বাহ্যিক কিছু অসঙ্গতি আছে, যেগুলো কোরানের ‘খোদায়ি জবান’ বিশ্বাসটাকে নড়বড়ে করে দেয়।
প্রথম জিনিসটা হল এর সংকলন। সাধারণ ইতিহাস থেকে আমরা জানি, মুহম্মদের মৃত্যুর কয়েক বছর পর এটা সংকলিত হয় এবং স্বয়ং সংকলক জাবির নিজেই বলেছেন, সংকলনের সময় যেসব আয়াতের ব্যাপারে সন্দেহ হয়েছে, সেগুলোর উপযুক্ত সাক্ষীও মেলেনি, সেগুলো রাখা হয়নি।
বেশ অদ্ভুত ব্যাপার। সুরা বাকারাতে আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করেছেন, কেউ পারলে কোরানের মত একটা আয়াত হলেও বানিয়ে দেখিয়ে দিক। অর্থাৎ আল্লাহ নিশ্চিত, কেউ সেটা বানাতে পারবে না। অথচ আমরা দেখছি, স্বয়ং যায়েদ বলছেন এরকম আয়াত তার সামনে এসেছিল, যেগুলোর পক্ষে তিনি সাক্ষী না পাওয়ায় বা লিখিত রূপ না পাওয়ায় রাখেননি। তার মানে কী দাঁড়াল?
এক. ওগুলো কোরানেরই আয়াত ছিল, কিন্তু যায়েদ সেগুলো রাখেননি। অথবা
দুই. ওগুলো কোরানের আয়াত ছিল না, কিন্তু মনুষ্য রচিত এই আয়াত প্রমাণ করে দিল, কোরানের মত করে আয়াত বানানো সম্ভব।
কোরান উলটে পালটে দেখলে যে-জিনিসটা আপনার চোখে লাগবে, সেটা হল – কোরানের সুরাগুলো অগোছালো। কোনো সুন্দর ক্রম নেই। প্রশ্ন জাগে, কোরানের সুরাগুলো আসলে কিসের ভিত্তিতে সাজানো? বড় থেকে ছোট? ছোট থেকে বড়? অক্ষর ক্রমানুযায়ী? নাজিলের সময় অনুয়ায়ী?…
সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের এমন বিতিকিচ্ছিরি হাল কেন? মক্কায় নাজিল হওয়া সুরাগুলা থাকা উচিত ছিল সামনে, অথচ সেগুলোকে পেছনে নেয়া! একইভাবে স্থূল চোখেই আরো যে-জিনিসটা ধরা পড়ে, তা হল – সুরার নামগুলাও সার্থক নয়। সুরা বাকারা অর্থাৎ পবিত্র গাভীকে নিয়ে অবতীর্ণ সুরায় গাভীটির আলোচনা মাত্র কয়েক লাইন। সুরা হুদ নুহ নবীর আলোচনায় পূর্ণ। সুরা নামলে পিঁপড়া নয়, সুলাইমানই কেন্দ্রীয় চরিত্র। এরকম অনেক সুরাই আছে।
এছাড়া কোরানে আছে পুনরাবৃত্তির সমস্যা। একই গল্প কোনো কারণ ছাড়াই একাধিকবার এসেছে। আদম-হাওয়া আর ইবলিসের গল্প আছে চারবার (১, ৮, ১৬ পারা ইত্যাদি); নুহের প্লাবনের গল্প আছে ১২ পারায়, আবার ২৯ পারায়।
কোরানের আরেকটা অসুন্দর দিক হল, বিভিন্ন নবীর বিভিন্ন কাহিনী একই সুরায় না এনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আনা। যেমন, নবী মুসার কাহিনী নিয়ে শুধু একটা সুরা থাকতে পারত, তা না করে অনেকগুলা সুরায় মুসার কাহিনী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একইভাবে ইবরাহীম আর নুহের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। এদিক থেকে ভাবলে সুরা ইউসুফ ব্যতিক্রম। নবীদের গল্পভিত্তিক সুরার মধ্যে এটিই একমাত্র ধারাবাহিকভাবে সজ্জিত।
পুরা কোরানটাই অসংলগ্ন আয়াতে ভরপুর। পড়লে মনে হয় কোন স্কিতজোফ্রেনিকের অসংলগ্ন বাক্যালাপ। দুটা আয়াতের মাঝখানে হুট করে অপ্রাসঙ্গিক আয়াত। প্রশংসার মাঝখানে আদেশ, তারপর আবার প্রশংসা। সর্বনাম ব্যবহারে নাম পুরুষ থেকে হঠাত করে মধ্যম পুরুষে চলে আসা ইত্যাদি।
পুরো কোরান ঠাণ্ডা মাথায় ধর্মাবেগ পরিহার করে কেউ যদি পড়ে, তবে তার অন্ধবিশ্বাস নড়েচড়ে যেতে বাধ্য।
Leave a Reply