জ্বরের ঘোরে সেইদিন তোর মায়রে সুদি, তোর বোনেরে সুদি–ইত্যাদি গালাগালিগুলা নিয়া যা লিখছিলাম, আজ মনে হইতাছে ওইসব গালাগালির সতিকারের ইতিহাস মূলত সেইটাই। নারীকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানানোর প্রক্রিয়া চলছিল, তখন ওইসব গালিই ছিল তার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ।
উদাহরণ দেই–আপনে চান আপনার মা আপনার বাবার, আপনার বোন আপনার ভগ্নিপতির, আপনার মেয়ে আপনার মেয়ে জামাইয়ের, আপনার বউ শুধু আপনার সম্পত্তি হয়ে থাকবে। অন্য কেউ এই সম্পত্তিতে হাত দিতে পারবে না। আর আপনে যখন নারীদেরকে সম্পত্তি ভাবতে পারেন, তখন নারীরা মূলত পুরুষের ‘দাসী’… এই দাসীদের নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা বইলা কিছু থাকতে নাই। সুতরাং এরা যে অন্য কারো সাথে এক বা একাধিক সম্পর্ক করতে ইচ্ছা করতে পারে, এইটাই আপনার মাথায় কাজ করবে না। তারপরেও কোনো মেয়ে ইচ্ছা কইরা এই সম্পত্তি হতে রাজি হলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বিয়ে নামক প্রথার মাধ্যমে যখন এই সম্পত্তি হতে বাধ্য করেন, তখন এই গালিগুলার উপ্রে আর কিছু হয় না।
আবার ধরেন–শ্বেতকেতুরা যখন মনে করল, তাদের মায়েরা একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক করলে তারা খানকি বেশ্য মাগি পতিতা ইত্যাদি হইয়া যায়, তখন এইসব শ্বেতকেতুদের এক কথায় বলা হয়–খানকির বাচ্চা। কারণ তাদের মায়েরা কোনোকালেই এক পুরুষরে নিয়া সারাজীবন কাটাইয়া দেয় নাই… পুরুষ যেমন একাধিক নারী চায়, তেমনি নারীরাও এক পুরুষকে নিয়া সারাজীবন কাটাইয়া দেয় না–মনে মনে হইলেও তারা একাধিক পুরুষের সঙ্গ কামনা করে।
তো নারীবাদীরা এই গালিগুলারে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাই-প্রোডাক্ট মনে করতে পারেন, কিন্তু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে ব্যাপারটা উলটা। গালিগুলা কারো বোন বা মা’কে দেয়া হয় না, দেয়া হয় পুরুষদেরকে… পুরুষতান্ত্রিকতা লালন-পালন করা লোকগুলারে। (আজকাল অবশ্য যারা এই গালিগুলা দেয়, তারা বিষয়টা না বুইঝাই দেয়।)
২) আজ আবার কুত্তার বাচ্চা, শুয়ারের বাচ্চা টাইপের গালিগুলা নিয়াও ভাবতেছিলাম। আদিমকালে গোত্রগুলার পরিচয় হইত গাছপালা, পশুপাখি, পাহাড়পর্বত, নদীনালা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়ের নামে। আদিম কৌমসমাজ থেকে বের হয়ে আসা মানুষেরা যখন তাদের পূর্ব পরিচয় অস্বীকার করতে শুরু করল, তখন কেউ কেউ তাদেরকে মনে করাইয়া দিত যে, ওরে মনু, তুমি তো অমুক গোত্রের বাচ্চা আছিলা… অতঃপর কোনো মহাপুরুষ আইসা যখন এইসব প্রাণীদেরকে ঘৃণ্য চোখে দেখার ধর্ম প্রচার করা শুরু করল, তখন তারে বেশি কইরা কুত্তার বাচ্চা, শুয়ারের বাচ্চা বলা হইতে থাকত। এভাবে এইগুলাও গালাগালির অন্তর্ভুক্ত হইল। (আবার বাঘ ইত্যাদি ঘৃণ্য নয় বইলা বাঘের বাচ্চা ইত্যাদি গালির পর্যায়ে পড়ে নাই।)–মিশরের আনুবিস আর হোরাসের কাহিনী দেখতে পারেন। আরবের গোত্র এবং আবু বকর, আবু হুরায়রা টাইপের নামকরণের মানে দেখতে পারেন। না বুঝলে খাঁটি বাংলায় ধইরা নেন–আপনে হয় শুয়ারের বাচ্চা, নয়তো কুত্তার বাচ্চা, নয়তো গরুর বাচ্চা, নয়তো গাধার বাচ্চা, নয়তো বকরির বাচ্চা…
৩) আগে সব কিছুতেই সবার সমান অধিকার থাকত। একটা পর্যায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধারণাটা আসার পরে সব কিছুতে ভাঙন ধরা শুরু হইল, যে যার সাধ্যমত নিজের সম্পত্তি বানাইতে থাকল। কেউ কেউ নারীদেরকেও কিনা নিতে শুরু করল… মানুষ মানুষরে কিনা নিবে, এ আবার কেমন কথা! বিষয়টারে ভদ্রস্থ করার জন্য বিয়া নামক প্রথার আমদানি…এখানেও মোহরানা বা পণ দিয়া নারীরে একান্তই ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানানো শুরু হইল। এর মধ্যে কেমনে জানি আবার দ্রৌপদীর বিয়ার মধ্যে পঞ্চস্বামী ঢুইকা গেল… যা থিকা কিনা সম্পত্তিতে যৌথ মালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসার আইডিয়া চালু হইল…
Leave a Reply