[চ-বর্গীয় গালির ইতিহাস আসলে কোনো ইতিহাস না। গালাগালি কীভাবে আসতে পারে সেটাই ভাবছিলাম জ্বরের ঘোরে। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নাই।]
ঠাণ্ডা সর্দি কাশি জ্বর। ওষুধে একটা ঘোর। সেই ঘোর আরো বাড়াইয়া দেয় টুনি। নেশার মতো ঘোর। নেশা লাগিল রে-র মতো ঘোর। টুনিরে ডাকতে ইচ্ছা করে। টুনির সাথে কথা কইতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ঘোরের ব্যাকগ্রাউণ্ডে ডাকি টুনির মায়রে। ও টুনির মা তোমার টুনি বোরখা পরে না…
গান গাইতে গাইতে বুকে সাহস ফিরা আসে। টুনির শ্বশুর বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করি। যাইতে যাইতে দেখি আবুইল্যা তার বউরে ধইরা পিটায়। বউ নাকি কোন পোলার সাথে কথা কইছে। এক হারামজাদী আবুইল্যার কান ভারী করছে। বউ নাকি পর পুরুষের লগে ফষ্টিনষ্টি করে। আবুইল্যা তার বউরে ন্যাংটা কইরা পিটায় আর চিল্লায়। আমার ঘরের ভাত খাইয়া রাস্তার মানুষের সঙ্গে পিরীত…
তাই তো। নারী হইলো দাসী। বিয়া করা হইলে দাসী কাম যৌনদাসী। পুরুষ টাকা দিয়া খরিদ করছে। পুরুষ হইলো প্রভু। ভরণ-পোষণ দিতাছে। পুরুষ হইলো কর্তা। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম এবং কাম। কর্তার ইচ্ছা না নারী অন্য কারো সাথে কাম করে। যদি করে, তাইলে মৃদু প্রহার। এই মৃদু প্রহারের সোদনে আবুইল্যা তার আগের বউগুলারে মাইরাই ফেলছে। এইটারেও মাইরা ফেলবে। ভাগ্যবানের বউ মরে। বউ না পিটাইলে কিসের মর্দ।
আবুইল্যারে গালি দিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু তার মাইর দেইখা গালি মনে আছে তো মুখে আনতে সাহস করি না। মনে মনে গালি দেই–আবুইল্যা তোর মায়রে সুদি। গালি দিতে দিতে মকবুলরে দেখি। টুনির বুইড়া ভাতার। হ্যায় টুনিরে ভাত দিয়া পোষে। মকবুলরেও গালি দেই। তোর বুনেরে সুদি। মনে মনে। শুনতে পাইলে আমার উপর রাগ কইরা সে টুনিরে পিটাবে। হারামজাদারা পরের সুখ দেখতে পারে না। তারা বুইড়ারে উষ্কানি দেয় টুনিরে নাকি আমি ভালা পাই। আমি আবার টুনির কথা ভাবি।
টুনি আইসা আমারে ধাক্কা মারে। এইহানে কী করো। কারে গালাগালি করো। সইরা আসো। একটু চোখ মেইলা তাকাই। জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় কইরা কী কও। বউ ঘুমাবে। আমারে সইরা শুইতে কয়।
আমি সইরা শুই। আবার তলাইয়া যাই। দেখি চারদিকে শুধু বিয়া আর বউ। আমি বিয়ার কথা ভাবি। এইটা কোন হারামজাদার কাজ। আমি ভাবতে ভাবতে আবার টুনির পিছু পিছু হাঁটি। টুনি আমার হাত ধইরা স্বর্গের দিকে টাইনা নিয়া যাইতে থাকে। যাইতে যাইতে কানে আসে কে যেন হাসতাছে আর গালি দিতাছে। তোর মায়রে সুদি। তোর মায়রে সুদি। তোর মায়রে সুদি। টুনি আমার হাত ছাইড়া দেয়। আমি জঙ্গলের ভেতর হারাইয়া যাইতে থাকি।
জঙ্গলের মধ্যে ইন্দ্রের সাথে দেখা হয়। দেবরাজ ইন্দ্র। সে আবার কার মায়রে সুদে। আমি জিগাই। শ্বেতকেতু। শ্বেতকেতুর সামনে দিয়া তার মা যে লোকটার সাথে পীরিত করতে গেছিল সেই লোকটা তাইলে ইন্দ্র। আমার মাথা ঘুরায়। শ্বেতকেতুর বাপ উদ্দালক পোলারে বুঝায়। নারীরা স্বাধীন। নারীরা নির্দিষ্ট কারো দাসী বা যৌনদাসী না। পুরুষ যেমন নারীর সম্পত্তি না নারীও তেমন পুরুষের সম্পত্তি না। শ্বেতকেতু নারী-পুরুষকে একে অপরের সম্পত্তি বানাইতে চায়। এইখানে আর কেউ ভাগ বসাইতে পারবে না। ইন্দ্র আবার গালি দিতে দিতে গৌতম মুনির আশ্রমের দিকে হাঁটা শুরু করে।
আমার আর স্বর্গে যাওয়া হয় না। পেছন ফিরে দেখি মাথা ঝাঁকাইতে ঝাঁকাইতে কে জানি যায়। শ্বেতকেতু না। শ্বেতকেতুই তো। মাথা ঝাঁকায়। আমি আবুইল্যারে দেখি। মাথা ঝাঁকায়। আমি মকবুকরে দেখি। মাথা ঝাঁকায়। এক-এক করে সব চেনা-অচেনা পুরুষ দেখি। মাথা ঝাঁকায়। আবার পুরুষের মতো ক্ষমতাধারী নারীও দেখি। ক্ষমতার জোর দেখায়। পুরুষ তুমি থাকো নারীর অধীন। নারীরাও শ্বেতকেতু হয়। শ্বেতকেতুরে জিগাই কই যাও। ইন্দ্রের আইডি খুঁজি। রিপোর্ট করুম।
আমি ওই আবুইল্যা মকবুল চেনা-অচেনা সব নারী-পুরুষদেরকে গালি দেই। তোর মায়রে সুদি। তোর বুনেরে সুদি। তোর বউরে সুদি। তোর মাইয়ারে সুদি। গালির মধ্যে মানুষের স্বাধীনতা হরণের সেই পুরানো প্রতিবাদ। এখনো আমাগো অজান্তেই চইলা আসছে। বড় সুখ সুখ লাগে।
আমার মনে পড়ে ফেসবুকে এই গালি আমিও অনেক খাইছি। আমি গালি শুইনা হাসি। আমার মা-বোন আমার সম্পত্তি না। তারা যদি তোদের সাথে সোদাসুদি করে সেইটা তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা স্বাধীনতা। আমি আবার হাসি। যত হাসি তত ওদের মাথা গরম হইয়া যায়। শ্বেতকেতুরা আইডি রিপোর্ট করে।
আমি আবার টুনির কথা ভাবি। দূর থিকা কে জানি প্রশ্ন করে। এক সাথে একাধিকজনকে ভালোবাসা যায় না? আমার আরো ঘোর লাগে। রাত বাড়ছে। হাজার বছরের পুরনো সেই রাত। আমি ঘোরের তলায় ঘুমাইয়া যাই।
Leave a Reply