[চুলকানির মলম নিয়া হুদাই একটা পোস্ট। সিরিয়াস হবেন না, চাপ নিবেন না–তবে পড়া শেষে চুলকানি উঠলে চুলকানির মলম লাগাতে ভুলবেন না।]
ফুটায় বা বিচিতে চুলকানি উঠলে অনেকে যখন বলে–নারীবাদী তো দেখি না, সবই দেখি পুরুষবিদ্বেষী; আর মমিনরা যখন বলে–নাস্তিক তো দেখি না, সবই দেখি ইসলামবিদ্বেষী–এই দুইটা কথার মধ্যে আদৌ কি কোনো পার্থক্য আছে?
কিংবা, এই দুইটা কথার মতো করে আরো যোগ করা যায়–‘পাহাড়ি’ তো দেখি না, সবই দেখি বাঙালিবিদ্বেষী–যদিও পাহাড়িদের কান্না সেভাবে ছড়িয়ে পড়ে নাই বলে বাঙালিরা এখনো ওরকম বাণী প্রসব করছে না। কিন্তুএটা তো ঠিক যে, পাহাড়িদের কাছে বাঙালি মানেই একটা বীভৎসতা, আতংকের নাম; ঠিক যেমন ৭১-এ ক্ষতবিক্ষত হওয়া বাঙালিদের কাছে পাকিস্তানি এবং তাদের দোসররা এখনো চরম ঘৃণার পাত্র।
মুসলমানদের হাতে ধর্ষিত হওয়া বা তাদের অত্যাচারে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া অমুসলিমরাও মুসলমানদের চরম ভাবে ঘৃণা করে। দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে ভারতে যাওয়া হিন্দুরা চরমভাবে মুসলমানবিদ্বেষী। খেয়াল করেন–এই হিন্দুরা ‘নাস্তিক’ নয়, কিন্তু মুসলমানবিদ্বেষী-ইসলামবিদ্বেষী।
তো নাস্তিকতার সাথে সম্পর্ক হলো ধর্মের, আর নারীবাদের সাথে মূলত পুরুষতন্ত্রের… কিন্তু এই ধর্ম আর পুরুষতন্ত্র–জাস্ট দুইটা কেতাবি শব্দ। আমাদের দেশে নাস্তিকদের কাছে ধর্ম বলতে ইসলাম, কিন্তু ইসলাম পুঁথিগত কিছু বিধিবিধানের পাশাপাশি মুসলমানদের কর্মকাণ্ডও বুঝায়। সেই কর্মকাণ্ডগুলো যখন ‘কু’ হয়, তখন নাস্তিকরা ধর্মের পাশাপাশি মুসলমানদেরকেও সরাসরি ‘আক্রমণ’ করে–‘মুসলমানরা হেন’, ‘মুসলমানরা তেন’–এধরনের বাক্য ব্যবহার করে। তখন কোনো নাস্তিক এসে বলে না–সব মুসলমান এক নয়…
আবার নারীবাদের বিপরীতে পুরুষতন্ত্র হলেও এই পুরুষতন্ত্র ধারণ করে পুরুষেরা এবং পুরুষের সেবাদাসী অনেক নারীরাও। নারীবাদ–নারী পুরুষের সাম্য ও সমান অধিকার–পুরুষতন্ত্র এই সাম্য ও সমান অধিকারের কথা স্বীকার করে না। আবার অনেক নারী এই সাম্য ও সমান অধিকারের ব্যাপারটা জানে না বা বোঝে না–তারা সমাজে বা পরিবারে জাস্ট যৌন-নির্যাতনের শিকার হয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দাঁড়াতে নিজেদেরকে ‘নারীবাদী’ হিসাবে বর্ণনা করে। এসব ক্ষেত্রে তারা ‘পুরুষবিদ্বেষী’ হলেও নারীবাদের যে সংজ্ঞা, সেই সংজ্ঞা অনুসারে নারীবাদী না-ও হতে পারে। এ কারণে অনেকে ধর্ম মেনেও নিজেদেরকে নারীবাদী বলে থাকে। এখানে স্পষ্টই তারা ভুলে যায় যে, নারীবাদ মানে যে সাম্য ও সমান অধিকারের প্রশ্ন–পুরুষতন্ত্রের পাশাপাশি ধর্মও নারীপুরুষের এই সাম্য ও সমান অধিকার অস্বীকার করে, ধর্ম নারীকে পুরুষের ‘দাসী’ হিসাবেই দেখে থাকে।
তো পাহাড়িরা যদি তাদের অঞ্চলে বাঙালিদের হাতে নির্যাতিত হতে থাকে এবং তাদের মধ্যে বাঙালিবিদ্বেষের জন্ম নেয়, বাঙালিদের যদি তারা ঘৃণা করতে শুরু করে–তাদের দোষ দেয়া যায় কি? চুলকানি থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন–তাদের উপর অত্যাচার করছে শুধুমাত্র ‘সেটেলার’ বাঙালিরা, তাহলে তারা সব বাঙালিকে দোষ দিচ্ছে কেন? দোষ দিচ্ছে এই কারণে যে, ওই পাহাড়টুকুই তাদের কাছে ‘জগৎ’, এবার আপনি যদি ঐ জগতের বাইরে থাকা বাঙালি হয়ে চুলকানি অনুভব করেন, তাহলে সেটার দায়ভার একান্তই আপনার। পাহাড়িদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, করছে বাঙালিরা–এটা তো সত্য? আর আপনি একজন বাঙালি হয়ে সেই অত্যাচার রোধ করতে ব্যর্থ–এই দায়টুকু তো আপনার উপর বর্তায়?
একইভাবে ৭১-এ ক্ষতবিক্ষত হওয়া কোনো বাঙালি, বা দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া কোনো হিন্দু যদি পাকিস্তানি ও তাদের দোসরদের, বা মুসলমানদেরকে একইভাবে দোষারোপ করে, আর ৭১-এর বাইরে থাকা, বা ওই দেশত্যাগী হিন্দুদের জগতের বাইরে থাকা আপনি যদি চুলকানি অনুভব করেন, তাহলেও সেটার দায় একান্তই আপনার। এই উভয় ক্ষেত্রেই ওইসব মানুষদের ‘সব বাঙালি এক না’ কিংবা ‘সব পাকিস্তানি এক না’ কিংবা ‘সব মুসলমান এক না’ বলে বুঝাতে যাওয়াটা কমনসেন্সের অভাব ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে!
এবার কোনো নারী যদি তার নিজস্ব জগৎ, তার গণ্ডির মধ্যে, তার আশেপাশে, তার পরিবার ও সমাজে যৌননির্যাতনের শিকার হতে থাকে, বা ধর্ষক ও যৌননির্যাতক দেখে দেখে বড় হতে থাকে, এবং সেখানে মুখ খোলার বা প্রতিবার করার সুযোগ না পায়… একটা পর্যায়ে যদি ব্লগ-ফেসবুকে এসে সুযোগ পেয়ে সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে শুরু করে–নিজের ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দিতে আসে… যদি তার কথাবার্তায় পুরুষবিদ্বেষ প্রকাশ পায়, যদি নারীবাদ বিষয়টার কেতাবি মানে না বুঝে নিজেকে নারীবাদী হিসাবে পরিচয় দিয়েই ফেলে, যদি বলেই ফেলে–‘পুরুষেরা ধর্ষক’… আর আপনি তার জগতের বাইরে বসে মনে করেন যে, নারীবাদীরা সব পুরুষকে ধর্ষক বলছে, এবং আপনি ধর্ষণ না করেও ধর্ষক ট্যাগটা নিজের ঘাড়ে টেনে নেয়, যদি ‘সব পুরুষ এক না’ বলে নারীবাদ আর নারীবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তাহলে আপনাকে চুলকানির মলম দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না!
Leave a Reply