দিনে যখন আকাশে মেঘ থাকে না তখন তোমরা সূর্য দেখ কি? আর রাত্রিতে যখন আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তখন তোমরা চাঁদ দেখ কি? নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রভুকে অতিসত্বর দেখিতে পাইবে। এমনকি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তাহার প্রভু সম্বোধন করিবেন এবং জিজ্ঞাসা করিবেন, “হে আমার বান্দা! তুমি কি এই গুনাহ্ স্বীকার কর?” সে বলিবে, “হে আমার প্রভু! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেন নাই?” তখন তিনি বলিবেন, আমার ক্ষমার ফলেই ত তুমি এই পর্যায়ে পৌঁছিয়াছ। (আহমদ ইহা আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে সংগ্রহ করিয়াছেন। হাদিস নম্বর— ৩৩৩)
যখন জান্নাতের অধিবাসিগণ জান্নাতের নিয়ামতসমূহ উপভোগরত থাকিবে, তখন তাহাদের জন্য একটি আলো উজ্জ্বল হইয়া দেখা দিবে। সঙ্গে সঙ্গে তাহারা তাহাদের মস্তক উত্তোলন করিবে এবং অনুভব করিবে যে, তাহাদের প্রভু উপর হইতে তাহাদের উপর স্বীয় উপস্থিতির আলোকপাত করিয়াছেন। অতঃপর তিনি বলিবেন, “তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক হে জান্নাতবাসিগণ। ” ইহা আল্লাহ্ তা‘আলার সেই বাণী ( যাহা কুরআনে উল্লেখ আছে ) শান্তি উক্তিটি দয়াময় প্রভুর পক্ষ হইতে” ( সূরা ইয়াসীন: ৫৮ )। তিনি জান্নাতবাসীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবেন। তাহারাও তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে। অতঃপর যতক্ষণ তাহারা তাঁহাকে দেখিতে থাকিবে ততক্ষণ তাহারা জান্নাতের কোন নিয়ামতের দিকেই লক্ষ্য করিবে না। অতঃপর তিনি তাহাদের নিকট হইতে আত্মগোপন করিবেন। শুধু তাঁহার আলো ও তাঁহার বরকত তাহাদের উপর এবং তাহাদের বাসভবনসমূহের উপর অবশিষ্ট থাকিবে। (ইবনে মাজা ইহা জাবির ( রা )-এর সূত্রে সংগ্রহ করিয়াছেন। * বিঃ দ্রঃ এই হাদীসটিতে প্রথমত আল্লাহ্ তা‘আলার সহিত বান্দার চাক্ষুষ সাক্ষাত এবং দ্বিতীয়ত করুণাময়ের অসীম কৃপার আভাস দেওয়া হইয়াছে। হাদিস নম্বর— ৩৩৪, আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী: “হাদীসে কুদসী” ( অনুবাদ— মোমতাজ উদ্দীন আহমদ ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৪ খৃ., পৃ. ২৭৯-২৮০)
মুয়ায ইব্ন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা ফজর সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করলেন, আমরা প্রায় সূর্যের অগ্রভাগ দেখার কাছাকাছি ছিলাম, অতঃপর তিনি দ্রুত বের হলেন, সালাতের ঘোষণা দেয়া হল, তিনি দ্রুত সালাত আদায় করলেন, যখন সালাম ফিরালেন উচ্চ স্বরে আমাদেরকে বললেন: “তোমরা তোমাদের কাতারে থাক যেরূপ আছ। ”
অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন: “আমি অবশ্যই তোমাদের বলব কি কারণে আজ আমার বিলম্ব হয়েছে। আমি রাতে উঠে ওযু করেছি অতঃপর যা তাওফিক হয়েছে সালাত আদায় করেছি, সালাতে আমার তন্দ্রা এসে যায় তাই আমার কষ্ট হচ্ছিল, হঠাৎ দেখি আমার রব আমার সামনে সর্বোত্তম আকৃতিতে। তিনি আমাকে বললেন: হে মুহাম্মদ,
আমি বললাম: লাব্বাইক আমার রব। তিনি বললেন: ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে ?
আমি বললাম: হে আমার রব আমি জানি না, —তিনি তা তিনবার বললেন। রাসূল বলেন: আমি দেখলাম তিনি ( আল্লাহ ) নিজ হাতের তালু আমার ঘাড়ের ওপর রাখলেন, এমনকি আমি তার আঙ্গুলের শীতলতা আমার বুকের মধ্যে অনুভব করেছি, ফলে আমার সামনে প্রত্যেক বস্তু জাহির হল ও আমি চিনলাম।
অতঃপর বললেন: হে মুহাম্মদ, আমি বললাম: লাব্বাইক হে আমার রব। তিনি বললেন: ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে ? আমি বললাম: কাফফারা সম্পর্কে। তিনি বললেন: তা কি ? আমি বললাম: জামাতের জন্য হাঁটা, সালাতের পর মসজিদে বসে থাকা, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযু করা। তিনি বলেন: অতঃপর কোন বিষয়ে ? আমি বললাম: পানাহার করানো, সুন্দর কথা বলা, মানুষের ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় রাতে সালাত আদায় করা। তিনি ( আল্লাহ ) বললেন: তুমি চাও।
আমি বললাম: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণের কাজ করার তৌফিক চাই, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার তৌফিক চাই, অভাবীদের জন্য ভালোবাসা, আর আপনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার প্রতি রহম করেন। আর যখন আপনি কোন কাওমকে ফিতনা তথা পরীক্ষায় নিপতিত করতে চান, তখন আমাকে পরীক্ষায় নিপতিত না করে মৃত্যু দিন। আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা, আপনাকে যে ভালোবাসে তার ভালোবাসা এবং এমন আমলের ভালোবাসা চাই যা আমাকে আপনার ভালোবাসার নিকটে নিয়ে যাবে। ”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় এ বাক্যগুলো সত্য, তোমরা এগুলো শিখ ও শিক্ষা দাও।” [তিরমিযি, হাদিসটি সহিহ। হাদিস নম্বর— ১৩৬; আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা আল-আদাভি: “সহিহ হাদিসে কুদসি” ( অনুবাদ— সানাউল্লাহ নজির আহমদ ), মিসর, দিকহিলিয়াহ, মুনিয়া সামনুদ, ২০১২ খৃ., পৃ. ১৫৪-১৫৬)
Leave a Reply