লিখেছেন : কবিতা রায়
হিটলারকে বুদ্ধিজীবি বলতে আর বাধা নেই। তাঁরও একসময়ে অর্কেস্ট্রার দল ছিল। জার্মানির বহু শহরেই তিনি মঞ্চ ধন্য করেছিলেন।
গপ্প লিখতে কিম্বা নাচতে-গাইতে পারা অবশ্যই অসাধারণ যোগ্যতা। কিন্তু এই যোগ্যতা নিয়ে যদি দুনিয়ার সমস্ত ব্যাপারেই নাক গলানোর লাইসেন্স পাওয়া যায় তবে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়। কখনও আবার জনগণ বিশ্বাস করে ফেললে মারাত্মকও হয়ে ওঠে। আজকাল এই ব্যাপারটা কিছু বেশিই হচ্ছে। সিনেমা জগতের নাচেগানে অভিজ্ঞ লোকেরা রাজনৈতিক লাইনে আসছেন। কিন্তু ভোট পাচ্ছেন রাজনৈতিক যোগ্যতায় নয়, নাটকবাজির জনপ্রিয়তায়। সম্মানিত নাটকবাজ চাইছেন সম্মানিত নেতা হতে। যোগ্যতাটা বাড়াবেন না, শুধু সম্মানটা আর জমিটা বাড়িয়ে প্রোমোশন নেবেন আরকি।
একদিকে বিরাট প্রতিভাবান হয়ে সম্মানিত সেলিব্রিটি হলেই যে অন্যদিকে মেন্টালি হ্যাভনট হওয়া যায়না এমন নয়। হিটলার তো একটা ভাল উদাহরণ। পরিচিতদের মধ্যে যেমন সুমন বা নচিকেতা। এর চেয়েও বড় ছিলেন সলিল চৌধুরী। গানের জগতে হিমালয় হলেও রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন মেন্টালি হ্যাভনট, মানে কমিউনিস্ট।
এখন ওনার শিল্পী পরিচয়টা বড় করে দেখা উচিত, নাকি কমিউনিস্ট পরিচয়? অবশ্যই ওনার গান শুনতে বা গাইতে গেলে কমিউনিস্ট কিনা জানার দরকার পড়েনা। কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবেনা যে তিনি যখন কমিউনিস্ট হয়েছিলেন তখন নিশ্চয় লোকে তাঁকে কমিউনিস্ট বলে চিনবে ভেবেই হয়েছিলেন। তাই তাঁর গানে সেকুলারিজমের আর কমিউনিজমের পরিমাণ প্রচুর। ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির গণনাট্য করতেন, গণসঙ্গীত লিখতেন, বিপ্লব শেখাতেন। নেতাজীকে যারা কুকুর বলত তাদের দলেরই সদস্য ছিলেন আরকি।
স্বাভাবিকভাবেই দেশভাগ হয়ে পাকিস্তান গড়ার প্রস্তাবের সবচেয়ে জোরদার সমর্থকের দলটাও ঐ ওনার দলই ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের গঠন এবং তার পরিণতিতে লাশের পাহাড় দেখে তিনি সুন্দর এক গণসঙ্গীতের কবিতা লিখে পুরো দায়টা কংগ্রেসের আর হিন্দুদের উপরে চাপিয়ে দিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশিত পত্রিকা “সংবাদ” এর ১৯৪৮ সালে শারদীয় প্রকাশনে কবিতাটি ছাপা হয়েছিল।
আসুন! আসুন! কার তাজা মাংস চাই
হাতে যেন থাকে খাঁটি খদ্দরের থলি
ভীষণ সস্তা মাংস নিয়ে যান ভাই
অহিংসার হাড়িকাঠে দিয়েছি এ বলি।
সর্বভাষী মাংস পাবে সব দেশী পাঁঠা
পাঞ্জাব সিন্ধু কিম্বা গুজরাট মারাঠা
তিনরঙ্গা খাঁড়া দিয়ে সব মাংস কাটা।
যৌবনবিলাসী এসো নেবে তো এখন
গর্ভবতী রমনীর রক্তমাখা ভ্রুণ
বাত্সল্য রসিক যদি থাক কোনো জন
কচি শিশু মাংস পাবে সদ্য করা খুন।
ভয় নেই আমাদের মাংস নিরামিষ
সর্বত্রই ব্রাঞ্চ আছে, দিল্লি হেড অফিস।
.
কেউ যদি ভেবে থাকেন জিন্নার কিম্বা ইসলামের ব্যাপারে উনি এরকম প্রতিভার বিকাশ ঘটাবেন, তবে কিন্তু সমস্যা। এরপর পাকিস্তানের দ্বারা তিনবার ভারত আক্রমণ, চীনের থেকে দুবার আক্রমণ, হজরতবাল দাঙ্গা, একাত্তরের গণহত্যা, কাশ্মীরের পন্ডিত ইত্যাদি বিষয়ে ওনার কাব্যপ্রতিভা, সঙ্গীতপ্রতিভা, গণনাট্যপ্রতিভা কোনোভাবে বিকশিত হয়েছিল কিনা তা ওনার ভক্তগণই ভাল বলতে পারবেন। সম্ভবত সেরকম কিছু হয়নি, হয়ে থাকলে তসলিমার মতো উনিও বাংলার বাইরে থাকতেন।
Leave a Reply