লিখেছেন : কবিতা রায়
রাসবিহারী বসু। ইংরেজের শত্রুর তালিকায় এক নম্বরে নাম ছিল। আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা। জাপান সাম্রাজ্যের সেকেন্ড অর্ডার অফ দ্য রাইজিং সান, অর্থাৎ উদয়ভানূর দ্বিতীয় সেবক। ক্রাউন প্রিন্সের সমতূল্য ক্ষমতা। যে পদ জাপানের ইতিহাসে কখনো রাজবংশের বাইরে কেউ পায়নি।
ভারতে রাসবিহারী বসুর আত্মীয় বলতে একজনই ছিলেন, বোন সুশীলা। ভারত সরকারের দেওয়া মাসিক ২০ টাকার পেনশন সম্বল করে তিনি কাশীতে এক টালির ঘরে জীবন কাটিয়েছেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। ইংরেজের শত্রু তালিকার দ্বিতীয় নাম। আজাদ হিন্দ সরকারের রাষ্ট্রনায়ক। পরিণতি কী হল কেউ জানতেই পারলনা। নেহেরু জীবিত থাকাকালে দিল্লিতে নেতাজীর একটা মূর্তি অবধি বসাতে দেওয়া হয়নি।
মহম্মদ জামান কিয়ানী। আজাদ হিন্দ সরকারের উপপ্রধান। নেতাজী নিরুদ্দেশ হবার পর দ্বিতীয় রাষ্ট্রপ্রধান। নেহেরুর অসভ্যতার জ্বালায় পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য হন। সাথে নিয়ে গেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রায় সমস্ত মুসলিম সিপাহীকে।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। স্বাধীন ভারতের প্রথম রেলমন্ত্রী, দ্বিতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। রহস্যজনক মৃত্যুর পর পরিবার থেকে মাথা ঠুকে মরলেও না পোস্টমর্টেম, না তদন্ত। প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে ৫০০০ টাকা ঋণ নিয়ে একটি ফিয়াট ১৯৬৪ মডেলের গাড়ি কিনেছিলেন।
উপরে যাদের নাম বলা হল তাঁরা সবাই ছিলেন রাষ্ট্রনায়ক। এবার আসছে পাকিস্তানের পাবনা জেলা থেকে রিফিউজি হয়ে পালিয়ে যাওয়া অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী। ১৯৬৯ সালে মারা যাবার আগে উনি দেওঘরে তিনটি বউ, দুটি পুত্র ও একটি কন্যাসহ বাস করতেন। পরিবারের এই সাতজন সদস্যের জন্য সাতটি বিদেশী গাড়ি ওনার ছিল। গাড়িগুলো এখনও দেওঘরে সাজিয়ে রাখা আছে, গেলেই দেখা যায়।
১৯৬৯ সালে অনুকূলচন্দ্র মারা যাবার পরের আরো বহু গরীবের কথা আর বলার প্রয়োজন নেই। তবে আজাদ হিন্দ সরকার থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে যতগুলি প্রধানমন্ত্রী এসেছেন তাঁদের প্রত্যেকেরই পরিবারের সম্পত্তি এই উদবাস্তু অনুকূলের চেয়ে কম।
Leave a Reply