লিখেছেন : আকাশ মালিক
কিছুদিন যাবত দেখছি, এ রকম কিছু ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারছেনা তাই নিজের বাসা বাড়িটাকেই মসজিদ বানিয়ে ফেলেছে। তারপর এদের উপর মূর্খ অসভ্য ধর্মান্ধ অশিক্ষিত বর্বর আরো কত কিছু গালি বর্ষণ করে বলা হলো, এদের কারণে দেশটা রসাতলে যাবে, তারা মরবে সকলকেও মারবে। আর তো কোনো উপায় নাই, এদের নিয়ে কী আর করার আছে কী করা যায়? উপায় বের করে কেউ কেউ পরামর্শও দিয়েছেন যে, মসজিদ খুলে দেয়া হউক, সকল নামাজীদের আসতে দেয়া হউক তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হউক যতদিন পর্যন্ত দেশ করোনাভাইরাসমুক্ত না হচ্ছে। আর কেউ বললেন, একমাত্র সমাধান পাছায় শক্ত ডান্ডা বাড়ি, এ ছাড়া এরা মানুষ হবেনা। এ দিকে পত্রিকায় দেখলাম একজন সরকারি লোক খুব আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘ সরকার লিফলেট ছাপালো, আইন জারি করলো, মাইকিং করলো, রাস্তায় পুলিশ নামালো আর কী বা করার আছে এই মানুষগুলোকে বুঝানোর জন্যে, এদের মাঝে যদি সচেতনতা না থাকে তাহলে সরকারের তো কিছু করার নাই’। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, সত্যিই কি কিছু করার নাই? তাহলে ক্ষমতায় আছেন কেন?
আমার মতের সাথে অনেকেই একমত হবেন না, কারণ অনেকে ইতিমধ্যে যতো দোষের দোষী নন্দ ঘোষকে পেয়েই গেছেন। পাবলিক জনতা। আমি পাবলিককে দোষী না, কোনোদিনই না। সরকার যদি আইন পাশ করে তার কিছু নাগরিককে আইন মানাতে পারেনা, এ ব্যর্থতা কার? আর শুধু বিশেষ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে সরকারের আইন ব্যর্থ হয় কেন? মুসলমান কি শুধু বাংলাদেশেই থাকে আর কোথাও নাই? সারা বিশ্বের মুসলমান নিজ নিজ দেশের সরকারের আইন নিঃশব্দে মেনে নিল কেউ টু শব্দটি করলোনা, বাংলাদেশের কিছু মুসলমান তার সরকারকে বুড়ি আঙ্গুল দেখায় কী ভাবে? সারা দুনিয়ার সকল দেশের সরকার তার মুসলমান নাগরিককে আইন মানাতে পারে বাংলাদেশের সরকার কেন পারেনা? যে বাঙ্গালি মুসলমানরা বাংলাদেশে ছাদের উপর জামাতে নামাজ পড়লো তারা কি ইংল্যান্ডেও পড়ার সাহস করবে? কারণটা কী?
আওয়ামী লীগ সরকার বিগত বারো বছরে যে কাজটা অত্যন্ত সুকারু রূপে, সাক্সেসফুলি করতে পেরেছে তা হলো এদেশের মানুষের মগজ ধোলাইয়ের কাজ। আগে মোল্লারা ওয়াজ মাহফিলে ওয়াজ করতো ভাল কাজের আদেশ আর মন্দ কাজের নিষেধ শুনাতে। এখন মোল্লারা ওয়াজের মঞ্চে ঘাটু গান গায়, কিশোর যুবকদের বিকৃত যৌনতা শেখায়, এটা এই সরকারের অবদান। খোঁজ নিলে দেখা যাবে বিগত বারো বছর যাবত যতো ওয়াজ মাহফিল হয়েছে তার বেশিরভাগ ওয়াজ মাহফিলের উদ্যোক্তা আয়োজক শ্রোতা দর্শক আওয়ামী লীগের লোক। এতো মুসল্লি নামাজী এতো ওয়াজিন এতো হিজাব নিকাব গোল গোল টুপি, এতো ধর্ষকামী বদমাইশ, এতো লুটেরা ডাকাত সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রকে খতনা করায়ে মুসলমান বানিয়ে, ইসলামকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে। তাই আজ ধর্মব্যবসায়ী সরকার ঘোষণা করতে পারেনা ‘সমবেতভাবে উপাসনা নিষিদ্ধ মসজিদে হউক কিংবা অন্য যে কোনো জায়গায় ‘। সরকার ‘ছুটি’ শব্দ ব্যবহার করে, ‘লকডাউন’ ‘কার্ফিউ’ শব্দ ব্যবহার করেনা। এর মাঝে সুক্ষ্ণ একটা ভন্ডামী আছে। বিল্ডিঙয়ের ছাদ আর গাড়ির গ্যারেজ শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা দুনিয়ায়ই আছে। কেউ এটাকে জামাতে নামাজ পড়ার জায়গা বানায় নাই।
সরকার যতই পাবলিককে লোক দেখানো দোষারুপ করুক না কেন, ভেতরে ভেতরে জানে এই ছাদের উপর নামাজীদেরই তাদের বেশি প্রয়োজন, এরা তাদেরই লোক। এদেরকে খুশি করার জন্যেই তড়িঘড়ি করে সরকার হাসি ভরা মুখে সিনেমা হল আর বৈশাখী মেলা বন্ধ ঘোষণা করতে পারে কিন্তু এখনও মসজিদ বন্ধ বলতে পারেনা অথচ সারা পৃথিবী পেরেছে। তাহলে পাবলিককে দোষ দেই কীভাবে? ব্যর্থতার দায় এড়াতে সরকার সব সময়ই কোনো না কোনো অজুহাতে পাবলিকের ঘাড়ে দোষ চাপাবে। দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে অসচেতন পাবলিককে সুষ্ট সভ্য পন্থায় আইন মানতে বাধ্য করানো সরকারের দায়ীত্ব। কিছু মানুষ সারা দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়াবে আর সরকার জনতার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের দায় এড়িয়ে যাবে তা হয়না।
Leave a Reply