লিখেছেন : আবদুল্লাহ আল মাসুদ
রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই হলো!
এনআরসি (The National Register of Citizens) নিয়ে উত্তপ্ত ভারত। চলছে প্রতিবাদ। যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা নাগরিকদের অধিকার। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, প্রতিবাদকারীদের পোশাক-আশাক। প্রতিবাদীরা চাইছে ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র যেন অক্ষুন্ন থাকে, আমিও তাই চাই; কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষের প্রতিবাদীদের গায়ে ধর্মীয় পোশাক কেন? এটি কি ধর্মনিরপেক্ষতার আন্দোলন নাকি ইসলামিক পোশাকের মহড়া?
ইসলামিক পোশাকের এই মহড়া চলাকালীন আমরা দেখতে পাচ্ছি, হঠাৎ করেই নিজেদের সেকুলার দাবিদার মুসলিমদের মধ্যে আওরঙ্গজেব-প্রীতি, গজনবী-প্রীতি, মক্কা-মদিনা প্রীতি বেড়ে গিয়েছে। হঠাৎ করেই আওরঙ্গজেবের সম্পর্কে মানবতাপুর্ণ গাঁজাখুরি গল্প প্রচার শুরু হয়ে গেছে, ঠিক যেমন মোহাম্মদের সম্পর্কে বুড়ির পথে কাঁটা দেয়ার গাঁজাখুরি গল্প মার্কেটে চালু করা হয়েছিল।
আপনি গেরুয়া সন্ত্রাসের সমালোচনা করুন কোন সমস্যা নেই – বরং করাই উচিত – কিন্তু গেরুয়া সন্ত্রাসের সমালোচনা আপনাকে কী করে জঙ্গি আওরঙ্গজেব ও জঙ্গি মাহমুদের প্রতি প্রীতি বাড়িয়ে দেয়? যদি আওরঙ্গজেব এবং মাহমুদ অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হয় তবে তো ওসামা বিন লাদেনও অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক!
হিজাব পরে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে স্লোগান দেয়া আর বন্দুক হাতে নিয়ে শান্তির পক্ষে স্লোগান দেয়া কি সমান কথা নয়? হিজাব পরে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা যদি উচিত কাজ হয় তবে গেরুয়া কাপড় পরে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে অসুবিধা কি? তাছাড়া ঐ হিজাবিদের রাস্তায় পাঠিয়েছে কারা? যারা পাঠিয়েছে তারা কি আদৌ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে? ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদ ওয়াইসির দলের শীর্ষ নেতা তো বলেই ফেলেছে, ‘এখন তো কেবল আমাদের বাঘিনীদের (বোরকাওয়ালীদের) পাঠিয়েছি, তাতেই তোমাদের ঘাম ছুটে গেছে! আমরাও যদি আসতাম তবে কি হতো!‘
এই বোরকা পরিহিত মেয়েরা যদি নিজের গরজে প্রতিবাদ করত তবে তাদের গায়ে পুরুষের দাসত্বের পোশাক থাকত না, থাকত সাধারণ পোশাক। তাদের পোশাকই বলে দিচ্ছে, তাঁরা তাদের পুরুষ কর্তৃক প্রেরিত।
নাগরিকত্ব সংশোধনীর আইন ও ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বিষয়ে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের বেশ কিছু সংস্থা বিবৃতি দিয়েছে, তাদের সেসব বিবৃতি গুরুত্বের দাবি রাখে। কিন্তু পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও আরব্য সংস্থাসমূহ হঠাৎ করে এত তৎপর হলো কেন? পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও আরব্য সংস্থাসমূহ কি ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া সহ তাদের তথাকথিত মুসলিম বিশ্বে কি বিন্দুমাত্র ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে? আমি কি ধরে নেব, ইসলামের বিদেশি প্রভুরা পুশ আপ করেছে ভারতের মুসলিম পুরুষদের, আর মুসলিম পুরুষেরা ইসলামিক পোশাক প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নামিয়েছে তাদের মেয়েদের?
এনআরসি বিরোধী এই বিক্ষোভ কি সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সওয়াল নাকি গাজওয়ায়ে হিন্দের অশনিসংকেত? এই ধর্মনিরপেক্ষতার কথিত ধ্বজাধারীরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে আবেগে আপ্লুত হয়ে খুব সরব থাকে, কিন্তু তাঁরা কি কোনোদিন পাকিস্তানের মাশাল খান হত্যাকান্ডের নিন্দা করেছে? জুনায়েদ হাফিজের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রীয় কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে কথা বলেছে? তাঁরা কোনোদিন কি বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ব্লগার খুনের নিন্দা করেছে? করেনি। কোনোদিন করবেও না। বামপন্থীরা কেবলমাত্র ঢাল, প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে গাজওয়ায়ে হিন্দ টীম।
বোরকা-প্রদর্শন, গাজওয়ায়ে হিন্দ ফৌজ প্রদর্শন এবং নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা একসাথেই হয়ে গেল!
Leave a Reply